তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ কোনো বিদেশি শক্তির শক্তিতে বলিয়ান নয়, আমরা বাংলাদেশের জনগণের শক্তিতে বলিয়ান। সব বৈদেশিক রাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক। ভারত আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু।
শুক্রবার (১৯ আগস্ট) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড : পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, এই দেশে গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক শক্তির নেতৃত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। সুতরাং গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক বিশ্ব অগণতান্ত্রিকভাবে বন্দুকের নল থেকে যারা বের হয়েছে এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে তাদের সঙ্গে থাকতে পারে না।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা কারবালার প্রান্তরের মর্মন্তুদ কাহিনীর কথা জানি। কারবালার প্রান্তরে ইমাম হোসাইনকে জবাই করা হয়েছিল। কিন্তু কারবালার প্রান্তরে নারী ও শিশুদের হত্যা করা হয়নি, তাদের সবাইকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। অথচ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নারী ও শিশুদের হত্যা করা হয়েছে। ১০ বছরের শিশু শেখ রাসেল, চার বছরের সুকান্ত বাবু, ১১ বছরের বেবি সেরনিয়াবাতকে হত্যা করা হয়েছে। অন্তঃসত্ত্বা বেগম আরজু মনিকে হত্যা করা হয়েছে। সেদিন প্রকৃতপক্ষে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল।
ইতিহাসের পাতায় জিয়াউর রহমানের স্থান একজন খুনি, বিশ্বাস ঘাতক এবং একজন সিরিয়াল কিলার হিসেবে থাকবে উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, কারণ বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের খবর সকাল বেলা যখন তার কাছে পৌঁছানো হয় তখন তিনি বলেন, ‘সো হোয়াট ভাইস প্রেসিডেন্ট ইজ দেয়ার।’ একজন সেনাপতি নিজের জীবনকে বিপন্ন করে হলেও রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রপতিকে রক্ষা করার শপথ গ্রহণ করে। তার তখন দায়িত্ব ছিল ছুটে গিয়ে রাষ্ট্রপতিকে রক্ষা করা, তিনি সেটি করেননি।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের অন্যতম কুশীলব শুধু তা নয়, নিজের ক্ষমতাকে নিষ্কণ্টক করার জন্য হাজার হাজার সেনাবাহিনীর অফিসার এবং জওয়ানকে হত্যা করেছে। কাউকে সামারি ট্রায়ালের মাধ্যমে, অনেককে ট্রায়াল ছাড়া। অনেক সেনাবাহিনীর অফিসারকে ঘুম থেকে তুলে বলা হয়েছে চলুন। কোথায় নিয়ে যাচ্ছ জিজ্ঞেস করলে বলা হতো আপনাকে ফাঁসি দেওয়া হবে! প্রতিউত্তরে কোনো বিচার হলো না, কেন ফাঁসি দেওয়া হবে এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর মেলেনি। সকাল বেলা নাস্তা করতে করতে জিয়াউর রহমান ফাঁসির আদেশে স্বাক্ষর করত।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, তখন অনেকেই বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পটভূমি রচনার সঙ্গে যুক্ত ছিল। বাসন্তি একটা পাগল মেয়ে, তার গায়ে জাল পরিয়ে সেই ছবি ছাপিয়ে মানুষ কাপড় পরতে পারছে না এই সংবাদ পরিবেশন করা হয়। অথচ জালের দামের চেয়ে একটা শাড়ির দাম অনেক কম। এখনো দুইশ টাকা দিয়ে একটা শাড়ি পাওয়া যায়, এক হাজারের কমে জাল পাওয়া যায় না, তখনো তাই ছিল।
বিএনপি নেতা রিজভী বক্তব্য রেখেছেন আওয়ামী লীগকে নাকি বিদেশি শক্তি টিকিয়ে রেখেছেন— এ প্রসঙ্গ টেনে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আওয়ামী লীগের শক্তি জনগণ, জনগণের শক্তিতেই আমরা বলিয়ান। তেলের মূল্য বৃদ্ধির পর নয়াপল্টন আর প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপি যেভাবে লাফালাফি শুরু করল। বর্ষাকালে যখন প্রথম বৃষ্টি হয় পুকুরে পুঁটি ও মলা মাছ খুব লাফায়, বর্ষায় যখন চারিদিকে অথৈ পানি থাকে তখন ব্যাঙ খুব ডাকে, নানা ধরনের ডাক দেয়। এখন বিএনপির হাঁকডাক হচ্ছে ঠিক সেইরকম।
তিনি বলেন, সরকারকে নাকি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবে তারা। আওয়ামী লীগের ভিত অনেক গভীরে। শক্ত দেয়ালের মধ্যে কেউ ধাক্কা দিলে সে নিজেই পেছনে পড়ে যাই। বিএনপির অবস্থাও হচ্ছে তাই। বিএনপির পৃষ্ঠপোষকতায় সারা দেশের পাঁচশ জায়গায় বোমা ফাটানোর প্রতিবাদে ১৭ আগস্ট সারা দেশব্যাপী আমরা বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছিলাম। ১৭ তারিখে আমাদের বিক্ষোভ ছিল ট্রায়াল মাত্র। কিন্তু এই ট্রায়াল দেখেই গতকাল (বুধবার) মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের যে সংবাদ সম্মেলন তাতে আমার মনে হলো, ট্রায়াল দেখেই তারা ভয় পেয়ে গেছে। আমরা মাত্র রিহার্সাল দিয়েছি, ফাইনালি নামব আগামী মাসে, তখন তারা পালানোর পথ খুঁজে পাবে না।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক এম এ সালামের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ পালিতের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আতাউর রহমান, সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুদ্দীন, আবুল কালাম আজাদ, এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম, মহিউদ্দিন আহমেদ রাশেদ, স্বজন কুমার তালুকদার। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শাহজাহান সিকদার, নজরুল ইসলাম তালুকদার, বেদারুল আলম চৌধুরী বেদার, প্রদীপ চক্রবর্তী, আকতার হোসেন খাঁন, নাজিম উদ্দিন মুহুরী প্রমুখ।