আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ
৪৩তম বিসিএসে দুই হাজার ৬৪ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ বাতিলসহ ৪৪, ৪৫ ও ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষার সব প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর পদে ৮০৩ জন ও ৬৭ জন এএসপি নিয়োগও বাতিলের দাবি জানিয়েছে দলটি।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
তিনি বলেন, ‘পতিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের দোসর হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এবং ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর সম্প্রতি পদত্যাগকারী দলকানা পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) কর্তৃক সম্পূর্ণ দলীয় বিবেচনায় বিসিএস ৪৩তম ব্যাচের সুপারিশকৃত দুই হাজার ৬৪ জন প্রার্থীকে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিসিএসের বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।’
‘ব্যাপকভিত্তিক যাচাই-বাছাই না করে ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানে অসংখ্য প্রাণের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের এই সিদ্ধান্ত ও নিয়োগ প্রক্রিয়া দেশের মানুষকে চরমভাবে হতভম্ব ও হতাশ করেছে এবং জনমনে প্রচণ্ড ক্ষোভ ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের পক্ষ থেকে যেখানে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার জোর দাবি জানানো হচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে ৪৩তম বিসিএসের ঢালাও নিয়োগদানের মাধ্যমে সেই সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্যদের সরকারি প্রশাসনের উচ্চতর পদসমূহে পুনর্বাসন করার এই অন্তর্ঘাতমূলক সিদ্ধান্ত জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তার পরিপন্থী এবং কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
তিনি বলেন, আমরা জানতে পেরেছি হাসিনা সরকারের সময় ইতোমধ্যে ৪৪ তম বিসিএসের যে ৯০০০ জনকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়েছিলো- তার মধ্যে ৩০০০ জনের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। ৪৫তম বিসিএসের লিখিত উত্তরপত্রের মূল্যায়ন প্রায় শেষ পর্যায়ে। অপরদিকে ৪৬ বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে তিন মাস আগে। আমরা দাবি করছি রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে প্রবেশে ফ্যাসিবাদি আওয়ামী গোষ্ঠীর এবং সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের ক্যাডার বাহিনীকে নিবৃত্ত করার লক্ষ্যে এই তিনটি বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়াসমূহ পুরোপুরি বাতিল করা হোক। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে দ্বিতীয় স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে হলে ফ্যাসিবাদের দোসরদের যেকোনো মূল্যে রুখে দিতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে এ বিষয়ে আপোস করার বিন্দুমাত্র কোনো সুযোগ নেই।
সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছি, পতিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার তার ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করতে, পুলিশ প্রশাসনে তাদের নিরঙ্কুশ আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে বিদায় নেওয়ার পূর্বে পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর পদে মোট ৮০৩ জনকে নিয়োগ দেয়। আমরা জানতে পেরেছি এর মধ্যে ২০০ জনের বাড়িই গোপালগঞ্জ এবং ৪০৩ জনই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনকারীদের হত্যাকারী সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের সদস্য। শুধু তাই নয় এই নিয়োগে সাধারণ ধর্মীয় সংখ্যা-সাম্যতাও চরমভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে। শোনা যায়, সারদায় প্রশিক্ষণরত এই দলীয় সাব-ইন্সপেক্টরদের পাসিং আউট হবে আগামী ৩১ অক্টোবর, ২০২৪। যদি এ নিয়োগ বন্ধ করা না হয় তবে এদের মধ্য থেকেই তৈরি হবে ওসি প্রদীপ, ফরমান, মাজহার, মহসিনের মতো ফ্যাসিবাদের আরও বহু দোসর। আরও জানা যায়, সুদূরপ্রসারী নীল নকশার আওতায় আওয়ামী লীগ সরকার সর্বশেষ যে ৬৭ জন এএসপি নিয়োগ দিয়েছিল তারাও সবাই ছাত্রলীগের ক্যাডার। তাদের পাসিং আউট হবে সম্ভবত ২০ অক্টোবর। এদেরকে এখনই থামিয়ে না দিলে এরাই হবে আগামী দিনের বেনজীর, আসাদ, হাবিব, হারুন, বিপ্লব, মনিরুল, প্রলয় কুমার বা কৃষ্ণপদ। এদের নিয়োগ দিলে এরাই পতিত ফ্যাসিবাদকে পুনরুত্থানের পথ দেখাবে। আমাদের দাবি, দেশের গুরুত্বপূর্ণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কলঙ্কমুক্ত রাখতে এবং পুনরায় ফ্যাসিবাদের উত্থান রোধকল্পে অবিলম্বে এসব সাব-ইন্সপেক্টর ও এএসপিদের নিয়োগ বাতিল করা হোক।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সরকারি, আধাসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিসহ ১ম শ্রেণির বিভিন্ন নন-ক্যাডার পদে নতুন চাকরি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিলো, আমরা মনে করি এসব পদে যারা ইতোমধ্যে আবেদন করেছেন, তাদের পাশাপাশি আবেদনের সময়সীমা বাড়িয়ে নতুন করে আবেদনের সুযোগ দেওয়া হোক। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধি করার কারণে এ সুযোগ চাকরি প্রার্থীদের প্রতিযোগিতাকে আরও উন্মুক্ত করবে এবং যোগ্য ও মেধাবীদের নিয়োগের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। এতে সরকার যোগ্য ও মেধাবীদের সেবা পাবে, দেশ ও জাতি উপকৃত হবে।