বন্দি বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য অপরাধীদেরকে দেশে ফিরিয়ে এনে আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী ন্যায় বিচার সুনিশ্চিত করতে হবে। শেখ হাসিনা সারা বিশ্বে ফ্যাসিস্ট রেজিমের মুখপাত্র। এদেশের মানুষ গণহত্যার বিচারের লক্ষ্যে ভারত থেকে শেখ হাসিনাকে ফেরত চায়। আশা করি ভারত সরকার শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। শেখ হাসিনাসহ বিগত স্বৈরশাসকের বিচার করা না গেলে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে এই দেশের মর্যাদা ক্ষুন্ন হবে। শেখ হাসিনার সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে বিচারপতি খায়রুল হক দেশের গণতন্ত্র, সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতাত্তোর ইতিহাসে বিচারপতি খায়রুল হকের মতো জ্ঞানপাপী আর দ্বিতীয় কেউ নেই। তার মতো দেশের এত ক্ষতি আর কেউ করেনি। তাকে গ্রেফতার করে অতি দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তাকে আগেই গ্রেফতার করা উচিত ছিল। তার শাস্তি এখন সময়ের দাবি। বর্তমান সরকার সংস্কারের যে উদ্যোগ নিয়েছে তার সাথে বিএনপি একাত্মতা প্রকাশ করে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছে। তবে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা যৌক্তিক সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দিয়ে জনগণের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার ব্যাপারে অন্তর্বতীর্ সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আজ (১৯ অক্টোবর, ২০২৪ শনিবার) রাজধানীর এফডিসিতে জুলাই হত্যাকান্ডে শহীদদের আত্মার শান্তিতে দোষীদের শাস্তি প্রদান নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয়তাবাদী আইনজীবি ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, জুলাই—আগস্ট গণহত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পূর্বে গত মাসে শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় রয়টার্সকে বলেছিলেন, তার মা কোন অন্যায় করেনি। বিচারের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত শেখ হাসিনা। তার এই বক্তব্য অনুযায়ী ধরে নেয়া যেতে পারে ১৮ নভেম্বরের মধ্যে গণহত্যায় অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসে আইনের মুখোমুখি হয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করবেন। আর তিনি যদি দেশে ফিরে না এসে বিচারের মুখোমুখি না হন তাহলে আমরা আশা করবো আদালত তথা সরকারের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাসহ পালিয়ে থাকা অন্যান্য আসামীদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। তা না হলে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে না। জুলাই হত্যাকান্ডে জড়িত কেউ যদি পালিয়ে থেকে বিচারের মুখোমুখি না হয়, তাহলে তারা নিজেরাই নিজেদের ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করবেন। বাদী, স্বাক্ষী কাউকে জেরা করতে পারবেন না। তবে আমি অনুরোধ করবো ন্যায় বিচারের স্বার্থে কারো অনুপস্থিতিতে তাকে সরকারিভাবে দক্ষ আইনজীবি নিয়োগের সুযোগ দেয়া, একই সাথে আসামী পক্ষ চাইলে সহজে যাতে বিদেশী ল’য়ার নিয়োগ দিতে পারে। আসামী পক্ষ যাতে এই বিচার নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলতে না পারে তার জন্য সরকারকে সচেতন থাকতে হবে। প্রয়োজনে স্বাক্ষীর নিরাপত্তা বিধান সাপেক্ষে জুলাই হত্যাকান্ডের বিচারের ট্রায়াল টেলিভিশনে দেখানো যেতে পারে।
তিনি আরো বলেন, শুধু জুলাই হত্যাকান্ডে জড়িতদের শাস্তি দিলেই শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে কি না তা নিয়ে রয়েছে নানা বিশ্লেষণ। দেশের বেশিরভাগ মানুষই মনে করেন, শুধু জুলাই হত্যাকান্ডের শাস্তিই নয়, গত ১৫ বছরে যে ৬০ লক্ষ মানুষের নামে গায়েবি মামলা হয়েছে, ৪ হাজার বিচার বহির্ভুত হত্যা ঘটানো হয়েছে, ৭০০ এর বেশি মানুষ গুম হয়েছে, জেলে আটক বিনা চিকিৎসায় যারা মারা গিয়েছে, অগণিত মানুষ ফ্যাসিবাদের দ্বারা পঙ্গুত্ববরণ করেছে, কুইক রেন্টালের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে, মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি হয়েছে, আর্থিক খাতকে পঙ্গু বানিয়ে দিয়েছে, বিডিআর হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে, দেশের অর্থ পাচার করে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই, ইউরোপ—আমেরিকায় বাড়ি গাড়ি করে আয়েশি জীবন যাপন করছে এসবেরও যথাযথ বিচার না করে শুধু জুলাই হত্যাকান্ডের বিচার করলে শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে না।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে “জুলাই হত্যায় জড়িত দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করতে পারলেই শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে” শীর্ষক ছায়া সংসদে ঢাকা সিটি কলেজের বিতার্কিকদের পরাজিত করে বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল বাংলাদেশ এর প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম, অধ্যাপক এ কে এম মাজহারুল ইসলাম, সাংবাদিক বাবু কামরুজ্জামান, সাংবাদিক মো. আতিকুর রহমান ও সাংবাদিক মো. আব্দুল্লাহ আল রাফি। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।