বরিশালে চেকপোস্টে দায়িত্বরত শিক্ষার্থীদের গণধোলাইয়ে রাসিব আকন (১৯) নামে এক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। তিনি বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাত ইউনিয়নের ইউনুস আকনের ছেলে। রাসিব পেশায় নলকূপ স্থাপনের শ্রমিক ছিলেন। গতকাল মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) নগরীর হাতেম আলী চৌমাথা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। জানা যায়, মঙ্গলবার ভোরে চৌমাথা এলাকায় রাসিবের সঙ্গে ছুড়ি পাওয়ার অভিযোগ তুলে আটক করে শিক্ষার্থীর। বেধরক মারধর শেষে অচেতন অবস্থায় বেলা ১১টায় কোতয়ালী মডেল থানায় নিয়ে যায়। এরপর পুলিশের পরামর্শে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি মডেল থানার সহকারী কমিশনার নাফিসুর রহমান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, ভোরের দিকে নগরীর নথুল্লাবাদ থেকে রাসিব ব্যাটারিচালিত রিকশায় হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা এলাকায় পৌঁছালে তাকে তল্লাশি করা হয়। এ সময় রাসিবের কাছে একটি চাকু ও দা পাওয়া যায়। পরে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে ডাকাত সন্দেহে তাকে গণধোলাই দেওয়া হয়। কোতোয়ালি মডেল থানার সাব-ইন্সপেক্টর মো. মাইনুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের বরাতে জানান, রাসিব হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা এলাকা অতিক্রমকালে শিক্ষার্থীরা তাকে তল্লাশি করে। এ সময় রাসিবের কাছে একটি চাকু ও দা পাওয়া যায়। যা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে রাসিবের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। পরে ডাকাত সন্দেহে তাকে গণধোলাই দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, রাসিবকে শিক্ষার্থীরা কোতোয়ালি মডেল থানায় নিয়ে গেলে তার অবস্থা মুমূর্ষু দেখে হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত রাসিবের মা শিউলী বেগম বলেন, বাবার সঙ্গে সিলেটে গভীর নলকূপ স্থাপনের কাজ করে রাসিব। সোমবার সন্ধ্যা সাতটায় সিলেট থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পরে বরিশাল শহরের চৌমাথায় তাকে ছাত্ররা আটকায়। তার কাছে নাকি চাকু পেয়েছে। আমি কোতয়ালি মডেল থানায় গিয়ে ছেলেকে পেয়েছি। তখন একটু পানি খেতে চাইছিলো রাসিব। পানি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটা আমার মারা গেছে। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই। তবে শিক্ষার্থীদের দাবি, উৎসুক জনতার গণধোলাইয়ে রাসিবের মৃত্যু হয়েছে। সরকারি সৈয়দ হাতেম আলি কলেজের শিক্ষার্থী শেখ সাফায়েত জানান, নগরীর চৌমাথা এলাকায় একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা তল্লাশি করার সময় একজনকে সন্দেহ হয়। তখন তার ব্যাগ তল্লাশি করলে জামাকাপড়ের নিচ থেকে একটি চাকু ও দা পাওয়া যায়। এ সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। তখন সেখানে উপস্থিত সাধারণ মানুষ তাকে ডাকাত ভেবে মারধর করে। শিক্ষার্থীরা তাকে উদ্ধার করে কোতয়ালি মডেল থানা ও পরে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। কোতোয়ালি মডেল থানার সহকারী পুলিশ কমিশনার নাফিসুর রহমান জানান, এই বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। বিস্তারিত তদন্ত করে বলা যাবে।