মাত্র সাড়ে ১১ হাজার বর্গকিলোমিটারের ছোট্ট দেশ কাতার। জনসংখ্যা ৩০ লাখেরও কম। এমন ছোট্ট একটা জনপদ পুরো বিশ্বকে কীভাবে ধারণ করবে, খুব বড় হয়ে ওঠে এ প্রশ্নটিই। এমনি অসংখ্য প্রশ্ন এসেছে ঘুরে-ফিরে। কিন্তু প্রযুক্তির ভেলকি দেখিয়ে ইতিহাসের সবচেয়ে জমকালো বিশ্বকাপ উপহার দিতে যাচ্ছে এই ছোট্ট দেশটি। এই বিশ্বকাপ আয়োজন উপপক্ষে নতুন সাতটি স্টেডিয়াম করেছে আয়োজকরা। এর আগে দেশটিতে ছিল মাত্র একটি স্টেডিয়াম। এখানেও মুিন্সয়ানা দেখিয়েছে তারা। পর্যটকদের জন্য খুবই সহজ করা হয়েছে এবারের আয়োজন। বিশ্বকাপের আটটি স্টেডিয়ামই রাজধানী দোহার ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত। যার অর্থ বিশ্বকাপের ম্যাচ উপভোগ করতে সেই অর্থে কোনো সময়ই নষ্ট হবে না ভক্তদের। অথচ অন্য বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতাগুলো কী বলে? এক শহর থেকে আরেক শহরে যেতে সুদীর্ঘ ট্রেন ভ্রমণ তো বটেই, এক ভেন্যু থেকে আরেক ভেন্যুতে যেতে বিমান ভ্রমণও করতে হয়েছে ফুটবল-পিয়াসীদের। সব মিলিয়ে এবারের বিশ্বকাপ মানে কম দূরত্ব এবং কম সময়। আর এ কারণে অতীতের যেকোনো বিশ্বকাপের চেয়ে এবারে আসছেন বেশি ফুটবলপ্রেমী। অন্তত টিকেট বিক্রি ইঙ্গিত দিচ্ছে তেমনটাই।
ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল আসর এবার। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে খরচ ২২০ বিলিয়ন ডলার। সর্বশেষ ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপের চেয়ে ২০ গুণ বেশি ব্যয়বহুল এবারের বিশ্বকাপ। এর আগ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি খরুচে বিশ্বকাপ ধরা হয় ২০১৪ সালের ব্রাজিল আসরকে। ওই বিশ্বকাপে খরচ হয়েছিল ১৫ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ব্রাজিল বিশ্বকাপের চেয়ে ১৫/১৬ গুণ বেশি খরচ হচ্ছে এবারের বিশ্বকাপে।এই খরচের একটা বড় কারণ বৈরী আবহাওয়া ও কন্ডিশন। গ্যালারি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। মাঠেও উচ্চপ্রযুক্তি ব্যবহার করে রাখা হয়েছে কৃত্রিমভাবে তাপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা। প্রযুক্তিতে অতীতকে টেক্কা দিচ্ছে এবারের বিশ্বকাপ। এই প্রথমবারের মতো ব্যবহৃত হচ্ছে টেকনো বল। খেলোয়াড়রা খেলবেন অ্যাডিডাসের তৈরি বল ‘আল রিহলা’ দিয়ে। বাংলা অর্থ ‘ভ্রমণ’। বলের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য এর ভেতরে ৫০০ হার্জ আইএমইউ সেন্সর প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে। আর এতে করে নিখুঁতভাবে সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর)।
বিশ্বকাপে এবারই প্রথম ব্যবহৃত হচ্ছে অফসাইড টেকনোলজি। নতুন টেকনোলজিতে বলের মধ্যে সেন্সর ব্যবহার হবে এবং খেলোয়াড়দের মুভমেন্ট অনুসরণ করার জন্য লিম্ব-ট্র্যাকিং ক্যামেরা পদ্ধতি ব্যবহার হবে। রেফারির সিদ্ধান্ত ভালোভাবে বোঝার জন্য স্টেডিয়ামের জায়ান্ট স্ক্রিনে থ্রিডি ইমেজের মাধ্যমে ডাটা ব্যবহার করা হবে। কোনো খেলোয়াড় অফসাইড হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিডিও ম্যাচ অফিশিয়ালদের কাছে অফসাইড সংকেত চলে যাবে। গত বছর ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ এবং ফিফা আরব কাপে সেমি-অটো অফসাইড প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে বিশ্বকাপ ফুটবলে এই প্রথম।ফুটবলারদের জন্য তৈরি করা হয়েছে বিশেষ ডাটা
অ্যাপ। ৩২টি দলের প্রতিটি ফুটবলার ম্যাচের পর নিজের খেলাসম্পর্কিত তথ্যগুলো দেখতে পারবেন। ডাটার মধ্যে থাকবে ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে তিনি কেমন খেলেছেন, বল পায়ে কেমন ছিলেন, কতটুকু প্রচেষ্টা ছিল ইত্যাদি।
মাঠের লড়াইয়ে আরব-বিশ্বের দলগুলো কতটা কী করতে পারবে সেটা অন্য প্রসঙ্গ তবে আয়োজনে যে মরুর বিশ্বকাপ চ্যািম্পয়ন হতে যাচ্ছে তা বলাই বাহুল্য।
নবচেতনা /এমএআর