রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ বীর আবু সাঈদের হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। গত শনিবার ১৮ আগষ্ট সকাল ১১টায় কবি হেয়াত মামুদ ভবনের সামনে মানববন্ধন করেছেন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা বলেন,আজ থেকে আমাদের হল খুলে দিয়েছে। ক্লাস চালু হয়েছে। কিন্তু আমরা শহীদ আবু সাঈদ ভাইয়ের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে পারবো না। আমরা ৪টি দাবি নিয়ে মানববন্ধন করছি। দাবি গুলো (১)শহীদ আবু সাঈদ এর হত্যাকান্ডের সঙ্গে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ বহিরাগত যারা যুক্ত ছিল তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে স্বাস্থ্যের দাবি জানাচ্ছি। (২) যারা হত্যার সঙ্গে জড়িতে ছিল না কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্নভাবে উস্কানিমূলক কথা বলে ছাত্রদের হত্যার রূপ দিয়েছে তাদেরকে জনসমক্ষে এসে সাধারণ ক্ষমা চাইতে হবে। (৩) শিক্ষক সমিতি এবং প্রশাসনের নীরবতার দায় নিয়ে পথ ধারে সকল শিক্ষকের পদত্যাগ করতে হবে। (৪)আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশাসন ও শিক্ষকদের দ্বারা ভবিষ্যতে কোন সৈরাচারীতার স্বীকার হতে না হয় এই মর্মে প্রশাসনকে লিখিত দিতে হবে। ইংরেজি বিভাগের প্রধান আসিফ আল মতিন বলেন,আমরা ১৮ জুলাই লিখিত আকারে প্রশাসনিক বিভাগসহ কয়েকটি বিভাগে জবাবদিহিতা চেয়েছি। কিন্তু পদপদবি ফাঁকা হওয়ায় আমরা আর কোন উত্তর পায়নি। যতক্ষণ আমাদের বন্ধু,ভাই রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার সাথে জড়িত খুনিদের বিচারের আওতায় আনা হবেনা ততক্ষণ আমরা ক্লাস করবোনা। এদিকে শহীদ আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার এক মাস পর ১৭ জনের নাম উল্লেখ্য করে হত্যা মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় আসামি করা হয়েছে রংপুর মহানগর পুলিশের ২ কর্মকর্তাসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তা, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী, বেরোবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৩০/৩৫ জনকে। শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রংপুর চিফ জুডিসিয়াল আদালতে মামলার আবেদন করেন আবু সাঈদের বড়ভাই রমজান আলী। আদালতের বিচারক রাজু আহমেদ বাবু মামলাটিকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের জন্য তাজহাট থানাকে নির্দেশ দেন। মামলার আবেদনে আসামিদের মধ্যে নাম উল্লেখ করা হয়েছে মহানগর পুলিশের এএসআই আমির আলী, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, বেরোবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, কোতোয়ালি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান, পরশুরাম জোনের সহকারী কমিশনার আল ইমরান হোসেন, উপ-পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের কর্মকর্তা রাফিউল হাসান রাসেল, গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মশিউর রহমান, লোক প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আসাদুজ্জামান মন্ডল, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্প ইনচার্জ এসআই বিভূতিভূষণ, তাজহাট থানার ওসি রবিউল ইসলাম, বেরোবি শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ধঞ্জয় কুমার টগর, দপ্তর সম্পাদক বাবুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শামীম মাহফুজ মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, রংপুর রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি মো. আব্দুল বাতেন, পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ মামুনসহ অজ্ঞাতনামা আরো ১৫০ জনকে। বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রায়হানুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ১৭ জনের নাম এজাহারে উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৩০-৩৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। আদালত মেট্রোপলিটন তাজহাট থানাকে ‘ট্রিট ফর এজাহার’ হিসেবে গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছে। পুলিশ চাইলে আসামিদের যেকোনো সময় গ্রেপ্তার করতে পারবে। তবে যেহেতু পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে তাই জুডিশিয়াল ইনকোয়ারির জন্য আদালতকে জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।