আব্দুল মান্নানের কর্মজীবন শুরু হয় কুষ্টিয়া পৌরসভার ময়লা ফেলার গাড়ির হেলপার হিসেবে। এরপর তিনি জাল সনদের মাধ্যমে সার্ভেয়ার হিসেবে নিয়োগ পান। সার্ভেয়ার হওয়ার পর দুর্নীতির মাধ্যমে কোটিপতি বনে যান বলে অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

সার্ভেয়ার আব্দুল মান্নান কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বারাদি গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে।

জানা গেছে, অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন মান্নান। পৌরসভার সার্ভেয়ার পর আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছেন তিনি।

সার্ভেয়ার আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে জাল সনদের মাধ্যমে চাকরি গ্রহণ, ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ৮ আগস্ট সম্পদের বিবরণী দুদক কুষ্টিয়া কার্যালয়ে দাখিলের জন্য গত ৩১ জুন নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. জাকারিয়া।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, সার্ভেয়ার আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগ আসে। বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে তথ্য দিয়ে বলা হয়, তিনি কুষ্টিয়া পৌরসভার সার্ভেয়ারের দায়িত্ব নেওয়ার পরবর্তীতে কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন। শুধু তাই না, মান্নানের বিরুদ্ধে জাল সনদে চাকরি গ্রহণ, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে মান্নানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দুদকের কুষ্টিয়া সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুদক কুষ্টিয়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নীলকমল পাল সার্ভেয়ার মান্নানকে চিঠি দেন এবং সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র নিয়ে ওই কার্যালয়ে আগামী ৮ আগস্ট হাজির হতে বলেন।

সূত্রে আরও জানা যায়, নোটিশে আব্দুল মান্নানের কাছে তার স্ত্রী ও সন্তানদের জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন সনদ ও পাসপোর্টের ফটোকপি, তাদের এবং তাদের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের নামে থাকা স্থাবর সম্পদের (জমি, প্লট, বাড়ি, ফ্ল্যাট, দোকান, মার্কেট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, খামার, ফার্ম ও অন্যান্য) দলিল, অনুমোদিত নকশা, লিজ/বরাদ্দ/ক্রয়সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র, অস্থাবর সম্পদ (সঞ্চয়পত্র, এফডিআর, বন্ড, শেয়ার বিনিয়োগ, গাড়ি ও অন্যান্য) ক্রয়সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র এবং ব্যাংক হিসাব ও ডিপোজিট স্কিমের (যদি থাকে) বিবরণী, তাদের নামে (ব্যক্তিগত/ব্যবসায়িক) শুরু থেকে সর্বশেষ দাখিল করা আয়কর রিটার্নের সার্টিফায়েড কপি, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা অন্যান্য থেকে গৃহীত ঋণ/দায়সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র চাওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে কুষ্টিয়া পৌরসভার সার্ভেয়ার ছিলেন রামবাবু। অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্ভেয়ারের পোস্ট সৃষ্টি করিয়ে জাল সনদের মাধ্যমে সার্ভেয়ার হিসেবে নিয়োগ পান আব্দুল মান্নান।

চাকরিতে যোগদানের আগে সার্ভেয়ার আব্দুল মান্নান কুষ্টিয়া পৌরসভার ময়লা টানা গাড়ির হেলপার ছিলেন। ওই সময় চট্টগ্রাম থেকে জাল সার্ভেয়ারের সাটিফিকেট এনে সার্ভেয়ার বনে যান মান্নান। পৌরসভার সার্ভেয়ার হওয়ার পর এখন তিনি ঘুরে বেড়ান বিলাসবহুল গাড়িতে। কুষ্টিয়ায় বিলাসবহুল বাড়িও বানিয়েছেন, বিভিন্ন জায়গায় কিনেছেন জমি। গড়ে তুলেছেন নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড়। এছাড়া স্ত্রী, সন্তান ও শাশুড়ির নামেও অবৈধ সম্পদ গড়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে আব্দুল মান্নান বলেন, আমার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ এনে লাভ নেই। আগেও আমার বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ উঠেছিল, কিছুই হয়নি। এবারও কিছুই হবে না। আমি সৎ মানুষ, কোনো দুর্নীতি আমি করি না।

কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলী ও নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তারা রিসিভ করেননি।

দুদক কুষ্টিয়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নীল কমল পাল বলেন, নোটিশে মান্নানসহ তার স্ত্রী ও সন্তানদের সম্পদের বিবরণী চাওয়া হয়েছে। মান্নানের বিরুদ্ধে জাল সনদে চাকরি গ্রহণ, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে দুদক।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কুষ্টিয়া কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. জাকারিয়া জানান, কুষ্টিয়া পৌরসভার সার্ভেয়ার আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পেয়েছি আমরা। অভিযোগের ভিত্তিতে সম্পদের হিসাব দাখিলের জন্য তাকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। দুদক অভিযোগটি তদন্ত করে দেখছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে দুদক।