পুলিশে সংস্কারের দাবিতে কর্মবিরতিসহ সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন আন্দোলনরত পুলিশ সদস্যরা। সোমবার (১২ আগস্ট) থেকে তারা সবাই কাজে যোগ দেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে বৈঠকের পর নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
দাবি বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে কর্মরত পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সানতু মোবাইল ফোনে ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে সাইফুল ইসলাম সানতু বলেন, নানা দাবি দাওয়া নিয়ে পুলিশের বড় একটি অংশ কর্মবিরতিতে ছিল। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে পুলিশ সদস্যদের পক্ষ থেকে পুলিশ বাহিনীর প্রচলিত আইন এবং পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল সংস্কার করে যুগোপযোগী এবং কার্যকরী করা, পুলিশ বাহিনীকে যেন কোনো দলীয় সরকার তার রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করা, চাকরি নিরাপত্তা কর্মে ফেরার পর চলাফেরায় নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ বেশ কিছু দাবি-দাওয়া উত্থাপন করেন। সেসব দাবি-দাওয়া পূরণের আশ্বাসের সাপেক্ষে কর্ম বিরতিসহ সব আল্টিমেটাম প্রত্যাহার করা হয়েছে। আগামীকাল সোমবার থেকে সব পুলিশ সদস্য নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরবেন বলে জানানো হয়েছে।
কর্মস্থলে নিরাপত্তা, ৫ আগস্ট দিনসহ আগে ও পরে সহিংসতায় আহত-নিহতদের ক্ষতিপূরণ, পুলিশ সংস্কারসহ ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভসহ কর্মবিরতি পালন করছিলেন পুলিশের সদস্যরা।
যেসব দাবি জানানো হয়েছে
চলমান ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুলিশ হত্যাসহ পুলিশের স্থাপনায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানো ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে অতি দ্রুত বিচারের আওতায় আনা, নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে এককালীন আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান, আজীবন পেনশন রেশন প্রাপ্তি এবং পরিবারের একজন সদস্যের সরকারি চাকরি নিশ্চিত করা, আহত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা এবং গুরুতর আহত পুলিশ সদস্যদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা; পুলিশের নিয়োগ বিধিমালা বিশেষত সাব ইন্সপেক্টর এবং সার্জেন্ট নিয়োগ বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অধীনে এবং পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অধীনে কনস্টেবল নিয়োগে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, সাব ইন্সপেক্টর এবং সার্জেন্ট পদে বিদ্যমান পদোন্নতিসংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করা, সাব-ইন্সপেক্টর এবং সার্জেন্ট থেকে ইন্সপেক্টর পদে পিএল হওয়ার এক বছরের মধ্যে পদোন্নতি নিশ্চিত করা, কনস্টেবল, নায়েক, এটিএসআই, এএসআই পদোন্নতির ক্ষেত্রে পরীক্ষায় পাসকৃতদের পরবর্তী বছর পুনঃপরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা বাতিল এবং পদোন্নতি প্রদানের ক্ষেত্রে পাসকৃতদের সিনিয়রটি অনুসরণ; আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী পুলিশের কর্মঘণ্টা কমিয়ে আট ঘণ্টা নির্ধারণ এবং অতিরিক্ত কর্মঘণ্টার জন্য ওভারটাইম প্রদান অথবা বছরে দুটি বেসিকের সমপরিমাণ অর্থ প্রদান করা; পুলিশের ঝুঁকি ভাতা বৃদ্ধি, টিএ-ডিএ বিল প্রতিমাসের ১০ তারিখের মধ্যে প্রদান এবং প্রযোজ্য সব সেক্টরে সোর্স মানি নিশ্চিত করা, নৈমিত্তিক ছুটি বৃদ্ধি করে অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে ৬০ দিন কার্যকর করা(আগে ছিল ২০ দিন), অভোগকৃত ছুটির বিনিময়ে আর্থিক সুবিধা প্রদান করা; পুলিশ বাহিনীর প্রচলিত পুলিশ আইন এবং পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল সংস্কার করে যুগোপযোগী এবং কার্যকরী করা, পুলিশ বাহিনীকে যেন কোনও দলীয় সরকার তার রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করা, পুলিশের সব থানা, ফাঁড়ি এবং ট্রাফিক বক্স আধুনিকায়ন করা এবং অধস্তন অফিসারদের জন্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের অধস্তন কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং সব ব্যারাকে বিদ্যমান আবাসনসংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করে ব্যারাকগুলোকে আধুনিকায়ন করা।
সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিহত ও আহত হয়েছেন। এসব ঘটনা ছাড়াও পুলিশি স্থাপনায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানো ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে অতিদ্রুত বিচারের আওতায় আনা, নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে এককালীন আর্থিক ক্ষতিপূরণ, পুলিশের নিয়োগ বিধিমালা বিশেষত সাব-ইন্সপেক্টর এবং সার্জেন্ট নিয়োগ পিএসসির অধীনে এবং পুলিশ হেডকোয়ার্টারের অধীনে কনস্টেবল নিয়োগে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিতসহ বেশ কিছু দাবি জানিয়েছিলেন পুলিশ সদস্যরা।