বাংলাদেশ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীতে বিদ্যমান বৈষম্য ও অসঙ্গতি সমূহ দূরীকরণে তাদের ১১ দফা মেনে নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির কেন্দ্রীয় সভাপতি মোঃ মনিরুজ্জামান মনির। গতকাল ২১ আগস্ট বুধবার রেল ভবনে বাংলাদেশ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা দিনব্যাপী অবস্থান করে তাদের দাবি তুলে ধরেন। এ সময় উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর চীফ কমান্ড্যান্ট (পশ্চিম) মোহাঃ আশাবুল ইসলাম, কমান্ড্যান্ট (পাকশী) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, সাব—ইন্সপেক্টর (ঢাকা (জি) চৌকি) মোহাম্মদ ইমরান আহমেদ প্রমুখ। অবস্থান কর্মসূচির এক পর্যায়ে বাংলাদেশের রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার শাহাদত আলী উপস্থিত হয়ে তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ১১ দফা হলো— (১) বাংলাদেশের মহান সংবিধানের ১৫২ নং অনুচ্ছেদের আলোকে গঠিত শৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে বাংলাদেশ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী কে বেসামরিক শৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে অবশ্যই সংবিধান, রুলস অব বিজনেস— ১৯৯৬, এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কাজের ধরণ অনুসারে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রযোজ্য Allocation Among the Ministries as per Rules of Business-1996 (Revised upto 2017) মেনে বাহিনীর তত্ত্বাবধান ও সংস্থাপন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন দিতে হবে। সংবিধানের ১৫২ নং অনুচ্ছেদ এর আলোকে গঠিত শৃঙ্খলা বাহিনী কখনো সংস্থার অধীনে পরিচালিত হয় না এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আইন—২০১৬ এর ৮ এর ১ ধারা মোতাবেক বাহিনীর এ দায়িত্ব সরকার অর্থ্যাৎ মন্ত্রণালয়কেই দেয়া হয়েছে। (২) রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আইন—২০১৬, সংবিধান ও রুলস অব বিজনেস—১৯৯৬ এর সাথে সাংঘর্ষিক হলে সংবিধানকে প্রাধান্য দিয়ে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যগণকে সিভিল কর্মচারী হিসেবে বিবেচনা বন্ধ করতে হবে। কেন না সিভিল কর্মচারী পরিগণিত করলে সাপ্তাহিক ছুটি ০২ (দুই) দিন প্রযোজ্য হয়, কিন্তু রেলওয়ে বাহিনীর সদস্যরা সাপ্তাহিক ছুটি পায়না নৈমিত্তিক ছুটি পায় শুধু। (৩) প্রজাতন্ত্রের সকল শৃঙ্খলা বাহিনী রেশন ও ঝুঁকিভাতা পায়, এমনকি রেলওয়ে পুলিশ সহ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর শূন্য পদে এসে কাজ করা আনসার সদস্যগণও রেশন ও ঝুঁকিভাতা পায়। আইনের বিধান অনুগামী না হয়ে অধিদপ্তরের অধীন থাকায় রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীই এ সুবিধা পায় না। তাই বাহিনীকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে গিয়ে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর রেশন ও ঝুঁকিভাতা প্রাপ্তি নিশ্চিতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। (৪) প্রতিদিন ০৮ (আট) ঘন্টার বেশি চাকুরি করানো হলে অতিরিক্ত কর্ম ঘন্টার জন্য দ্বিগুণ হারে ওভার টাইম/অধিকাল ভাতা দিতে হবে। (৫) নিয়োগ বিধি সংশোধন করে প্রতি বছর শূন্য পদের বিপরীতে জনবল নিয়োগ করতে হবে এবং ০৩ (তিন) বছর পর পর শূন্য পদে নিয়মিত পদোন্নতি প্রদান করতে হবে। ডিপার্টমেন্টাল সদস্য থেকে অফিসার ও সদস্য পদ সমূহে ৭০% মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে। (৬) রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর মাঠপর্যায়ের “চেইন অব কমান্ড” কোনো সিভিল অফিসারের হাতে থাকবে না। চার্টার অব ডিউটি মেনে শুধু রেল সম্পত্তি সুরক্ষা জিএম মহোদয় এর নিকট দায়বদ্ধ থাকবে বাহিনীর কর্মকর্তাবৃন্দ। এসিআর, পদোন্নতি প্রকৃতি অন্যান্য শৃঙ্খলা বাহিনীর অনুরূপ পদ্ধতিতে হবে। (৭) আন্তঃবাহিনীর সমন্বয় পূর্বক রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি পদে বিদ্যমান বেতন বৈষম্য দূর করতে হবে। (৮) বিগত সামরিক শাসন আমলে জারীকৃত অধ্যাদেশ ২০১৬ সালে আইনে পরিণত হলে ও আইন বাস্তবায়নে কোনো বিধি প্রণয়ন করা হয়নি বিগত ০৮ (আট) বছরেও এমনকি ২০১৮ সালের পরে কোনো নিয়োগও সম্পন্ন করা হয়নি; জনবল ঘাটতির কারণে অতিরিক্ত ডিউটি করতে হয়; বিধায় সকল শূন্যপদ পূরণে দ্রুত নিয়োগ দিতে হবে। (৯) প্রতিটি চৌকি ও সার্কেলে শর্টগান, আধুনিক অস্ত্র সরবরাহসহ, অফিস, অস্ত্রাগার, হাজতখানা, সদস্যের জন্য আধুনিক আবাসন নির্মাণ এবং নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে হবে। (১০) ভোলাগঞ্জ সার্কেল সহ অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে বাহিনীর সদস্যগণকে প্রত্যাহার করতে হবে। (১১) সিকিউরিটি ম্যানুয়েল—১৯৮৫ অনুযায়ী চার্জ লেনদেন করতে হবে। এই ১১ দফা ছাড়াও দীর্ঘ ১৭ বছর যাবত ঢাকা কর্মরত রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ড্যান্ট শহিদ উল্লাহ কে অবিলম্বে বদলীর দাবি করা হয়।