কক্সবাজারের চকরিয়ায় মা ও তরুণী মেয়েকে গরু চুরির অভিযোগে একদল দুর্বৃত্ত রশিতে বেঁধে নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পরে তাদের কোমরে রশি বেঁধে মা-মেয়ে দুইজনকে প্রকাশ্য রাস্তায় হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় হারবাং চেয়ারম্যানের ইউপি কার্যালয়ে। সেখানে চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম নিজে তাদের আবার মারধর করেন। একপর্যায়ে তাদের শারীরিক অবস্থার গুরুতর অবনতি ঘটলে পুলিশ এসে মা ও মেয়েকে উদ্ধার করে চকরিয়া সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে।
২১ আগস্ট শুক্রবার দুপুরে উপজেলার হারবাং পহরচাঁদা এলাকায় এ ঘটনা ঘটলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ২২ আগষ্ট শনিবার রাতে ঘটনার ছবি আসলে আলোচিত হতে থাকে।
এ ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া থানার হারবাং পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (পুলিশ পরিদর্শক) মো. আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, শুক্রবার স্থানীয়রা পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দিলে আমি ফোর্স পাঠাই। আমাদের ফোর্স গিয়ে গুরুতর অবস্থায় মা-মেয়েকে উদ্ধার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে আসি। আমরা তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি।
তিনি আরও জানিয়েছেন, স্থানীয় এক ব্যক্তির দায়ের করা গরু চুরির মামলায় তাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে মা-মেয়েসহ চার জনের বাড়ি পটিয়া উপজেলার শান্তির হাটে। অপরজনের বাড়ি পেকুয়া লালব্রিজ এলাকায়।
হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে তাদের উপর নির্যাতন হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন অভিযোগ ওদের কেউ করেনি। আমাদের ফোর্স যখন ঘটনাস্থলে যায় তখন সেখানে প্রায় দুই শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। সেখান থেকে তাদেরকে আমাদের হেফাজতে নিয়ে আসাটাই প্রাধান্য দিয়েছি। আর ভুক্তভোগী কিংবা অন্য কেউ যদি অভিযোগ করে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, একদফা মা-মেয়ের ওপর নির্যাতন চলার পর হারবাং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম মিরান পরিষদের চৌকিদার (গ্রাম পুলিশ) পাঠিয়ে তাদেরকে রশিতে বেঁধে তার কার্যালয়ে এনে আবার নির্মমভাবে নির্যাতন করেন। উপর্যুপরি নির্যাতন শেষে চেয়ারম্যানের লোকেরাই তদন্তকেন্দ্রে ফোন করে পুলিশ এনে তাদের হাতে মা-মেয়েকে মুমূর্ষু অবস্থায় তুলে দেন।
হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামের সাথে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনাটি সত্যি। তবে এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে শুক্রবার পহরচাঁদা এলাকার স্থানীয় লোকজন। এঘটনার সাথে আমার কোন ধরণের সম্পৃক্ততা নেই। স্থানীয়রা তাদের ধরে নিয়ে এসে পুলিশের হাতে তুলে দেন বলে তিনি জানান।
প্রত্যক্ষদশীর মতে, হারবাং এলাকার মো. মাহাবুবুল হক এর একটি গরু চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় তার ছেলের নেতৃত্বে কয়েকজন ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে পহরচাঁদা নির্মাণাধীন রেল লাইনের পাশে এদের পাওয়া যায়। ওখানে উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। স্থানীয় লোকজন জুমার নামাজ শেষে এগিয়ে এসে ঘটনা জানার পর এদের গণধোলাই দিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে নিয়ে যায়। চেয়ারম্যান পুলিশকে সোপর্দ করেন।
এ ব্যাপারে চকরিয়া থানা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, পটিয়ার শান্তিরহাট এলাকার মা-মেয়ে সহ একই পরিবারের ৪ জন এবং পেকুয়ার একজনের বিরুদ্ধে গরুর মালিক হারবাং এলাকার মো. মাহাবুবুল হক বাদি হয়ে মামলা করেছেন। যার নম্বর ২১, ২১/০৮/২০২০। এ মামলায় ৫ জনকে জেল হাজতে পাঠিয়েছে আদালত।
এ বিষয়ে হারবাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। একারণে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।