দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের দক্ষিণ শুকদেবপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় কয়েক বছর ধরে বন্ধ। নেই কোনো শিক্ষার্থী। গত ৬ জুলাই প্রকাশিত এমপিওভুক্তির তালিকায় নাম এসেছে বিদ্যালয়টির। এমন খবরে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আনন্দিত হলেও বিস্মিত এলাকার অনেকেই।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রায় একযুগ ধরে বিদ্যালয়টি বন্ধ রয়েছে। কোনো ছাত্র-ছাত্রী নেই। এই প্রতিষ্ঠানটি কীভাবে এমপিওভুক্ত হয়।
সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কোনো একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ধ্বংসাবশেষ পড়ে রয়েছে। বিস্তীর্ণ খোলা মাঠে গরু ঘাস খাচ্ছে। রাস্তার পশ্চিমে একটি খোলা টিনশেড ঘর, যেখানে একপাশে দুটো খড়ের গাদা আর তার পাশেই পার্শ্ববর্তী বাড়ির কয়েকজন নারী দোলনায় শিশুকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছেন। খোলা টিনশেডের ঘরের সঙ্গে লাগানো লম্বা তিনটি আধাপাকা টিনশেডের ঘর। বারান্দার কিছু টিন মরচে পড়ে নষ্ট হয়ে ভেঙে পড়েছে। ঘরের টিনগুলোর অবস্থাও একই রকম।
প্রথম রুমের দরজায় তালা লাগানো তবে জানালার পাল্লা না থাকায় উঁকি দিয়ে দেখা যায় দেয়ালে সিমেন্টের ব্ল্যাকবোর্ড। এটি ক্লাসরুম বলে মনে হয়, তবে ভেতরে কোনো বেঞ্চ বা অন্য কোনো আসবাব নেই। পাশের দুটো রুমে তালা নেই। খোলা দরজা দিয়ে ভেতরে দেখা যায় দীর্ঘদীন পরিত্যাক্ত থাকায় ঘরের মেঝেতে আগাছা জন্মেছে। এক কোণে দুটি টয়লেটের অস্তিত্ব থাকলেও আগাছায় ভেতরে যাওয়ার পথ বন্ধ।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়েছে। এখন নতুন করে আবার সব কিছু ঠিক করা হচ্ছে। ঘরের টিনগুলো পাল্টানো হচ্ছে। বিদ্যালয়টি মেরামত শেষ হলে দ্রুত ক্লাস শুরু করা হবে।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (গণিত) পরিমল অধিকারী বলেন, আমি করোনার আগে অন্য একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলাম। এখন বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়েছে আবার যোগদান করব। ১৯৯২ সালে চিরিরবন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মরহুম আইয়ুবুর রহমান শাহ পারিবারিকভাবে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতে কয়েক শ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করলেও দীর্ঘদিন এমপিওভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষকদের মাঝে হতাশা কাজ করতে থাকে। তারা জীবিকার প্রয়োজনে বিভিন্নজন বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত হলে স্কুলটিতে ভাটা পড়ে। শিক্ষার্থী কমতে কমতে থাকায় করোনার আগে একপর্যায়ে পাঠদান বন্ধ হয়ে যায়।
তবে শুকদেবপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রহিম বলেন, স্কুলটি এমপিওভুক্ত হতে যাচ্ছে- এ রকম খবরে শিক্ষকরা কিছু দিন থেকে আবারো তাদের তৎপরতা শুরু করলেও ছাত্র-ছাত্রী না থাকায় পাঠদান শুরু করতে পারেননি।
বিদ্যালয়ের পাশের বাড়ির রাহেলা খাতুন বলেন, অনেক দিন থেকে স্কুলটা বন্ধ। শিক্ষকরা বেতন পান না। কীভাবে চলবেন। এখন এমপিওভুক্ত হইছে, ছাত্র ভর্তি নেবে, স্কুল আবার চালু হবে।
পার্শ্ববর্তী গ্রাম আন্ধারমুহার বাসিন্দা নাসির উদ্দীন বলেন, প্রায় ১০-১৫ বছর থেকে স্কুলটি বন্ধ। আগে ভালো চললেও দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় বিল্ডিং সবকিছু ভেঙে পড়েছে। এখন শুনছি এমপিওভুক্ত হয়েছে। স্কুলটি আবার চালু হবে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফরোজা বেগম বলেন, অনেক আশা নিয়ে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। আর মাত্র বছর দেড়েক চাকরি আছে আমার। স্কুলটির সব কিছু মেরামত করা হচ্ছে নতুন করে। কয়েকদিনের মধ্যে ক্লাস চালু হবে। তবে কতজন শিক্ষার্থী আছে জানতে চাইলে তিনি নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা বলতে পারেননি।
কোথায় ক্লাস হয় জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, শিক্ষকরা এলাকা ভাগ করে কোচিং করান।