বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বতীকালীন সরকারকে যেকোনো সহযোগিতা করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এদিকে দেশে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ও পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে কাজ করার আশ্বাস দিয়েছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। যেকোনো উপায়ে সহযোগিতা দেবে জাতিসংঘ : নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের উপমুখপাত্র ফারহান হক বলেছেন, বাংলাদেশের অন্তর্র্বতীকালীন সরকার ও জনগণ প্রয়োজন মনে করলে যেকোনো উপায়ে সহযোগিতা দিতে জাতিসংঘ প্রস্তুত রয়েছে। ব্রিফিংয়ে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, জাতিসংঘের মহাসচিব বাংলাদেশের অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন কিনা বা তার সঙ্গে কথা বলেছেন কিনা। জবাবে উপমুখপাত্র বলেন, ‘তিনি (মহাসচিব) তার (ড. ইউনূস) সঙ্গে কথা বলেননি। তবে বাংলাদেশে নিযুক্ত আবাসিক সমন্বয়ক বৃহস্পতিবার শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া যেন শান্তিপূর্ণ হয়, তা নিশ্চিত করতে তিনি ও কান্ট্রি টিম সক্রিয় রয়েছে।’ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়ে মহাসচিবের কোনো বক্তব্য আছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনারা শুনেছেন যে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়ায় সরকার গঠনের প্রত্যাশার কথা আমরা বলে আসছি। আমরা নিশ্চিতভাবেই সেই প্রত্যাশা করে যাব।’ বাংলাদেশে সহিংসতা কমে আসা ও জনসাধারণের কাছ থেকে বেশি মাত্রায় সংযত আচরণ ভালো লক্ষণ বলেও তিনি উল্লেখ করেন। বাংলাদেশে আন্দোলন চলাকালে কয়েকশ মানুষ নিহতের ঘটনা তদন্তে জাতিসংঘের সম্পৃক্ততা চাওয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করে এক সাংবাদিক এ ব্যাপারে জাতিসংঘের বক্তব্য জানতে চান। জবাবে ফারহান হক বলেন, বাংলাদেশের নতুন সরকারের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘকে কী ধরনের অনুরোধ জানানো হয়, তা তারা দেখবেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ যে ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করবে, আমরা অবশ্যই যেকোনো উপায়ে তাদের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি।’ নতুন সরকারকে সহায়তা করবে ইইউ : ইইউর পররাষ্ট্রনীতি-বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বাংলাদেশের নতুন অন্তর্র্বতী সরকারকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইইউ বাংলাদেশের নতুন প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। বোরেল জানান, গণতান্ত্রিক ক্ষমতা হস্তান্তরের জটিল এই কাজে তাদের (নতুন সরকারকে) সহায়তা করা হবে। এ প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক হতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। কাজ করতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র : মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বৃহস্পতিবার বলেছেন, বাংলাদেশে চলমান সহিংসতা বন্ধে ড. ইউনূসের আহ্বানকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। এই অন্তর্র্বতী সরকার ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের পথ প্রশস্ত করবে। তিনি বলেন ‘ড. ইউনূস সহিংসতা বন্ধ করার যে আহ্বান করেছেন, তাকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। আমরা চাই, অন্তর্র্বতীকালীন সরকার ও ড. ইউনূস বাংলাদেশের জন্য একটি গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ তৈরি করুন। আমরা তাদের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।’ বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদমর্যাদার কূটনীতিক হেলেন লা ফাভে উপদেষ্টাদের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন ও অন্তর্র্বতী সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে ম্যাথু মিলার উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করে যাবে চীন : বাংলাদেশে নতুন অন্তর্র্বতী সরকার গঠনকে স্বাগত জানিয়েছে চীন। একই সঙ্গে চীন দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাবে বলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। শুক্রবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এক মুখপাত্র এ কথা জানান। ব্রিফিংয়ে জানতে চাওয়া হয়, বাংলাদেশে অর্ন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়েছেন নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই সরকার নিয়ে চীনের মন্তব্য কী? জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘বাংলাদেশে অন্তর্র্বতী সরকার গঠনের বিষয়টি চীন অবহিত এবং তারা এই সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে। চীন নীতিগতভাবে যেকোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের বিরোধী। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনভাবে যে উন্নয়নের পথ বেছে নিয়েছে, তার প্রতি আমাদের সম্মান রয়েছে। আমরা আমাদের ভালো প্রতিবেশী এবং বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্বের নীতিতে অটল রয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, চীন ও বাংলাদেশের বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের এবং এই সম্পর্ক অনেক গভীর। চীন বাংলাদেশের সঙ্গে এই সম্পর্ককে মূল্যবান মনে করে। নানা ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগ ও সহযোগিতার উন্নয়ন এবং সমন্বিত কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারত্বকে আরও এগিয়ে নিতে চীন বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। অন্তর্বতী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে উন্মুখ পাকিস্তান : অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকারকে স্বাগত জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। শুক্রবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এক্স হ্যান্ডেলে এক পোস্টে এ অভিনন্দন জানান। শাহবাজ শরিফ বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে শপথ গ্রহণের জন্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে আন্তরিক অভিনন্দন। বাংলাদেশকে একটি সম্প্রীতিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে পরিচালিত করার ক্ষেত্রে তার সাফল্য কামনা করছি। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সামনের দিনগুলোতে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতা আরও গভীর করতে নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করার জন্য উন্মুখ।