অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষকই বলে থাকেন আফগানদের বিপক্ষের ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছে বুদ্ধির খেলায়। আফগান অধিনায়ক মোহাম্মদ নবীও দাবি করেছেন, নতুন পিচে খেলায় হওয়ায় বোলিং নেয়াতে তাদের সুবিধা হয়েছে। কারণ, তার বোলাররা যেমন সুবিধা পেয়েছে, তেমন ব্যাটাররাও বুঝতে পেরেছে উইকেট আসলে কেমন আচরণ করেছে।
উইকেটের সেই আচরণ বুঝে বাংলাদেশি বোলারদের সহজেই তুলোধুনো করতে পেরেছে আফগানরা। বিপরীতে পিচের আচরণ বোঝার আগেই বাংলাদেশের সর্বনাশ হয়ে গেছে। স্লো, লো টানিং ও ট্রিকি উইকেটেও একজন স্পিনার কম খেলিয়ে বাংলাদেশ পেস বান্ধব একাদশ দিয়েছে। যাতে নেতিবাচক ফল মিলেছে মাঠে। মোস্তাফিজের ১৭ রানের ওভারের পরই সাইফউদ্দিন দিয়েছেন ২২ রান। যেখানে স্পিনার নাসুম আহমেদ থাকলে রান আরও কম হতে পারত বলেই মনে করেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা।
তাছাড়া টস জিতেও ফিল্ডিংয়ের বদলে বোলিং নেওয়াকে অনেক ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ সাকিব আল হাসানের দলের ভুল সিদ্ধান্ত বলেই মনে করছেন। ক্রিকেটবিষয়ক সাইটগুলোতে আসা ফিল্ড রিপোর্ট আর আবহাওয়ার কন্ডিশনও বলছিল, আগে বোলিং নেয়া দলই ওই মাঠে সুবিধা করবে। সব মিলিয়ে এখানেও বুদ্ধির খেলায় হেরেছে বাংলাদেশ।
আবার ওপেনার বদলালেও নাঈম শেখ বা এনামুল বিজয় কাউকে না কাউকে রাখতেই হবে। এখান থেকে যে থাকুক দু’ইজনের কারও খেলাই টি-টোয়েন্টি সুলভ নয়। এনামুল বিজয় দলে সুযোগ পেয়েছেন ওয়ানডে ফরম্যাটের ডিপিএলে ভালো খেলে আর নাঈম শেখের সবশেষ সেঞ্চুরিও ‘এ’ দলের ওয়ানডে ফরম্যাটের ম্যাচে।
শুরুতেই ডট বল খেলে চাপ নিলে একাদশে পরিবর্তন খুব একটা কাজে দেবে না। তাই যতো পারা যায় ডট বল খেলার হার কমাতে হবে। সাথে স্ট্রাইক রোটেড ও বাউন্ডারি ওভার বাউন্ডারি খেলার প্রবণতাও বাড়াতে হবে।
বিপরীতে পাওয়ার প্লে কাজে না লাগাতে পারলেও বাড়বে বিপদ। টি-টোয়েন্টি খেলা প্রায় সব দলের চেয়েই বাংলাদেশের পাওয়ার প্লেতে রান তোলার গতি মন্থর। আবার পাওয়ার প্লের ধীরগতির ব্যাটিংয়ের প্রভাব কাটিয়ে ওঠার মতো ব্যাটারও বাংলাদেশে নেই। মুশফিক কিংবা মাহমুদউল্লাহ ভারতের সূর্যকুমার যাদবের মতো একের পর এক ছক্কা হাঁকানোর সক্ষমতা রাখেন না পরের ওভারগুলোতে।
আবার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে সরিয়ে সাব্বির রহমানকে আনলেই যে কাজ হবে, সেটা বলাও মুশকিল। কারণ, সাব্বির সম্প্রতি কোন চোখ ধাঁধানো ইনিংস খেলতে পারেননি। বিকল্প অপশন নেই বলেই হয়তো তাকে দলে ডাকা।
অন্যদিকে বোলিং সাইডেও ঘাটতি পরিষ্কার মোস্তাফিজের বল এখন একেবারেই সাদামাটা, তাসকিনও নির্বিষ! পেসে এবার বাকি থাকলেন এবাদত। তবে অনেকটা স্পিন সহায়ক পিচে অপেক্ষাকৃত কম ভ্যারিয়েশনের বল নিয়ে এবাদত কতোটা কার্যকর হবেন সেই প্রশ্নও থেকে যায়।
ফলে স্পিনে সলিড বোলার হিসেবে নাসুমকে টানতে পারলে ঘাটতি খানিকটা পোষানো যেতে পারে। তবে নাসুমও নিজের কাজটা দলের এই পরিস্থিতিতে ঠিকঠাক করতে পারবেন কিনা, সেই প্রশ্নটাও মাথায় রাখতে হচ্ছে।
যদি সবমিলিয়ে বলা যায়, তবে সার্বিক বিবেচনায় দেখা যাবে সাকিবের ব্যাটিং-বোলিং লাইন পুরোপুরি অলরাউন্ডার নির্ভর। আফগানদের বিপক্ষে তিনি স্বীকৃত-অস্বীকৃত ৬ জন অলরাউন্ডার নিয়ে খেলেছেন। সেদিন তিনে নামা সাকিব থেকে নয় নম্বরে সাইফউদ্দিন, সবাই অলরাউন্ডার কেবল মুশফিক ছাড়া।
সলিড ব্যাটিং ও বোলিং ব্যাটারি কাজে না আসলে সাকিবের অলরাউন্ডাররা তাকে কতোদূর টেনে তুলবেন? কারণ এই অলরাউন্ডারদের কেউ যে এখনও হার্দিক পান্ডিয়ার মানে পৌঁছাতে পারেননি।
তাই একাদশ বদলেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বিপর্যয় এড়ানো যাবে কিনা, সেই প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে। যদিও বাংলাদেশ দলের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন গতকালের (বুধবার) প্রেস কনফারেন্সে অনেকটা পরিষ্কার করেই বলেছেন, শ্রীলঙ্কাকে তিনি গোনায় ধরছেন না। কথার লড়াই শ্রীলঙ্কাও বাংলাদেশকে গোনায় ধরেনি, বাংলাদেশও ধরছে না। এবার দেখা যাক মাঠের খেলা কী ঘটে?