ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ৭ নং চিলারং ইউনিয়নের আখানগর গ্রামের নজরুল ইসলাম স্বপন যাকে নেংড়া (ন্যাংড়া) স্বপন নামেই মানুষ চিনে। নব্বই দশকের শেষের দিকে ঠাকুরগাঁও শহরের নিউ মার্কেট থেকে মাল কিনে গ্রামের হাট বাজারে ফেরি করে সাইকেলে হকারি করে এবং বড় ভাই মাহমুদ আলীর সিঙ্গার শোরুমে চাকুরির সুবাদে দালালি করে জীবিকা নির্বাহ করতো। স্বপনের বাবা আব্দুল হক ওয়াপদার অপারেটর হওয়ার সুবাদে আখানগর রেলস্টেশনের পশ্চিম পার্শ্বে ওয়াপদার কোয়ার্টারে বসবাস করতো। তাদের আদত বাড়ি নোয়াখালী। ৫ ভাইয়ের মধ্যে ন্যাংড়া স্বপন চতুর্থ। লেখাপড়া খুব একটা করতে পারেনি আখানগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৭ম শ্রেণী পাশ করার পর অভাবে তাড়নায় লেখাপড়ার সিলেবাস টুটে যায়, কিন্তু ২০১০ সালের পর বাংলাদেশ উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাসের সার্টিফিকেট অর্জন করে। পরবর্তীতে ন্যাংড়া স্বপন আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে রাতারাতি শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জামাত ও ৪ দলীয় জোট প্রার্থী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে কাজ করেন এই স্বপন। ঐ নির্বাচনে তাঁর ওয়ার্ডের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে বাঁধা দেওয়ার ঘটনা ঘটিয়ে আলোচনায় আসে সে। এরপর ২০০৫ সালের আওয়ামী লীগ নেতা রমেশ চন্দ্র সেনের হাত ধরে আওয়ামী লীগের নেতা বনে যাওয়া এই দূর্বৃত্ত রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে বটগাছে বনে যান। এক এগারোর পর ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা রমেশ সেন সাংসদ নির্বাচিত হওয়ায় পর ভাগ্য খুলতে শুরু করে হকার স্বপনের। সাংসদের ব্যক্তিগত কর্মচারী হয়ে টিআর, কাবিখা, কাবিটা,নিয়োগ বানিজ্য, বিভিন্ন প্রকল্পে কমিশন গ্রহণের মাধ্যমে শত কোটি টাকার মালিক বনে যায়। বে-সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো নীতিমালা- ২০২১ অনুযায়ী নব সৃষ্ট পদ সমূহে সদরের ১৯০ টি প্রতিষ্ঠান থেকে শুধু ন্যাংড়া স্বপনের পকেটস্থ হয়েছে ৫ কোটি টাকার মতো। স্বপ্নকে নিয়ে রয়েছে নানা মুখরোচক কাহিনি। এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে নারী সরবরাহকারী হিসেবে সে কামিয়েছে কোটি কোটি টাকা। কোর্টের প্রয়াত মুহুরি নির্মলের স্ত্রী মুক্তা রাণীকে সাংসদের মক্ষীরানি হিসেবে উপহার দিয়েছেন এবং আরও মনোরঞ্জনের জন্য সদর উপজেলার জগন্নাথপুর এলাকায় ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের জনৈক চিকিৎসকের রিসোর্টে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নারীদেরকে এমপি’র উপঢৌকনের বিনিময়ে চাকরি হাতিয়ে নিয়ে স্বপন অঢেল বিত্তবৈভবের মালিক বনে গেছেন। আখানগর ও চিলারং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা এই প্রতিনিধিকে বলেন, টাকার বিনিময়ে নিয়োগ বাণিজ্য সহ মামলা মোকদ্দমার তদবির বানিজ্য করে রাতারাতি বদলে যায় স্বপনের জীবন যাপন। ঠাকুরগাও শহরের গোয়ালপাড়া, দিনাজপুরের ঈদগাঁ বস্তি, শ্বশুর বাড়ি আদর্শগ্রাম নোয়াপাড়ায় (বীরগঞ্জ) ২০ বিঘা আবাদি জমি, রংপুরের মুলা টোলে পৃথক তিনটি বহুতল বাড়ি সহ ঢাকার জাপান গার্ডেন সিটি ও বসুন্ধরা এলাকায় তিনটি ফ্ল্যাটের মালিক স্বপন ও তাঁর স্ত্রী। আখানগর বাজারে অন্যের জমি দখল করে মার্কেট নির্মাণ, সত্তর বিঘা আবাদি জমি যার মুল্য প্রায় সাড়ে দশ কোটি টাকা সবকিছু তিনি কিনেছেন গত আঠারো বছরে। ঠাকুরগাঁও রোডের ফেয়ার ইলেকট্রনিকসের মালিক রাজু’র সাথে কথা বলে জানা গেছে , ২০০৫ সালেও ন্যাংড়া স্বপন তাঁর টিভি ফ্রীজ বিক্রির দালালির সাথেও যুক্ত ছিল। রাতারাতি বদলে যাওয়া স্বপনের সাথে অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তার ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি তবে তার স্ত্রী এ প্রতিনিধিকে সংবাদ না করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে বলেন, এসব অভিযোগ ঠিক নয়। অপর একজন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা আক্ষেপ করে বলেন,” এই স্বপন হরিজন সম্প্রদায়ের সংগঠন বাদে ঠাকুরগাঁওয়ের প্রায় প্রত্যেকটি সংগঠনের সদস্য পদ লাভ করেন, যা খুবই দুঃখ জনক। ” এলাকাবাসী অবিলম্বে রাজনীতিকে ব্যবহার করে রাতারাতি শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া স্বপনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।