মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার জাফরগঞ্জ নদী বন্দর হাটের খাজনা খাস আদায়ে লুটপাটের মহোৎসব চলছে। নামে মাত্র সরকারি কোষাগারে রাজস্ব জমা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে সরকার প্রতি বছর কমপক্ষে ১০ লাখ টাকায় রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। লুটপাটের বিষয়ে কথা বলতে গেলে এতো ছোটখাটো বিষয় দেখার সময় নেই বলে জানিয়েছেন শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলাল হোসেন। এদিকে, খাস আদায়ের নিযুক্ত ব্যক্তি নিয়েও ইউএনও ও তহশীলদারের একে অপরের দায়িত্ব বলে এড়িয়ে গেছেন। শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, তেওতা ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলা সন হিসেবে বিগত বছরগুলোতে ওই হাটে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা ইজারা দেয়া হতো। ১৪৩০ সালে ইজারা আহ্বান করা হলে সিন্ডিকেট করে আগের ইজারাদাররা কেউ অংশগ্রহণ করেননি। পরে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকার্তা জাহিদুর রহমান খাস আদায়ের সিদ্ধান্ত নেন। যুবলীগ নেতা ফারুক হোসেন ওই হাটের খাজনা খাস আদায় করেন। ওই বছর তিনি সরকারের কোষাগারে জমা দেন ৩ লাখ ৬২ হাজার ৫৮৫ টাকা। চলতি সনের ১ লা বৈশাখ (১৫ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ) ছাত্রলীগ নেতা জাকির হোসেন খাস আদায়ের দায়িত্ব নেন। গত ১২ই আগষ্ট পর্যন্ত তিনি খাজনা আদায় করেন। দেশের সরকার পতনের পর জাকির হোসেন গা ডাকা দিলে খাজনা আদায়ের দায়িত্ব দেয়া হয় তেওতা ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য হাবিবুর রহমান রিন্টুকে। এর আগে ৮ ই জুলাই পর্যন্ত জাকির হোসেন সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছেন ৮৮ হাজার ৭৫৫ টাকা। বাকি টাকা জমা দেননি তিনি। তথ্যানুসন্ধানে জাফরগঞ্জ নদী বন্দর হাটে খাজনা আদায়ের শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা জানান, প্রতি হাটে শুধু ছাগলের হাট থেকে ৫/৬ হাজার টাকা খাজনা আদায় করা হয়। অন্যান্য হাটে থেকে আরও ১০/১২ হাজার টাকার খাজনা আদায় করা হয়। এই টাকা থেকে প্রতি হাটে সাড়ে ১৫ হাজার টাকা অর্থাৎ সপ্তাহে ৩১ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার কথা বলে নিতেন জাকির হোসেন। এর উপরন্ত টাকা হাটে খাজনা আদায়ের শ্রমিকদের দেয়া হতো । কিন্তু এই ৩১ হাজার টাকার মধ্যে সরকারি কোষাগারে সপ্তাহে জমা দেয়া হতো সাড়ে ৭ হাজার টাকা। বাকি ২৪ হাজার টাকা লুটপাট করে আসছিল সংশ্লিষ্টরা। এ ব্যাপারে ফোনে যোগাযোগ করা হলে জাকির হোসেন সাংবাদিকদের সঙ্গে কোন কথা বলতে রাজি হননি। পরে তেওতা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশীলদার সাদিক আল মেহেদী বলেন, ‘ইউএনও স্যার ওই হাটের খাজনা আদায়ের ব্যক্তি নিযুক্ত করে দেন। তিনি সপ্তাহে সাড়ে ৭ হাজার টাকা জমা দেন। আগের জাকির হোসেন খাস আদায়ের দায়িত্বে ছিলেন। তার কাছে এখনও টাকা বকেয়া রয়েছে। এখন হাবিবুর রহমান রিন্টুকে দায়িত্ব দিয়েছেন ইউএনও স্যার।’ হাবিবুর রহমান রিন্টু বলেন, ‘ইউএনও স্যার আমাকে লিখিতভাবে ওই হাটের খাজনা খাস আদায়ের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।’ কিন্তু সপ্তাহে কত টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে? রহস্যজনক আচরণ করে তা বলতে চাননি তিনি। খাস আদায়ে লুটপাটের বিষয়ে তথ্যসংগ্রহ করতে গেলে শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলাল হোসেন বলেন,‘আমার এতো ছোটখাটো বিষয় দেখার সময় নেই। স্থানীয় তহশীলদারকে দায়িত্ব দিয়েছি। তিনি খাস আদায়ে ব্যক্তি নিযুক্ত করেন। কে কত টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেবেন তা নির্ধারিত নেই। আমি পরিদর্শনে গিয়ে কোন অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেব।’ খাস আদায়ে লুটপাটের বিষয় ও শিবালয় ইউএনও’র বক্তব্যের বিষয়টি মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক রেহেনা আক্তারকে জানানো হয়। তিনি বলেন,‘বিষয়টি খোজ নিয়ে দেখছি।’