রূপসায় নৈহাটি ইউনিয়নে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন সড়কের সিগমা সী-ফুডের পাশ ঘেঁষে মদনার খালের পাশ্ববর্তী বাগমারা চর রূপসাস্ত দক্ষিণ পাড়া শাহজাহান হাজির ঘের পর্যন্ত ১৪ ফুট প্রশস্ত ও প্রায় ৯ শত ফুট দৈর্ঘ্যের রাস্তাটি সংস্কারের অভাবে সীমাহীন দুর্ভোগে নিমজ্জিত এলাকাবাসী। প্রায় ৫ হাজার লোক বসবাস করে। বর্ষা মৌসুম এবং জোয়ারের পানিতে বছরের অধিক সময় গৃহবন্দী থাকতে হয় শত শত পরিবারের শিশু, বয়স্ক নারী-পুরুষসহ অসুস্থ মানষদের। বর্তমান যুগে রাস্তা সংস্কারের অভাবে এরকম দুর্ভোগ পোহাতে হয় যা অকল্পনীয়। ভুক্তভোগীদের দাবি জনপ্রতিনিধিরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের আশ্বস্ত করলেও রাস্তা সংস্কারে নেননি কোন পদক্ষেপ। সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের একাধিক ব্যক্তির কাছে রাস্তা সংস্কারের দাবিতে গিয়ে ফলাফল না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন তারা। এলাকায় বসবাসকারী স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাগামী ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা আছে প্রায় ৫ শতাধিক। চলাচলের রাস্তা না থাকায় এ সকল ছাত্র-ছাত্রীদের নাকাল অবস্থায় পড়তে হয়। পানিতে জামা-কাপড়,বই-খাতা ভেজা অবস্থায় স্কুল কলেজে যেতে হয়।মাঝে মাঝে সাঁতরিয়ে চলাচল করতে হয়। শিশুদের পানিতে ডুবে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। গর্ভবতী মহিলা ও অসুস্থদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে অনেক বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। মৃত ব্যক্তির সৎকার করতে গিয়ে ঘাম ঝরাতে হয় এ এলাকার অধিবাসীদের। ঐ এলাকার জনগণের জীবনযাত্রার মান অনুন্নত হওয়ায় অসংখ্য কাঁচা, সেমি পাকা টয়লেট বিদ্যমান রয়েছে। সেগুলো পানিতে তলিয়ে দুর্গন্ধ ও জীবাণু প্রবাহিত হয়ে পেটেরপীড়া ডায়রিয়া, চুলকানি- খুজলি পাঁচড়াসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত থাকে। ভুক্তভোগী মৃত হানিফ হাওলাদারের ছেলে মো.খোকন হাওলাদার বলেন- রাস্তাটির এমন দুরবস্থা থাকায় কেউ মারা গেলে বা অসুস্থ হলে পানিতে কলাগাছের ভেলায় করে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে হয়। আক্ষেপ করে বাইতুর মামুর জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা আরিফুল ইসলাম বলেন- রাস্তাটির সংস্কারের অভাবে সবসময় পানিতে তলিয়ে থাকে ও কাঁদা হয়ে থাকায় মুসল্লিরা নামাজ পড়তে মসজিদে যেতে পারে না। অনেক সময় ইমাম হয়ে আমি একাই নামাজ আদায় করি। পাশাপাশি স্কুল- মাদ্রাসার ছেলেমেয়েরা বইয়ের ব্যাগ নিয়ে স্কুল ড্রেস পড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রওনা হলে মাঝে মাঝে আছাড় খেয়ে পড়ে যায়। তখন তারা ভেজা অবস্থায় স্কুলে যেতে পারে না। খুলনা পাইনিয়ার কলেজের ছাত্রী তামান্না বলেন- এই পথ দিয়ে যাওয়া আসায় শুধু আমার না, সবারই অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। এখানে কেউ অসুস্থ হলে বা গর্ভবতী নারীদের নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যেতে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অনেক সময় আমাদের ভেজা জামাকাপড় ও স্যান্ডেল নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে হয়। আমরা দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চাই। তথ্য অনুসন্ধানকালে সরেজমিনে নার্সারিতে পড়ুয়া শিশু ছাত্র আব্দুল্লাহ কাছে এসে ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বলে এই রাস্তা দিয়ে যেতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। আমাদের বই খাতা ভিঁজে যায়। আমরা যেন স্কুলে যেতে পারি। সেজন্য এই রাস্তাটি ভালো করে দেবেন। স্থানীয় দন্ত চিকিৎসক ইমাম হোসেন বলেন- এই রাস্তাটা নিয়ে আমরা যারা এই এলাকায় বসবাস করছি তারা খুবই দূর্ভোগে ও কষ্টের মধ্যে আছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ইউপি সদস্য (মেম্বার), সংরক্ষিত মহিলা সদস্য (মহিলা মেম্বার) উনারা নির্বাচনের সময় এই এলাকায় এসে রাস্তার দূরাবস্থা দেখে আমাদেরকে অনেক আশ্বস্ত করেছিলেন। এখন তারা কোন খোঁজ খবর নেন না। আমাদেরকে ন্যূনতম মানুষ মনে করেন না। এ রাস্তার ব্যাপারে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও আমাদের দূরাবস্থা নিরোশনে তারা কোন পদক্ষেপ নেননি। রাস্তা সম্পর্কে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো.ইলিয়াছ শেখের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন- আমার হাতেই প্রথম এই রাস্তাটি তৈরি হয়েছিল। একজন ইউপি সদস্য পরিষদ থেকে যে টাকা বরাদ্দ পায় তা দিয়ে এই রাস্তা সংস্কারের কাজ করা সম্ভব না। রাস্তাটি মেরামত করতে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লক্ষ টাকা খরচ হবে। তাই উপজেলা থেকে ইঞ্জিনিয়ার এনে মাপঝোপ কমপ্লিট করে স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদীর দপ্তরে পাঠিয়েছি। আশা করছি অতি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।