সোনাইমুড়িতে নতুন গ্যাসকূপের সন্ধান মিলেছে। উপজেলার অম্বরনগর ইউনিয়নে খননকৃত বেগমগঞ্জ-৪ (পশ্চিম) কূপের তিনটি স্তরে মিলেছে জ্বালানি গ্যাস। দেশের গ্যাস সংকট মোকাবেলায় দেশীয় জ্বালানির উৎস অনুসন্ধানে সরকারের চলমান কাজের অংশ হিসেবে এই খননকাজ চালানো হয়। এই কূপ থেকে দৈনিক ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে বলে ধারনা করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)। সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় গ্যাসকূপ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাপেক্সের ভূ-পদার্থিক বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার হাওলাদার ওহিদুল ইসলাম। বাপেক্স জানায়, সোনাইমুড়ীর অম্বরনগর ইউনিয়নের ওয়াছেকপুর গ্রামে খননকৃত বেগমগঞ্জ-৪ (পশ্চিম) কূপে মিলেছে গ্যাসের সন্ধান। ২০২৪ সালের ২৯ এপ্রিল শুরু হওয়া খননকাজ শেষ হয়ে ডিএসটি টেস্ট শেষে এখন চলছে সর্বনিম্ন স্থরের উৎপাদন টেস্ট। প্রাথমিকভাবে কূপটির তিনটি স্তরে গ্যাসের অস্তিত্ব মিলেছে। উৎপাদন টেস্ট শেষে জানা যাবে এখানে মজুতকৃত মোট গ্যাসের পরিমাণ।বাপেক্স সূত্রে জানা যায়, কূপটিতে ৩ হাজার ১১৩ মিটার গভীর পর্যন্ত খনন করা হয়। যার মধ্যে ১ হাজার ৯২১ থেকে ১ হাজার ৯৭৩ মিটার পর্যন্ত প্রথম স্তর, ২ হাজার ৫৪৮ মিটার থেকে ২ হাজার ৫৮৫ মিটার পর্যন্ত দ্বিতীয় স্তর এবং ৩ হাজার ৮১ মিটার থেকে ৩ হাজার ১০১ মিটার পর্যন্ত তৃতীয় স্তরে গ্যাস মিলেছে। হাওলাদার ওহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের লক্ষ্যমাত্রা থেকে বেশি গ্যাস মিলতে পারে বলে ধারণা করছি। এখন পর্যন্ত টার্গেটকৃত চারটি জোনের মধ্য থেকে তিনটি জোন থেকে বানিজ্যিকভাবে গ্যাস উত্তোলন করা যাবে বলে আশা করছি। বাপেক্সের ভূতাত্ত্বিক বিভাগের মহাব্যবস্থাপক শামসিয়া মুক্তাদির বলেন, প্রাকৃতিক গ্যাসের সন্ধানে বাপেক্স দীর্ঘদিন থেকে কাজ করে আসছে। বেগমগঞ্জ-৪ (পশ্চিম) কূপটি গত ২৯ এপ্রিল খননকাজ শুরু হয়। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল না থাকায় আমাদের খননকাজেও কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। দিনশেষে আমরা সফল হতে পেরেছি। কূপে গ্যাসের মোট পরিমাণ জানতে আরও কিছু সময় লাগবে। বেগমগঞ্জ-৪ (পশ্চিম) মূল্যায়ন কাম উন্নয়ন কূপের প্রকল্প পরিচালক মো: প্রিন্স আল হেলাল বলেন, এখান থেকে প্রতিদিন ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ করার লক্ষমাত্রা ছিল। তবে লোয়ার জোনে গ্যাসের কন্ডিশন দেখে মনে হচ্ছে আরও বেশি কিছু করা যাবে। উৎপাদন টেস্ট শেষে মোট গ্যাসের মজুত সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। ড্রিলিং ইনচার্জ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, এটি খনন করতে আমাদের
নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়েছে। সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে আমরা আজ আলোর মুখ দেখেছি। একসময় গ্যাসকূপ খননের কাজে বিদেশি শ্রমিক ও কর্মকর্তারা যুক্ত থাকতো। তবে এখন তার পরিবর্তন হয়েছে। এই কূপ খননের সঙ্গে জড়িত প্রায় দুই শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই বাংলাদেশের। এটাও আমাদের জন্য অনেক আনন্দের। এর আগে ১৯৭৬ সালে বেগমগঞ্জ-১ ও ১৯৭৮ সালে বেগমগঞ্জ-২ গ্যাসকূপ খনন করা হলেও সেগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব হয়নি। ২০১৪ সালে বেগমগঞ্জ-৩ কূপ খনন করা হয় এবং সেখান থেকে এখনও প্রতিদিন ৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ফেনী- নোয়াখালী-লক্ষীপুর আঞ্চলিক সঞ্চালন লাইনে সরবরাহ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এখানে বেগমঞ্জ-৫ ও বেগমঞ্জ-৬ কূপ খননের পরিকল্পনা রয়েছে বাপেক্সের।