গঠনতন্ত্রের আলোকে পার্টির কোনো সিদ্ধান্ত যাতে গ্রহণ করতে না পারে এবং কোনো কার্যক্রম চালাতে না পারে সেই মর্মে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার কবলে পরেছেন দলটির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের।
সোমবার (৩১ অক্টোবর) ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ (১ম আদালত) এক আদেশে জিএম কাদেরের দলীয় কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। যুগ্ম জেলা জজ মাসুদুল হক এই আদেশ দেন।
আদালতের নিষেধাজ্ঞার একটি কপি মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে জমা দিয়েছেন। যে কারনেই জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা, চিফ হুইপ পরিবর্তনের কোনো সিদ্ধান্ত নেননি স্পিকার।
বিষয়টি মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় পার্টি সংসদে যোগ না দেওয়ার ঘোষণা দেয়। তবে স্পীকারের আশ্বাসে শেষ পর্যন্ত অধিবেশনে অংশ নেয়। চিফ হুইপ মশিউর রহমান অধিবেশনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তার আসনে উপস্থিত ছিলেন। বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের মঙ্গলবারও অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ৪ অক্টোবর জাপা থেকে বহিষ্কৃত নেতা, দলটির সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধা জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার আলোকে আদালত সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
আদালতের আদেশে বলা হয়, ১ নম্বর প্রতিপক্ষ (অর্থাৎ জিএম কাদের) ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বরের গঠনতন্ত্রের আলোকে পার্টির কোনো সিদ্ধান্ত যাতে গ্রহণ করতে না পারে এবং কোনো কার্যক্রম চালাতে না পারে সেই মর্মে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেওয়া হলো।
অপরদিকে, বিরোধীদলীয় নেতা ও চিফ হুইপ পরিবর্তন নিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘স্পিকার সময় চেয়েছেন। দেখা যাক কী হয়। এরপর আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’
আর স্পিকারের দফতর থেকে জানানো হয়েছে, বিরোধীদলীয় নেতা ও চিফ হুইপ পরিবতর্নের বিষয়টি নিয়ে নিয়ম-কানুন (রলস অব প্রসিডিউর) খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ মসিউর রহমান রাঙ্গাঁও একটি চিঠি দিয়েছেন। সবকিছু দেখে যাচাই-বাছাই করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে বহিষ্কৃত নেতা সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা বুধবার (২ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘জি এম কাদের অগণতান্ত্রিক পন্থায় দল পরিচালনা করছেন। জাপার চেয়ারম্যান থাকার অধিকার তার নেই। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বেগম রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির কর্ণধার।’
তিনি বলেন, ‘জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বরের পর থেকে যেভাবে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন, তা অবৈধ। তিনি একজন আইন প্রণেতা হয়েও আদালতের প্রতি যে অসম্মান দেখাচ্ছেন, তা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামীল।’
মৃধা বলেন, ‘গঠনতন্ত্রের ২০(১) ক ধারা ব্যবহার করে দলটির মধ্যে দাস প্রথা চালু করেছেন জি এম কাদের। একটি গণতান্ত্রিক দেশে কোনো রাজনৈতিক দলে দাস প্রথা চলতে পারে না।’
‘জাতীয় পার্টি তো সকালে এক রঙ, বিকেলে আরেক রঙ এবং রাতে অন্য রঙ ধারণ করে। আপনারা কোন রঙ ধারণ করবেন?’- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে জিয়াউল হক মৃধা বলেন, ‘অচিরেই বেগম রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টিতে নতুন রঙ নিয়ে রাজনীতি শুরু করবেন।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির (জাপা) রওশনপন্থী নেতা এম এ গোফরান, এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী মামুন, সাবেক এমপি নূরুল ইসলাম মিলন, ইকবাল হোসেন রাজু, জাফর ইকবাল সিদ্দিকী প্রমুখ।
নবচেতনা / আতিক