কুড়িগ্রামে বন্যা ও বন্যা পরবর্তী সময়ে ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো পাচ্ছে না কোনো সরকারি সহায়তা। প্রশাসন থেকে কোনো বরাদ্দ না থাকায় এসব অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারছে না বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। চলতি বছর জেলার উলিপুর উপজেলার হকের চরে ৪৫৮টি পরিবার এবং ফুলবাড়ী উপজেলায় প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার ভাঙনের শিকার হয়েছে। ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চর গোড়কমণ্ডপে চলতি বন্যায় ৩০টি এবং বড়ভিটা ইউনিয়নের মেকলীতে ২২টিসহ মোট ৫০টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। চর গোড়কমণ্ডপে এখনো ভাঙনের কবলে রয়েছে ৭টি পরিবার। সরকারিভাবে ভাঙন প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় হতাশ এ এলাকার মানুষ। নদীর তীরে অবস্থিত এ এলাকার মৃত ছামাদ মিয়ার স্ত্রী আছিয়া বেওয়া (৫২) আক্ষেপ করে বলেন, ‘সবাই চইলা গ্যাছে। একরাতে ৭ বাড়ি লইয়া গেছে। আমরা নদীর কাচারে পইরা আছি। কোন জায়গায় যাব যাওয়ার কোনো স্থান নাই। সরকার যদি কোনো ব্যবস্থা না করে আমাগো নদীত ডুববাই মরতে হইব।’ এ গ্রামের মৃত সমশের আলীর ছেলে কৃষক আয়েজ উদ্দিন (৪৫) বলেন, ‘ভাঙনে অনেক জমিজমা লইয়া গেছে। ইতোমধ্যে ১৫-২০টা বাড়ি সরাইছে। সরকার যদি বাঁধ না দেয় তাহলে পাশেই ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি মুজিব কেল্লাও ভাইঙ্গা যাইব।’ একই এলাকার কবেজ আলীর ছেলে আব্দুর রহমান বলেন, ‘হঠাৎ করেই তীব্র ভাঙনে লোকজন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। আমার চোখের সামনে আয়নাল, আমির হোসেন, আফান উদ্দিন, ফয়জাল, বসির, আবু তাহের ও আয়শার বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে গেল। এরা গরিব মানুষ। সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা দেওয়া হয় নাই। আমরা এখন সরকারি সহায়তার পাশাপাশি এখানে বাঁধ চাই।’ সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেল- ভাঙনকবলিতদের দুর্দশা। তাদের অসহায়ত্বের সময় এগিয়ে আসছে না কেউই। অসহায়রা বিভিন্ন মানুষের জমিতে বাড়ি ফেলে রেখেছেন। কোথায় যাবেন, এখনো ঠিক করতে পারছেন না। অন্যদিকে যারা বাড়ি সরিয়েছেন, তাদের ঋণ করে নতুনভাবে জায়গা কিনে তৈরি করতে হয়েছে মাথা গোজার ঠাঁই। এ ব্যাপারে ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহনুমা তারান্নুম জানান, ‘গত এক বছর ধরে কোনো বরাদ্দ পাইনি। ফলে ভাঙনকবলিতদের জন্য কিছুই করার নেই। আমরা শুধু চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে শুকনো খাবার ও ১০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দিয়েছি।’ ভাঙনকবলিতরা সেই ত্রাণ পেয়েছে কি না সে সম্পর্কে তার কাছে কোনো তথ্য নেই বলে তিনি জানান। জেলা ত্রাণ ও পুনবার্সন কর্মকর্তা আব্দুল হাই বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে আবেদন পেলে আমরা এক থেকে দুই বান্ডেল করে ঢেউ টিন সরবরাহ করে থাকি। বর্তমানে আমাদের কাছে কোনো বরাদ্দ নেই। আগস্টে বরাদ্দ পেলে সহযোগিতা করা যাবে।