ছয় বছর বয়সেই বাবাকে হারালো সাম্মি। স্বামী হারা হলেন মেঘলা বেগম (৩১)। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন মো. শামসু মোল্লা (৬২)। গত ৫ আগস্ট বিকেলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন শামসু। শামসুকে হারিয়ে গভীর সংকটে পড়ে গেছে মা ও মেয়ে। কি ভাবে চলবে তাদের তাদের আগামী দিনগুলি। মা ও মেয়ের সাথে এ শঙ্কা রয়েছে এলাকাবাসীর মধ্যেও। গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় একদল ব্যক্তি ফরিদপুর কোতয়ালী থানার আক্রমণ করতে গেলে পুলিশ গুলি চালায়। এ গুলিতে নিহত হন পথচারী শামসু। গুলিটি তার নাক ও ঠোটের মাঝ দিয়ে ঢুকে মাথার পিছন দিয়ে বের হয়ে যায়। এরপর পুলিশের সাথে ব্যাপক সংঘর্ষ হয় থানা ঘেরাও করতে যাওয়া ব্যক্তিদের। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও মুহু মুহু গুলি ছুড়ে। প্রায় ঘন্টাব্যাপী এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গুলিতে থানারোড সংলগ্ন বাদামপট্টি সড়কে বই পরিচয় নামের লাইব্রেরির সামনে এক ঘন্টার বেশি সময় ধরে পড়ে ছিলেন শামসু। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা এসে সড়কে পড়ে থাকা শামসুর দেহ উদ্ধার করে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। শামসুকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। শামসু শহরের পূর্ব খাবাসপুর মহল্লা এলাকার বাসিন্দা মৃত মোবারক মোল্লার ছেলে। তিনি ফরিদপুরে একটি পরিবহন বাসের চালক ছিলেন। সম্প্রতি শামসুর বাড়িতে গিয়ে মা-মেয়ে ও প্রতিবেশীদের আহাজারির এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য দেখা যায়। স্ত্রী মেঘলার কান্না আর থামছে না। পাশে মাকে ঘেষে ভাবলেশহীন উদাস ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে মেয়ে সাম্মি। মেঘলা বেগম কাঁদতে কাঁদতে অস্ফুট কন্ঠে বলতে থাকেন, ওনার আয়েই সংসার চলতো এখন আমাদের কি হবে কে দেখবে। মাকে জড়িয়ে ধরে ছিল মেয়ে সাম্মি। বাবা না ফেলার দেশে চলে গেছে আর ফিরে আসবে না এ কথা এখনও বুঝতে পারেনি সাম্মি। তবুও ঘটনার পর থেকে সেও কেঁদে যাচ্ছে জানান প্রতিবেশিরা। কাঁদতে কাঁদকে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মেঘলা বেগম জানান, সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল চারটার দিকে তিনি ও শামসু একত্রে বাড়ি থেকে বের হন। তিনি পথে দেবরের বাড়িতে যান। আর শামসু যান একটু ঘুরে আসতে। মেঘলা বেগম বলেন, ‘এই একটু ঘুরতে যাওয়া লোকটি ফিরে এলো লাশ হয়ে। আমার এখন কি হবে, আমার মেয়েকে কে দেখবে। কি হবে ওর লেখাপড়ার।’ মেঘলা বেগম যখন কথাগুলি বলেযাচ্ছিলেন তখন তার পাশে প্রতিবেশি নারীরা ভির করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কারও মুখে সন্তানা দেওয়ার যেন কোন ভাষা ছিল না। মেঘলা বেগমের আহাজারির পাশাপাশি কান্নাজড়িত কথাগুলি শুনে সকলেই যেন হয়ে পড়েন বাকরুদ্ধ। কথা হয় নিহত শামসুর শাশুড়ী ও মেঘলা মা ফুলি বেগমের (৫৬) সাথে। ফুলি বেগম বলেন, আমি বুঝতে পারছি না মেঘলা ও তার সন্তান কিভাবে বাঁচবে, কে দেখবে। নয় বছর আগে বিয়ে হয়েছে মেঘলার। এই অল্প বয়সে স্বামীকে হারাল। আমরাও গরিব মানুষ। আমাদের বাড়িতে নিয়ে যে মা ও মেয়েকে রাখবো তার সামর্থও নেই।