জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ থেকে নিজের অব্যাহতির আদেশে অখুশি নন বলে জানিয়েছেন সংসদের বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি বলেন, আমি আমার অব্যাহতির আদেশে অখুশি নই। তবে আমি আমার বহিষ্কার (অব্যাহতি) আদেশ প্রত্যাহার চাই। চেয়ারম্যানের সঙ্গে যুদ্ধ করে দলে থাকা যায় না।
বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) মসিউর রহমান রাঙ্গাকে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেন দলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের।
দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের রংপুরে কীভাবে রাজনীতি করেন তা দেখে নেওয়ার হুমকি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাঙ্গা বলেন, গতকাল (বুধবার) অব্যাহতির আদেশ পাওয়ার পর আমি একটু রাগান্বিত ছিলাম। এটা অস্বীকার করব না। আমি চেয়ারম্যানকে যে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম সেটা তুলে নিয়েছি। রংপুরেও আর কোনো ঝামেলা হবে না। সেটা গতকাল রাতেই বলে দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমি কোনো অন্যায় করিনি। এটা বলার জন্য আজ এই সংবাদ সম্মেলনে ডেকেছি। আমি আমার বহিষ্কার আদেশে অখুশি নই। আমি চাই, দলটা যেন সুন্দরভাবে চলে, না ভেঙে যায়। দলটাকে ছোট করা ঠিক হবে না। প্রয়োজনে আমি নিজেই দলে থাকব না।
কেন আপনাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে— জানতে চাইলে রাঙ্গা বলেন, রওশন এরশাদকে সরিয়ে জিএম কাদেরকে সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা করার বিষয়ে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে তার প্রক্রিয়া সঠিক ছিল না। এটা আমি একটা টেলিভিশনকে বলেছিলাম, এজন্য আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে মনে করছি।
আরও পড়ুন : রাঙ্গাকে জাপা থেকে অব্যাহতি
চিঠি দেওয়ার প্রক্রিয়া সঠিক না থাকলে সেটা নিয়ে এতদিন পরে কেন কথা বলছেন— জানতে চাইলে বিরোধী দলীয় এ চিফ হুইপ বলেন, রওশন এরশাদকে সরিয়ে জিএম কাদেরকে বিরোধী দলীয় নেতা করার চিঠি দেওয়া পর তিনি (রওশন এরশাদ) আমাকে বলছেন— তুমি তো আমার সব সর্বনাশ করছ। তুমি তো সব চিঠিতে সই করেছ। তখন আমি উনাকে বলেছি, এটার সঙ্গে আমি নেই। প্রক্রিয়া যে সঠিক ছিল না, এটা আমি কোনো গণমাধ্যমে বলে দেব। এরপর আমি এ নিয়ে কথা বলেছি।
প্রক্রিয়া সঠিক না থাকলে কেন চিঠিতে স্বাক্ষর করেছিলেন— জানতে চাইলে রাঙ্গা বলেন, তখন স্বাক্ষর না করলে আমাকে বিরোধী দলীয় চিফ হুইফ থেকে সরিয়ে দেওয়া হুমকি দেওয়া হয়েছিল। একইসঙ্গে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন না দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
আগামীতে আপনি রওশন এরশাদের সঙ্গে থাকবেন কি না— জানতে চাইলে সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, সেটা এখনও ঠিক করিনি।
আগামীতে জাতীয় পার্টির রাজনীতি করতে না পারলে অন্য কোনো দলেও যাব না— উল্লেখ করে রাঙ্গা বলেন, আমি আজ এখানে পার্টির কোনো লোক নিয়ে আসিনি। পরিবহন সেক্টরের কিছু লোক এসেছে।
আগামীতে জাতীয় পার্টি রাজনৈতিক দল হিসেবে থাকবে না বলে মনে করছেন সদ্য অব্যাহতি পাওয়া দলটির এই প্রেসিডিয়াম সদস্য। তিনি বলেন, আগামীতে শুধু দুটি রাজনৈতিক দল থাকবে। কোন দুটি থাকবে সেটা আমি বলব না। তবে সেখানে আমরা (জাতীয় পার্টি) থাকব না।
জিএম কাদেরকে কিছু লোক ভুল বুঝিয়ে তাকে প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ থেকে অব্যাহতির আদেশ দিতে বাধ্য করা হয়েছে বলেও মনে করেন রাঙ্গা। তিনি বলেন, চেয়ারম্যানের সঙ্গে কিছু লোক আঠার মতো লেগে থাকে সারাক্ষণ। তারা উনাকে অনেক ভুল পরামর্শ দেন।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে রাঙ্গা বলেন, জাতীয় পার্টি গণতান্ত্রিক দল না। তবে এটা স্বৈরতান্ত্রিক দল, এটা আমি বলব না।
আপনি বলেছেন, জাতীয় পার্টি বিএনপির সঙ্গে যেতে চায়, এজন্য জিএম কাদের এসব করছেন— তাহলে কি জাতীয় পার্টি বিএনপির সঙ্গে জোট করছে? এমন প্রশ্নের জবাবে রাঙ্গা বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো জোট করে নির্বাচন করিনি। তাদের সঙ্গে আমাদের কিছু আসন ভাগাভাগি হয়েছে। এখন জাতীয় পার্টি কোনো জোটে যাবে নাকি এককভাবে নির্বাচন করবে সেটা দলের প্রেসিডিয়াম সভায় ঠিক করবে। রওশন এরশাদের সঙ্গে আলোচনা করে দলের চেয়ারম্যান ঠিক করবেন।