মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে রাত জেগে বিভিন্ন মন্দির ও উপাসনালয় পাহারা দিচ্ছেন মাদরাসার ছাত্র ও শিক্ষার্থীরা। এছাড়া বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় এলাকাবাসীর উদ্যোগেও পাহারার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। হাসিনা সরকারের পতনের পর এ উজেলার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে হামলা প্রতিরোধে এই নিরাপত্তার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বুধবার রাতের বেলা শহরের জগন্নাথ দেবের আখড়া, ভৈরব মন্দির, সার্বজনীন দুর্গাবাড়ী, ক্যাথলিক মিশন, শ্রী শ্রী শ্রীমঙ্গলেশ্বরী কালীবাড়ী, বারোয়াড়ী কালিবাড়ী, রামকৃষ্ণ মিশন, জগদ্বুন্ধু আশ্রম ও মিশন, ইসকন মন্দিরসহ বিভিন্ন মন্দিরের সামনে পাহারা নিয়েছেন বসেছেন শ্রীমঙ্গলের বরুনা মাদরাসার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। তারা মন্দিরের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন। পাহারারত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা জানান, দেশে সরকার পরিবর্তনের পর এক শ্রেণির দুর্বৃত্ত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় উপাসনালয় গুলোতে যাতে হামলা চালাতে না পারে সেজন্য আমরা সতর্কতামূলক এই ব্যবস্থা নিয়েছি। কোন মন্দির, গির্জা বা প্যাগোডায় যাতে কোন সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠী কোন দুর্ঘটনা ঘটাতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখবো। সরেজমিন গতকাল রাত দুইটায় বিভিন্ন মন্দিরের গিয়ে দেখা যায়, হাতে লাঠি নিয়ে মন্দিরগুলোর দাঁড়িয়ে আছেন বরুনা মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সন্দেহভাজন কোন ব্যক্তিতে পেলেই তারা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন৷ এদিকে রাতের বেলা বিভিন্ন স্থাপনার নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীর টহল টিমও কাজ করছে। রাতে সেনাবাহিনীর গাড়ি শহরের বিভিন্ন সড়কে টহল দিতে দেখা যায়। সার্বজনীন দুর্গাবাড়ীর যুগ্ম সম্পাদক দেবাষীশ সেন গৌতম বলেন, আমাদের মন্দিরে এখন পর্যন্ত কোন সমস্যা হয়নি। রাত জেগে মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মন্দির পাহারা দেওয়ায় আমরা নিরাপদ বোধ করছি। এই সাথে এলাকায় ছেলেরাও রাত জেগে নিরাপত্তা দিচ্ছে। এদিকে দিনের বেলা শহরের জগন্নাথ দেবের আখড়ার সামনের নিরাপত্তা ও ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করে শহরের সাগরদিঘী সড়কের মারকাজুল কুরআন মাদরাসার ছাত্ররা।শহরের চৌমোহনা চত্বরে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও শৃংখলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার সদস্যরা৷ তাদের সাথে ছিলেন আনসার-ভিডিপি, বিএনসিসি ও রোভার স্কাউটরা। শ্রীমঙ্গল পৌরসভার কাউন্সিলর মীর এম এ সালাম বলেন, শহর ও মন্দিরের নিরাপত্তা ও শৃংখলা রক্ষায় মারকাজুল কুরআন মাদরাসার ছাত্ররা কাজ করছে। আইন-শৃংখলা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তারা কাজ করবে৷ বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি ডাক্তার সত্যকাম চক্রবর্তী বলেন, আমরা বিভিন্ন মন্দির পরিদর্শন করেছি। মন্দিরের দায়িত্বে থাকা লোকজনের সাথে কথা বলেছি। এ উপজেলায় কোন মন্দিরেই হামলা বা লুটপাট হয়নি বলে আমাদের জানানো হয়েছে। প্রতিটি মন্দিরে নিজস্ব পাহারার পাশাপাশি মুসলিম ধর্মাবলম্বী ভাইয়েরা আমাদের মন্দির রক্ষার জন্য রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন।