শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলের সমাপ্তি ঘটেছে স্বৈরশাসকের তকমা নিয়ে। সাবেক সরকারপ্রধানের একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে গুলি করে হত্যা; অবশেষে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা খাদের কিনারায় নিয়ে গেছে দেশের সব থেকে পুরনো রাজনৈতিক দলটিকে। বর্তমানে দলের সভাপতিসহ কেন্দ্রীয়, থানা ও ওয়ার্ডসহ সব পর্যায়ের নেতাকর্মীই পলাতক। এ অবস্থায় রাজনীতির মাঠে কোণঠাসা দলটি।
সরকার পতনের কারণে রাজনৈতিকভাবে ভেঙে পড়া দলটিকে আবারও চাঙা করতে এবং সকল নেতাকর্মীকে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন দলের হাইকমান্ড। এ ক্ষেত্রে ১৫ আগস্ট শোক দিবস ঘিরে পরিকল্পনা সাজিয়েছে আওয়ামী লীগ। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ দিন ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু ভবন ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে দলটি। এ ছাড়া সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ এতে অংশ নেবেন বলে প্রত্যাশা আওয়ামী লীগের। শ্রদ্ধা জানানো হবে ১৫ আগস্টে নিহত বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের প্রতি। গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধে বিশেষ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে তীব্র গণ-আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। ফলে আওয়ামী লীগের টানা দেড় দশকের শাসনের অবসান ঘটে। ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের কাছে পরাজয়ের পর ২০০৯ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আবারও ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর ২০১৪, ২০১৯ ও ২০২৪-এর নির্বাচনে জয়লাভ করে টানা চারবার সরকার গঠন করে দলটি। যদিও শেষ তিন মেয়াদের নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে দেশে-বিদেশে।
সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের এক সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে আমাদের কর্মসূচি থাকবে। আমরা জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাব। ওই দিন আমরা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা এবং বনানীর কবরস্থানে ১৫ আগস্টে নিহত বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাব। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলো দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করবে। এতে আমাদের দলের নেতাকর্মীরা অংশ নেবেন।’
তিনি আরও বলেন, আমাদের নেত্রী ভালো আছেন। তিনি সকল নেতাকর্মীকে সক্রিয় হতে নির্দেশ দিয়েছেন। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচিতে মানুষের ঢল নামানোর জন্য তাগিদ দিয়েছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়াসহ সহিংসতার শিকার ক্ষতিগ্রস্তদের আইনি পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে, সম্প্রতি একটি অডিও বার্তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি সাম্প্রতিক সময়ের বলে নিশ্চিত করেছেন দলের একাধিক নেতা। অডিও বার্তায় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘সবাই ঢাকায় চলে আসবে, মৌনমিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধু ভবনে ফুল দিতে হবে। বাংলাদেশের সব এলাকা থেকে ঢাকায় এসে ফুল দিতে হবে। যাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে তাদের থানায় জিডি করতে হবে।’
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে তীব্র গণ-আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। ফলে আওয়ামী লীগের টানা দেড় দশকের শাসনের অবসান ঘটে। ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের কাছে পরাজয়ের পর ২০০৯ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আবারও ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর ২০১৪, ২০১৯ ও ২০২৪-এর নির্বাচনে জয়লাভ করে টানা চারবার সরকার গঠন করে দলটি। যদিও শেষ তিন মেয়াদের নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে দেশে-বিদেশে।
অপর একটি সূত্র জানায়, দলীয়ভাবে সংগঠিত হতে না পারলেও আগামী ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু ভবনে শ্রদ্ধা নিবেদনের কর্মসূচি পালন করবেন বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ। সাংস্কৃতিক অঙ্গন, সাংবাদিক, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতি সহানুভূতিশীল এমন সাধারণ নাগরিকদের এ কর্মসূচিতে যোগদানের আহ্বান জানানো হবে। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে জমায়েত বড় করতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেকেই কাজ করছেন বলে জানিয়েছে বিভিন্ন সূত্র।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ১৫ আগস্টের কর্মসূচি পালন করবেন। এ দিন কালো ব্যাজ ধারণ ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা, মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হবে। সরকারে না থাকলে যে দল থাকবে না, এটি ঠিক নয়। আমরা আগামীতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামব। নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা হলে দেখবেন আওয়ামী লীগ নির্বাচনের মাঠ দখলে নিয়েছে। সাময়িক সময়ের জন্য আমরা রাজপথ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছি, তারপরও আমরা সক্রিয়। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে।
যুবলীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ১৫ আগস্ট আমরা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচি পালন করব।
এদিকে, দেশে গণবিক্ষোভের মুখে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। তার দাবি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিলেই দেশে ফিরবেন তার মা।
অন্যদিকে, ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিদেশি শক্তিকে দায়ী করেছেন।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘আমি ক্ষমতায় থাকতে পারতাম যদি আমি সেন্ট মার্টিন ও বঙ্গোপসাগর আমেরিকার কাছে ছেড়ে দিতাম। আমি পদত্যাগ করেছি যাতে আমাকে লাশের মিছিল দেখতে না হয়। তারা আপনাদের (ছাত্রদের) লাশের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল, আমি তা করতে দিইনি। হয়তো আজ যদি আমি দেশে থাকতাম তাহলে আরও প্রাণহানি হতো, আরও সম্পদ ধ্বংস হতো।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ১৫ আগস্টের কর্মসূচি পালন করবেন। এ দিন কালো ব্যাজ ধারণ ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা, মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হবে। সরকারে না থাকলে যে দল থাকবে না, এটি ঠিক নয়। আমরা আগামীতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামব। নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা হলে দেখবেন আওয়ামী লীগ নির্বাচনের মাঠ দখলে নিয়েছে। সাময়িক সময়ের জন্য আমরা রাজপথ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছি, তারপরও আমরা সক্রিয়। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে।