এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টি আসরে আজ রাতে হাইভোল্টেজ ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তান। এ দুই দেশের লড়াইটা বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে মর্যাদাকর হিসেবেই পরিচিতি লাভ করেছে। এই মর্যাদার লড়াইয়ে জিততে মুখিয়ে থাকে দু’দলই। তাই প্রতিবারই ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে থাকে বাড়তি উন্মাদনা।
বাংলাদেশ সময় রাত আটটায় দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ১০ মাস পর মুখোমুখি হচ্ছে দুই দল।
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ সবসময়ই রোমাঞ্চের উপলক্ষ্য নিয়ে আসে, উপমহাদেশ তো বটেই গোটা বিশ্বের ক্রিকেট অনুসারীরা আয়োজন করে টেলিভিশন সেটের সামনে বসেন। পাশাপাশি দুই দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস, বর্তমান সম্পর্ক এবং ক্রিকেটীয় ইতিহাস এই দ্বৈরথকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
এবারও বাবর আজম ও বিরাট কোহলি যখন অনুশীলনের ফাঁকে একে অপরের সাথে দেখা করেন, সোশাল মিডিয়ায় সেই ছবি ঝড় তুলেছিল। আর ভারত-পাকিস্তান ম্যাচেও চোখ থাকবে এই দুজনের ওপরই।
বাবর আজম ও কোহলির লড়াইয়ে কে এগিয়ে
বিরাট কোহলি ম্যাচের আগেই বলেছেন, তিন ফরম্যাটেই হয়তো বাবর এখন বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন। এই আসনে একটা দীর্ঘ সময় ছিলেন কোহলি, কিন্তু গত তিন বছরে কোহলির পড়তি ফর্ম এবং বাবরের ব্যাটিং দক্ষতার উন্নতি বাবরকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এই দৌড়ে।
এখন বাবর আজম টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডেতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের ব্যাটসম্যানদের র্যাংকিংয়ের এক নম্বর ব্যাটসম্যান, টেস্ট ফরম্যাটেও আছেন সেরা তিনে।
কোহলি গত তিন বছরের মতো সময় কোনও সেঞ্চুরি পাননি, সাম্প্রতিক সময়ে বলার মতো ইনিংসও খেলতে পারেননি।
গণমাধ্যমে কোহলি বলেছেন, “আমাকে মানসিকভাবে শক্তিশালী ভাবা হয় এবং আমি সত্যিই তাই। কিন্তু সবকিছুরই সীমা থাকে, এই সীমা সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন, নতুবা এটা অস্বাস্থ্যকর হতে পারে”।
পাকিস্তানের কিংবদন্তী ফাস্ট বোলার ওয়াসিম আকরাম বলেছেন, কোহলির সাথে বাবর আজমের তুলনা করাটা এখই ঠিক হবে না। তার মতে, বাবরের আরও অনেক পথ পাড়ি দেয়া বাকি।
কোহলির পক্ষে পাকিস্তানের এই সাবেক অধিনায়ক বলেন, “কোহলির ফর্মে ফেরার জন্য একটি মাত্র ভালো ইনিংস প্রয়োজন।”
একাদশ বাছাই হবে গুরুত্বপূর্ণ
দুই দলেরই একই সমস্যা-টপ অর্ডার সেট হতে কিছুটা হলেও সময় নেয়, পাকিস্তানের টপ অর্ডারের স্ট্রাইক রেট সুনির্দিষ্ট করে বললে বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের স্ট্রাইক রেট ১৩০ এর নিচে। তবে বাবর-রিজওয়ান জুটিকে পাকিস্তান কাজে লাগাতে পারবে, যদি তারা আগে বোলিং করে ভারতকে ১৫০-১৬০ এর মধ্যে ধরে রাখতে পারে।
আর ভারতের দলের মূল প্রশ্ন থাকবে, রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল ও কোহলির পরে যারা আরও দ্রুত ব্যাট চালাতে পারেন তারা কি যথেষ্ট সময় পাবেন।
তাই এই দুই দলের একাদশ নির্বাচন এবং ব্যাটিং লাইন আপ ঠিক করাটা খুবই গুরুত্ব পাবে।
পাকিস্তানেরও যারা দ্রুত রান তুলতে পারেন তারা মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে নামবেন। আসিফ আলি, শাদাব খানের মতো ব্যাটসম্যানদের ছোট ছোট ক্যামিও ম্যাচের পরিস্থিতি ঘুরিয়ে দিতে পারে।
অলরাউন্ডারদের লড়াই
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অলরাউন্ডারদের সময়মতো ব্যবহার করার গুরুত্ব অনেক বেশি। খুব অল্প সময় লাগে এই ধরনের ক্রিকেটে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে। এসব ক্ষেত্রে ভারতের হার্দিক পান্ডিয়া, জাদেজা ও অন্যদিকে শাদাব খান, মোহাম্মদ নওয়াজরা কেমন করেন এই লড়াইটা ম্যাচের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠতে পারে।
হার্দিক পান্ডিয়া সম্প্রতি আছেন দুর্দান্ত ফর্মে, তার নেতৃত্বে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে গুজরাট টাইটান্স শিরোপা জিতেছে। জাদেজা ও পান্ডিয়ার জুটি যে কোনও বোলিং লাইন আপের জন্য ভীতিকর।
ওদিকে শাদাব খান পাকিস্তানের একমাত্র ব্যাটসম্যান স্পিন বলের বিরুদ্ধে যার স্ট্রাইক রেট ১৩০ এর বেশি। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মাঝের ওভারগুলোতে রানের চাকা সচল রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ।
দুই দলে দুই সেরা পেসার নেই
ভারতের এশিয়া কাপের দল ঘোষণার আগেই চোটের কারণে ছিটকে গিয়েছিলেন জসপ্রিত বুমরাহ। আর কিছুদিন আগে নেদারল্যান্ডস সফরে গিয়ে ফিল্ডিং অনুশীলনের সময় চোট পেয়ে এশিয়া কাপের দল থেকে ছিটকে যান পাকিস্তানের শাহীন শাহ আফ্রিদি।
দুই দলের মুখোমুখি হওয়ার আগে সংবাদ সম্মেলনে তাই লোকেশ রাহুলকে প্রশ্ন করা হয় শাহীন শাহ আফ্রিদির না থাকা ভারতের জন্য স্বস্তির কি না।
রাহুল বলেন, “ওর মতো একজন পেসার না থাকা আমাদের জন্য অবশ্যই ভালো। কিন্তু সামনে বিশ্বকাপ, শাহীনের বল খেলতে পারলে আমাদের জন্য ভালো প্রস্তুতি হতো।”
গেল বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শাহীন শাহ আফ্রিদি ভারতের টপ অর্ডারকে ভুগিয়েছিল। শাহীন শাহ আফ্রিদির না থাকা নিয়ে বাবর আজম দলকে শক্ত বার্তা দিয়েছেন।
তিনি বলছেন, “পাকিস্তান একজনের ওপর নির্ভরশীল দল না, শাহীনের জায়গায় যেই খেলবেন তার মনে রাখতে হবে তিনি পাকিস্তানের হয়ে খেলবেন।”
পাকিস্তান আত্মবিশ্বাসী, ভারত নতুনত্বে বিশ্বাসী
পাকিস্তান ভারতের বিপক্ষে এর আগের দেখায় জয় পেয়েছিল, যেটা ছিল বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ইতিহাসে ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের প্রথম জয়। এই জয়টা পাকিস্তানের দলটিকে বাড়তি আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিল।
তবে এবার বাবর আজম বলছেন, “পাকিস্তানের জন্য ওই ম্যাচটা এখন অতীত। পুরোপুরি নতুন একটা ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে দুই দল। এই ম্যাচের আগে বড় কথা না বলে মাঠে প্রমাণ করতে চাই আমরা।”
ওদিকে রোহিম শর্মার সংবাদ সম্মেলনে নতুনত্বের ইঙ্গিত পাওয়া যায়, “আমরা হয়তো ভুল করতে পারি বিপদে পড়তে পারি কিন্তু তাতে আমাদের সমস্যা নেই। আমরা ভিন্ন সমন্বয় চেষ্টা করে দেখবো। আমরা মূলত ভয়হীন ক্রিকেট খেলতে চাই।”
অবশ্য দুই দেশের পরিসংখ্যানের বিচারে এগিয়ে রোহিত শর্মার ভারত। ৯ ম্যাচের ৬টিতে জিতেছেন রোহিতরা এবং বাবরের পাকিস্তানের জয় ২টি।