বগুড়ায বিএনপি অফিস ভাঙচুর ও হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্থানীয় তিন সাবেক সংসদ সদস্যসহ আওয়ামী লীগের ৩৪৪ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৭৮০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বগুড়ায় জেলা জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কার্যালয় ভাংচুর, লুট এবং পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ১৪১ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২০০জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল বগুড়া জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছামছুল আলম বাদী হয়ে ১৫ ই আগস্ট বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বগুড়া সদর থানায় এই মামলাটা দায়ের করেন। এই মামলায় বগুড়া জেলা যুবলীগের সভাপতি ও বগুড়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শুভাশীষ পোদ্দার লিটনকে এক নম্বর আসামী করা হয়েছে। অন্যান্যদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাসুদুর রহমান মিলন, বগুড়ার কাহালু, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলা পরিষদের ৩ চেয়ারম্যান যথাক্রমে আল হাসিবুল হাসান সুরুজ, মিনহাদুজ্জামান লীটন এবং আসিফ ইকবাল, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট নরেশ মুখার্জী, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন নবাব ও জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ডাবলুকেও আসামী করা হয়েছে। এর আগে বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষক সেলিম হোসেন নিহতের ঘটনায় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ১০১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) দিবাগত রাত ১২টা ১০মিনিটে নিহতের বাবা সেকেন্দার আলী বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় এ মামলা করেন। মামলায় শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরকে হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে এবং অজ্ঞাতপরিচয় ৩৫০ জনকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৪ আগস্ট সেলিম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বগুড়ার সাতমাথায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হন। তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এর আগে বগুড়া জেলা বিএনপি কার্যালয়ে হামলা, ভাংচুর ও ককটেল নিক্ষেপের অভিযোগে স্থানীয় সাবেক ২ সংসদ সদস্য বগুড়া-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মজিবর রহমান, বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান সহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বসহ মোট ৮২ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও ২০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিএনপি বগুড়া জেলা কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক রহিমা খাতুন গত বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) বগুড়া সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেন। বিএনপি নেত্রী রহিমা খাতুন তার দাখিল করা এজাহারে অভিযোগ করেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকালে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে গত ১৬ জুলাই সন্ধ্যা পৌণে ৭টার দিকে শহরের নওয়াববাড়ি সড়কে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে হামলা চালান। হামলাকারীরা ওই কার্যালয়ের তালা ভেঙ্গে চেয়ার টেবিল, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন আসবাব ভাঙচুর করে।এক পর্যায়ে তারা কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এদিকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর আনন্দমিছিলে বগুড়ার সোনাতলায় স্কুলছাত্র সাব্বির নিহতের ঘটনায় সাবেক এক এমপিসহ ২০ জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ১৫ ই আগস্ট বৃহস্পতিবার রাতে সাব্বিরের বাবা শাহীন আলম বাদী হয়ে সোনাতলা থানায় মামলাটি করেন। এ মামলায় আরও ৩০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। মামলায় হত্যার নির্দেশদাতা উল্লেখ করে বগুড়া-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নানকে আসামি করা হয়। মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে উল্লেখ করা হয়, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর ৫ আগস্ট বিকেলে এলাকায় আনন্দমিছিল বের করা হয়। দিগদাইড় ইউনিয়নের শিহিপাড়ায় ছাত্র-জনতার আনন্দমিছিলে হামলা হয়। এ সময় আনন্দমিছিলে যোগ দেওয়া স্কুলছাত্র সাব্বির হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করেন আসামিরা। ১৬ ই আগস্ট শুক্রবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বগুড়া সোনাতলা থানার অফিসার ইনচার্জ বাবু কুমার সাহা৷ বগুড়া সদর থানার ওসি সাইহান ওলিউল্লাহ জানান, দু’টি মামলায় ২জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে,পৃথক তিনটি মামলার সকল আসামিদের গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে।