চট্টগ্রাম ও খুলনায় বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) আঞ্চলিক অফিস স্থাপন ও আধুনিকীকরণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে। চার বছর অতিবাহিত হলেও প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হয়নি। ২০১৯ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের কাজ শতভাগ বাস্তবায়নের কথা থাকলেও এখনও প্রকল্পের অনেক কাজ বাকি। তাই ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। কচ্ছপ গতিতে চলছে প্রকল্পের কাজ। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত খুলনা আঞ্চলিক অফিসের ভৌত ও আর্থিক অগ্রগতি ৭৫ শতাংশ এবং চট্টগ্রাম আঞ্চলিক অফিসের ভৌত অগ্রগতি মাত্র ২৫ শতাংশ। ২০২১ সালেও প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বিএসটিআই মহাপরিচালক ড. মো. নজরুল আনোয়ার বলেন, নানা কারণে চট্টগ্রাম ও খুলনায় বিএসটিআই আঞ্চলিক অফিস স্থাপন ও আধুনিকীকরণ প্রকল্পের কাজে জটিলতা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে কাজ বন্ধও হয়ে যায়। তবে নতুন করে আবারও কাজ শুরু হয়েছে। খুলনার কাজের গতি ভালো এবং চট্টগ্রামের একটু কম। ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত সময় হাতে আছে। তবে করোনার কারণে প্রকল্পের কাজে আবারও বিলম্ব হয়েছে। বিএসটিআই সূত্র জানায়, অবশিষ্ট কাজ দ্রুত সময়ে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে একটি ওয়ার্ক প্ল্যান তৈরি করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান প্রতি মাসের প্রগ্রেস নিশ্চিত করতে না পারলে তার প্রকৃত কারণ বের করে সেই মোতাবেক জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। অন্যথায় কাজের বিলম্বের জন্য ঠিকাদারের কাছ থেকে যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য জবাব না পাওয়া গেলে চুক্তি অনুসারে পূর্ব নির্ধারিত ব্যয় আদায় করা হবে অথবা চুক্তি বাতিলের ব্যবস্থা নেয়া হবে। সূত্র থেকে জানা গেছে, প্রকল্পটির সর্বশেষ সংশোধিত প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ২৮২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। প্রকল্পটি সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে। পরে মোট বাস্তবায়ন ব্যয় কমে দাঁড়ায় ২৩৩ কোটি ৬ লাখ টাকা।
প্রকল্পের নির্মাণ কাজ ক্রয় সংক্রান্ত প্যাকেজ বিশ্লেষণে দেখা যায়, মাত্র চারটি প্যাকেজের ক্রয় কার্যক্রম পিডব্লিউডি’র মাধ্যমে করা হয়েছে। পণ্য ক্রয়ের মোট ১৫টি লটের মধ্যে ১০টি লটের পণ্য ক্রয় সম্পন্ন হয়েছে। চারটি লটের দরপত্র আহ্বান করা হয়নি এবং একটি লটের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যে ১০টি লটের পণ্য ক্রয় সম্পন্ন হয়েছে তার ৫টি লটের সময়ের তুলনায় কিছুটা বিচ্যুতি রয়েছে। বিএসটিআই সূত্র আরও জানায়, নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে অসমাপ্ত ও অবশিষ্ট কাজগুলো পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমঝোতার ভিত্তিতে দ্রুত বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। নির্মিত অবকাঠামোসমূহ ও আধুনিক যন্ত্রপাতি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার। প্রকল্প মেয়াদের পরিবর্তিত সময়ে নির্মিত অবকাঠামোসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে প্রত্যাশী সংস্থার কারিগরি ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন জরুরি। এর মাধ্যমে প্রকল্প সমাপ্তির পর রক্ষণাবেক্ষণ পরিচালনা করা যায়। নির্মাণাধীন অবকাঠামোর ভৌত অবস্থা পরিদর্শন ও ডিজাইন পর্যালোচনাসহ বিভিন্ন অঙ্গের সরেজমিন পরিমাপ, পরিবীক্ষণ এবং গুণগতমান পরীক্ষা করা হয়েছে। অবকাঠামোর ভৌত পরিমাণ সঠিক পাওয়া গেছে। ভবনের বিভিন্ন তলায় স্থাপিত গ্রিল, রেলিংয়ের পরিমাণ সঠিক পাওয়া গেছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিএসটিআই’র আরও গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের জন্য আঞ্চলিক অফিস প্রতিষ্ঠা ও আধুনিকীকরণের মাধ্যমে বিএসটিআইএকে শক্তিশালী করা, চট্টগ্রাম ও খুলনা জেলায় বিএসটিআই’র কার্যক্রম আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ করা। বাংলাদেশি পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশে সক্ষম করার জন্য বাণিজ্যের প্রযুক্তিগত বাধা দূর করতেই প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় ৩০ হাজার ৮২ বর্গমিটার অফিসসহ ল্যাবরেটরি ভবন নির্মাণ করা। যন্ত্রপাতি এবং ল্যাব সরঞ্জাম কেনা ও স্থাপনসহ অন্যান্য সিভিল কাজ করা। বার বার সময় বৃদ্ধির কারণে প্রকল্পের সুফল থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে।