খুলনার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালত এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সম্প্রতি কর্মচারী নিয়োগে পক্ষপাতদুষ্টের অভিযোগ উঠেছে। এ দুই আদালতের ৬৬টি পদের বিপরীতে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সুপারিশে নিয়োগ পেয়েছেন ২২ জন। এ নিয়ে খুলনার আদালতপাড়ায় চলছে ক্ষোভ। চাকরিবঞ্চিতরা পুনরায় নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন। আদালত সূত্রে জানা যায়, খুলনা মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালত এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সম্প্রতি ৬৬ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ২৪ মে লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। এরপর কয়েক ধাপে নেওয়া হয় মৌখিক পরীক্ষা। এসব নিয়োগে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়োগদানের ক্ষেত্রে ব্যাপক চাপ প্রয়োগ করা হয়। সেসময় নিজ জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বেকার যুবকদের নিয়োগ দিতে তালিকা পাঠিয়ে দেন আইনমন্ত্রী। সেখানে তিনি ৫০ জনকে নিয়োগ দিতে চাপ প্রয়োগ করেন। সেই তালিকা অনুযায়ী নিয়োগ না দিলে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হবে বলেও হুমকি দেন। এ নিয়ে খুলনায় আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যেও বিভক্তি তৈরি হয়। পরে স্থানীয় নেতারা তৎকালীন আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে তার পাঠানো তালিকা সংশোধনের মাধ্যমে ছোট করা হয়। এ দুই নিয়োগে আইনমন্ত্রীর ২২ জনকে নিয়োগ দিতে বাধ্য করা হয়। এছাড়াও খুলনার শেখবাড়ি হিসাবে পরিচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাইদের সুপারিশে ১০ জন, খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের সুপারিশে দুইজন এবং খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির তৎকালীন সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলামের সুপারিশে ২ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব নিয়োগে ১৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে। সূত্র জানায়, ৭ জুলাই থেকে এসব পদে নিয়োগপ্রাপ্তদের কর্মস্থলে পদায়ন করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাঝামাঝি পর্যায় থেকে কয়েকজন চাকরিবঞ্চিত যুবক এ নিয়ে আন্দোলন করে আসছেন। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি। খুলনা মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে ৭টি পদে ২৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে শুধু সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নিজ জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৯ জন, খুলনার ৯ জন, সাতক্ষীরা ও বরিশালের ২ জন এবং রংপুর জেলার একজন নিয়োগ পেয়েছেন। অপরদিকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতেও ৭টি পদে নিয়োগ পেয়েছেন ৪২ জন। এর মধ্যে শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ১৩ জন, খুলনার ১৭ জন, বাগেরহাটের তিনজন এবং সাতক্ষীরার ২ জনসহ বাকিরা অন্যান্য জেলার। হাফিজুর রহমান নামে এক পরীক্ষার্থী বলেন, ‘আমি এত ভালো পরীক্ষা দিয়েছিলাম যে, হল থেকে বের হয়ে ঘোষণা করেছিলাম চাকরি হবে। ফল বের হওয়ার পর মেধাতালিকায় নাম না দেখে যারপরনাই বিস্মিত হয়েছি। তখনই বুঝেছিলাম, এদেশে মেধার মূল্যায়ন নেই।’ আনোয়ার হোসেন নামে অপর এক পরীক্ষার্থী বলেন, ‘আমার মতো অনেকেই ভালো পরীক্ষা দিয়েও চাকরি পাননি। নিয়োগ হচ্ছে খুলনায়, অথচ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিয়োগ পেয়েছে এক-তৃতীয়াংশ। দেশের শাসনব্যবস্থা কতটা এককেন্দ্রিক হলে এমনটা হতে পারে, সেটা আপনারাই অনুমান করতে পারেন। আমি এ নিয়োগ পুনরায় দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’ দুই আদালতের নিয়োগ প্রক্রিয়াকে অবৈধ দাবি করে খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির অ্যাডহক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট নুরুল হাসান রুবা বলেন, এ নিয়োগ প্রক্রিয়া অবৈধ ও অনৈতিক। স্থানীয় নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার মূল্যায়ন করার বিকল্প নেই। তিনি এ নিয়োগ পুনরায় প্রদানের দাবি জানান। সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোল্লা মশিউর রহমান নান্নু বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলীয় প্রভাব বিস্তার এমন পর্যায়ে গিয়েছিল যে, সাধারণ ছাত্রদের মেধার মূল্যায়ন ছিল না। যার প্রমাণ মিলেছে সম্প্রতি দেওয়া এ দুটি নিয়োগের ক্ষেত্রে।’