সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) ছুরিকাঘাতে নিহত বুলবুল আহমেদ এর নরসিংদীর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। একমাত্র বুকের ধন ছেলেকে হারিয়ে বুলবুলের মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। বুলবুলের পরিবারকে সান্তনা দিতে বাড়িতে ভিড় জমিয়েছে স্বজন, এলাকাবাসী ও বন্ধুরা। একই সাথে বুলবুল হত্যার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন নিহতের মা ও স্বজনরা।
বুলবুল আহমেদ নরসিংদী শহরের ভেলানগর এলাকার মৃত উহাব মিয়ার ছেলে। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে বুলবুল ছিল সবার ছোট। তিনি ২০১৮ সালে নরসিংদীর আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। পরে বুলবুল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগে ভর্তি হয়। তিনি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরান হলের ২১৮ নম্বর কক্ষে থাকতেন।
সোমবার সন্ধ্যায় বুলবুল নিহতের খবর বাড়িতে পৌঁছালে পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরিবারের সদস্যদের কান্না ও আহাজারিতে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। আদরের ছেলেকে হারিয়ে মা ইয়াসমিন বেগম বারবার বিলাপ করছিলেন। কোনোভাবেই তাকে সান্ত্বনা দিতে পারছিলো না পরিবারের সদস্যরা। পরে রাতেই বুলবুলের বড় ভাই জাকারিয়া এলাকার কয়েকজনকে নিয়ে সিলেটের উদ্দেশে রওনা দেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে নিহতের লাশ নরসিংদীর পৌঁছানোর কথা।
নিহতের মা ইয়াসমিন বেগম বলেন, ছেলেটাকে মেরে আমাকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। আমার কষ্ট দেখে, বুলবুল প্রায়ই আমাকে বলতো, মা আর এক বছর ধৈর্য ধরো। আমার পড়ালেখা শেষে হয়ে গেলেই তোমার সকল কষ্টের অবসান হয়ে যাবে। আমি চাকরি করে সংসার চালাবো। কিন্তু তা আর হলো না। আমার ছেলেটাকে মেরে ফেললো। আমি তাদের বিচার চাই।
নিহতের বোন সোহাগী বলেন, বুলবুল পরীক্ষা শেষে তার এক বান্ধবীর সাথে টিলা পাহাড় এলাকায় ঘুরতে যায়। ওইখানেই কিছু একটা হয়েছে। ঘটনা যাই হোক আমি আমার ভাই হত্যার বিচার চাই।
নিহতের সহপাঠী হৃদয় বলেন, বুলবুল খুবই মেধাবী ছিলো। পড়ালেখা শেষ করে পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছে ছিলো। মাত্র এক বছর আগে তার বাবা মারা গেলো। এখন তার মৃত্যু পরিবার কীভাবে শোক সামলাবে? আমরা অবিলম্বে বন্ধুর হত্যার বিচার চাই।
শাবিপ্রবি’র নরসিংদী জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক লোকমান হোসেন বলেন, ক্যাম্পাসের ভিতরে সহপাঠীর এমন নির্মম মৃত্যু কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছি না। আমরা এখন ক্যাম্পাসে অবস্থান করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বুলবুল হত্যার বিচার দাবি করতেছি এবং বুলবুলের পরিবারকে প্রশাসনের ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি করছি।
উল্লেখ্য, সোমবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাশে গাজী কালু টিলা লাগোয়া ‘নিউজিল্যান্ড’ এলাকায় ছুরিকাঘাত করা হয় বুলবুলকে। পরে সহপাঠীরা উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।