বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে প্রশাসনের মূলকেন্দ্র সচিবালয়ে দুপুর ১২টার পর থেকে নিরাপত্তার জন্য সবগুলো প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অধিকাংশ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা কার্যালয়ে আসেননি।
সচিবসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের উপস্থিতিও ছিল কম।
সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১২টার দিকে জনপ্রশাসনমন্ত্রী, যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী, শ্রম প্রতিমন্ত্রী, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীসহ আরও কয়েকজন মন্ত্রীর দপ্তরে গিয়ে তাদের পাওয়া যায়নি। সকাল থেকে তারা আসেননি বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সচিবালয় ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। তবে আজকে সচিবালয়ে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। প্রবেশের ৫টি গেটই বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রতিটি গেটে অতিরিক্ত পুলিশসহ বিজিবির সদস্য দেখা গেছে। যারা ব্যাগ নিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশ করতে চাচ্ছেন, তাদের ব্যাগও তল্লাশি করা হচ্ছে। নারীদের তল্লাশি করার জন্য নারী পুলিশও কাজ করছেন।
সচিবালয়ে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি দেখা যায়নি। এজন্য এক ও দুই নম্বর গেটের মাঝামাঝি দর্শনার্থী অপেক্ষা কক্ষ দর্শনার্থী শূন্য দেখা গেছে। সচিবালয়ের লিফটগুলোর সামনেও ভিড় দেখা যায়নি। তবে সচিবালয়ে গাড়ির সংখ্যা সকালে তুলনামূলক কম।
বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, গণভবনে জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক (এনএসসি) কমিটির জরুরি মিটিংয়ে বসেছেন বিদুৎ প্রতিমন্ত্রীসহ আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। সে কারণে সচিবালয়ে মন্ত্রীদের উপস্থিতি কম।
তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীকে দপ্তরে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘আমি রুটিন কাজ করতে এসেছি। আমাদের কাজ মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া। আমরা জাতি, ধর্ম, বর্ণ, দল নির্বিশেষে সবাইকে সেবা দিচ্ছি। ’
এদিকে দুপুর ১২টার পর থেকে নিরাপত্তার জন্য সচিবালয়ের সবগুলো প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাইরে গুলি, হাতবোমা বিস্ফোরণ ও সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছিলো। এসময় সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এই প্রতিবেদন লেখার সময়ও গুলি চলছিল।
সচিবালয়ে দায়িত্বরত পুলিশের একজন সদস্য জানান, অন্যান্য দিনের মতো আজ সকাল থেকেই আমরা তৎপর রয়েছি। সচিবালয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা- কর্মচারীরা জানান, আজকে রাস্তায় তেমন কোনো যান চলাচল করছে না। সিএনজি, রিকশা ছাড়া কিছু নেই। আমাদের মন্ত্রণালয়ে প্রায় সবাই সঠিক সময়ে উপস্থিত হয়েছে।
এর আগে গত জুলাই মাসের শুরু থেকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সারা দেশে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এসব ঘটনায় বহু হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বিজিবি নামানো হয়। একপর্যায়ে সরকার ১৯ জুলাই শুক্রবার রাত ১২টা থেকে সারা দেশে কারফিউ জারি করে। একই দিনে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়। এখনো বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী।
প্রথম দিন দুই ঘণ্টা বিরতি দিয়ে কারফিউ চলে। পরদিন তিন ঘণ্টা বিরতি দেওয়া হয়। আজ থেকে ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জে ১৫ ঘণ্টা কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। অন্যান্য জেলাগুলোর কারফিউর সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক নেবেন।