বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশটির সাবেক আওয়ামী সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যরা। এ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং অর্থমন্ত্রী ইয়েলেনকে চিঠি লিখেছেন ছয় কংগ্রেস সদস্য। ওই চিঠিতে তারা লিখেছেন, বাংলাদেশের সাবেক সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে আমরা গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের জন্য শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দমন করতে পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করেছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও বেআইনিভাবে শক্তি প্রয়োগ করেছে এবং রাবার বুলেট, পেলেট গান, সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার গ্যাস এবং লাইভ রাউন্ড ছুঁড়েছে। ভিন্নমতাদর্শের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের বড় ধরনের অভিযানের অংশ ছিল এটি। কিন্তু সাবেক সরকারের নেতাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলেও তাকে জবাবদিহিতার প্রয়োজন রয়েই গেছে। ওই চিঠিতে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানানো হয়। গত ১৫ জুলাই সহিংস অভিযানের পর দেশব্যাপী কারফিউ জারি করা হয় এবং ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল এটাকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন বলে মনে করে। এছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নির্দেশে সে সময় পুলিশ এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দেশজুড়ে চলমান বিক্ষোভকে কঠোর হাতে দমনের চেষ্টা করেছে। বেশিরভাগ স্থানে সহিংসতা এবং মৃত্যুর জন্য পুলিশ এবং বিজিবিকেই দায়ী করা হচ্ছে। এছাড়া সে সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার নির্দেশ দেন এবং বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি ছোড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে আনুমানিক ২০০ জন নিহত এবং আরও কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়। এছাড়া আরও ১০ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেফতার করা হয়। সে সময় হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সতর্ক করেছে যে, বাংলাদেশ সরকার আবারও বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন এবং জোরপূর্বক গুম করতে পারে। ৪ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে হওয়া বিক্ষোভকে নির্মমভাবে দমনের চেষ্টা করে আওয়ামী লীগ। সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান আবারও নিরাপত্তা বাহিনী ও ছাত্রলীগকে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালানোর নির্দেশ দেন। এর ফলে প্রায় ১০০ জনের মৃত্যু হয়। গত ৫ আগস্ট বাধ্য হয়েই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতাও পালিয়েছেন। ফলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধে তারা এখনও কোনো ধরনের পরিণতি ভোগ করেননি। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কমাতে সফল হয়েছে। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতার প্রেক্ষিতে এগুলো পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করেন কংগ্রেসের সদস্যরা। সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের কঠোর জবাব দেওয়ার জন্যও আহ্বান জানানো হয়েছে।