হারিয়ে যাচ্ছে পঞ্চগড় জেলার পুরোনো হাট বাজার। আস্তে আস্তে ছোট হয়ে আসছে এই হাটগুলোর পরিধি। অন্যদিকে বড় হাটগুলো পরিণত হচ্ছে শহরে। সময় মতো উদ্যোগ ও নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে ঐতিহ্য হারানোর পাশাপাশি অর্থনীতিতেও পড়বে এর প্রভাব।
পঞ্চগড় জেলার সাতমেড়া ইউনিয়নের গোয়ালঝাড় হাট ঠিক কবে থেকে বসা শুরু হয়েছে তা বলতে পারছেন না স্থানীয়রা। তবে বয়স্ক মুরুব্বীরা তাদের স্মৃতি চারণ থেকে যা জানলেন তাতে বোঝা গেল হাটের বয়স দেড় থেকে দুশো বছরেরও বেশি। জানা যায় চতুর্দিকে ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে একমাত্র গোয়ালঝাড় হাট বসতো তখন। প্রতি শুক্র আর সোমবার ভোর বেলা থেকে শুরু হতো গোয়ালঝাড় হাট। হাজার হাজার মানুষ বাজার সওদা করতো এই হাটে। পাওয়া যেতো সবকিছু। স্থানীয় চাষিরা তাদের উৎপাদিত শাক সবজিসহ নানারকম ফসল বিক্রি করতো এই হাটে।
সারাদেশ থেকে আসতো ব্যবসায়ীরা। প্রতি হাটে অন্তত ৫০ থেকে ৬০ মণ গরুর মাংস বিক্রি হতো। দেশের নানা প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে ধান, পাট, গম, তিলসহ স্থানীয় কৃষকদের উৎপাদিত নানা শষ্য কেনাবেচা করতো। এই হাটকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে প্রাথমিক, উচ্চবিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা। আছে ইউনিয়ন পরিষদ, টাকা লেনদেনের জন্য রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের শাখাও আছে। আগে সপ্তাহে দুদিন হাট বসলেও এখন প্রতিদিনই বসে। তবে সন্ধ্যার পর বসে এই হাট।
সারাদিনের কাজ কর্ম শেষে বাজারে আসে কিছু মানুষ। ২০০২ সালে ৭০ লক্ষ টাকা ব্যয় করে সরকারি ভাবে নির্মিত হয় হাট শেড। ব্যবহার না হওয়ায় এখন সেগুলো পরিত্যাক্ত অবস্থায় নষ্ট হতে শুরু করেছে। আরও নানা কারণে গোয়ালঝাড় হাট হারিয়ে যেতে বসেছে।
স্থানীয়রা বলছেন হাট পরিচালনায় অসুস্থ রাজনীতির প্রভাব, ব্যবসায়ীদের জন্য সুযোগ সুবিধা না থাকা এবং গ্রামে গ্রামে নতুন দোকন-পাট ও বাজার গড়ে ওঠায় হারিয়ে যাচ্ছে গোয়ালঝাড় হাট। হাট ইজারাদার হাসান আলী জানান, গোয়ালঝাড় হাট আগে সমৃদ্ধশালী থাকলেও এখন প্রায় হারিয়ে যাবার উপক্রম। এর কারণ হচ্ছে যেখানে সেখানেই এখন ছোট বড় দোকান গড়ে উঠছে। অনেকে বাড়িতেই দোকান খুলে বসেছেন। সবকিছু পাওয়া যাচ্ছে এই দোকানগুলোতে। রাস্তার মোড় গুলোতে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট বাজার। বিভিন্ন মসজিদ, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ নানা প্রতিষ্ঠানের সামনে গড়ে উঠছে নতুন নতুন বাজার।
তাই মানুষ আর বেশি দূরে না গিয়ে হাতের কাছেই বাজার করে ফেলছেন। তবে আগে কৃষকের সব ফশল এখানে বিক্রি হতো। এখন হয় না। কারণ বাইরের ব্যবাসায়ীরা এখানে ব্যবসা করতে আসে না। হাট সেডগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই হাটের ঐতিহ্য ধরে রাখতে হলে নতুন করে পরিকল্পনা করতে হবে। হাটের এই অবস্থার জন্য অসুস্থ রাজনীতি, স্থানীয় ব্যবসায়িদের স্বেচ্ছা চারিতা এবং উদাসীনতাকেও দায়ি করেছেন অনেকে। এই হাট থেকে প্রতিবছর ২২ হাজার টাকা রাজস্ব পায় সরকার। পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নিলে সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে বলে মনে করছেন তারা।
পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: জাকির হোসেন জানান, হাট বাজার উন্নয়নে আমরা কাজ করছি। বিলীন হতে থাকা হাটগুলোর খোঁজ নিয়ে নতুন পরিকল্পনা করে উদ্যোগ নেয়া হবে।