২৯ দিন পর উদ্ধার হওয়া খুলনার মহেশ্বরপাশা এলাকার রহিমা বেগমকে নিয়ে খুলনা ছেড়েছেন তার দুই মেয়ে মরিয়ম মান্নান ও আদুরী আক্তার। রবিবার রাত আড়াইটার দিকে তারা ঢাকার ভাটারায় মরিয়ম মান্নানের বাড়িতে পৌঁছান। গতকাল মাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মরিয়ম। তিনি বলেন, আপাতত খুলনা মায়ের জন্য নিরাপদ না হওয়ায় তাকে ঢাকায় নিয়ে এসেছি। এখানে তার চিকিৎসা করানো হবে। মা কোনো ভুল করলে সংশোধন করা হবে। এদিকে রহিমা বেগমের নিখোঁজ হওয়াকে স্বেচ্ছায় আত্মগোপন দাবি করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় ভুক্তভোগীরা। অপহরণের মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারদের মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি অপহরণ নাটক সাজানোর জন্য মরিয়ম মান্নানকে দায়ী করে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারদের দ্রুত মুক্তির বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে আজ খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছে। অপরদিকে মরিয়ম মান্নানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রল করা হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে পুলিশ ও মিডিয়ার সামনে তার নানান অঙ্গভঙ্গি নকল করে ভিডিও প্রচার ও কটূক্তি করা হচ্ছে।
খুলনার সরকারি এমএম সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী মোহনা মুক্তা তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘এর আগেও পাশর্বর্তী এক পরিবারকে ফাঁসাতে ধর্ষণ চেষ্টার মিথ্যা মামলা দিয়ে ক্ষতিপূরণ আদায় করেছিল রহিমা বেগম। এবার তাই রহিমা বেগমের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাকে নাটক বলে ধরে নিয়েছিল সবাই।’ ফেসবুকে রহিমা বেগমের মেয়ে মরিয়ম মান্নানের আপত্তিকর বেশকিছু ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। এসব নিয়ে একই নেতিবাচক স্ট্যাটাস দিয়েছেন আরও অনেকে। তবে পুলিশ এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। রহিমা বেগমের নিখোঁজ হওয়ার পর মরিয়ম মান্নান তার মাকে ফিরে পেতে নানা ধরনের আবেগময় স্ট্যাটাস ও বিভিন্ন কর্মসূচিতে সোচ্চার ছিলেন। আত্মগোপনের ঘটনা অপহরণ দাবি করার কারণে এখন মরিয়ম মান্নানকে রোষানলে পড়তে হয়েছে।
জানা যায়, ২৭ আগস্ট রাত ১০টার দিকে খুলনা মহেশ্বরপাশার নিজ বাড়ির দোতলা থেকে নিচে পানি আনতে গিয়ে নিখোঁজ হন রহিমা বেগম। এ ঘটনায় দৌলতপুর থানায় মামলার পর পুলিশ ও র্যাব ছয়জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন- রহিমা বেগমের প্রতিবেশী কুয়েটের সহকারী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া, একই এলাকার মহিউদ্দিন, পলাশ, জুয়েল, হেলাল শরীফ ও রহিমার দ্বিতীয় স্বামী বিল্লাল হাওলাদার। শনিবার রাতে ফরিদপুরের বোয়ালমারির সৈয়দপুরে রহিমা বেগমের খুলনার বাড়ির এক সময়কার ভাড়াটিয়া আব্দুল কুদ্দুসের বাড়ি থেকে রহিমা বেগমকে উদ্ধার করা হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি ওই বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। তবে উদ্ধারের পর রহিমা দাবি করেন, ৪/৫ জন দুর্বৃত্ত মুখে কাপড় বেঁধে তাকে নিয়ে গিয়ে অজ্ঞাতস্থানে ছেড়ে দেয়। পরে তিনি গোপালগঞ্জ মুকছেদপুর হয়ে পূর্ব পরিচিত ভাড়াটিয়া আব্দুল কুদ্দুসের বাড়িতে যান। কাছে কোনো মোবাইল নম্বর না থাকায় কারোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি তিনি।