বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রায় দেড় কোটি টাকা ভূমি অধিগ্রহণ সিরাজগঞ্জের (এলএ) শাখায় পড়ে আছে এক বছর ধরে। রেল কর্তৃপক্ষের দাবি গত বছর ভূমি অধিগ্রহণ সম্পর্কে কিছুই জানানো হয়নি। জানা যায়, গত বছর ২৭ জুলাই সিরাজগঞ্জ জেলা ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা সুইচিং মং মারমা স্বাক্ষরিত নোটিশ দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে বরাবর। যাতে উল্লেখ করা হয় স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন ২০১৭ সনের ২১ নাম্বার আইনের ৮ ধারার ৩ (ক) এর উপধারায় সম্পত্তির মালিক রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে কয়েকটি নোটিশে গত বছর ১৭ আগষ্ট তারিখের মধ্যে ৩শ টাকার স্ট্যাম্প নিয়ে উপস্থিত হয়ে টাকা গ্রহণের নোটিশ প্রদান করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, পূর্ণ ঠিকানার অভাবে এক বছর ধরে পড়ে আছে রেলওয়ের অধিগ্রহণকৃত টাকা। তিনি আরও জানান, নোটিশে প্রাপকের ঠিকানা পরিপূর্ণ না। নোটিশ প্রদানে অবশ্যই বাংলাদেশ রেলওয়ে পাকশি, বাংলাদেশ রেলওয়ে রাজশাহী , বাংলাদেশ রেলওয়ে ঢাকা অথবা রেল মন্ত্রণালয় ঢাকা পূর্ণ ঠিকানা উল্লেখ করতে হয়। এ জন্য আজও কোথাও নোটিশ পৌঁছায়নি। রেলওয়ের ভূমি কর্মকর্তা (পাকশি) কামরুল ইসলাম জানান, সিরাজগঞ্জে নতুন করে রেলওয়ের জায়গা অধিগ্রহণ হয়েছে, এমন কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। এবিষয়ে সিরাজগঞ্জ ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা নুসরাত জাহান জানান, ভূমি অধিগ্রহণের টাকা কেউ না নিয়ে থাকলে, পরবর্তীতে নেবে। সুনির্দিষ্ট করে কত টাকা রেল কর্তৃপক্ষের পড়ে আছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি আরও জানান, আপনি যা জানেন সেটাই সঠিক। আমি আপনাকে তথ্য দিতে পারব না, প্রয়োজনে আপনি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের ব্যবস্থাপক পাকশী শাহ সুফি নুর মোহাম্মদ জানান, এমন তথ্য আমার কাছে নেই। অতীতে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক হতে অনেক জায়গা খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, এজন্য আমরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছি। উল্লেখ্য যে, সিরাজগঞ্জ রেলওয়ের প্রায় ৫ শ ৪৫ একর জায়গার মধ্যে ২ একর জায়গার রাজস্ব পায় নামমাত্র। জেলার উল্লাপাড়া, কামারখন্দ এবং সিরাজগঞ্জ রেলওয়ের ইয়ার্ড, দোকান ও অন্যান্য থেকে ২৫ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়। যা বানিজ্যিক হার ৪৫ টাকা করে হলে ১ একর জায়গার রাজস্ব মাত্র। বিপরীতে প্রতি বছর ভূমি মন্ত্রণালয়কে এই জায়গা বাবদ লক্ষ লক্ষ টাকা খাজনা পরিশোধ করে থাকে বাংলাদেশ রেলওয়ে। অথচ সম্পূর্ণ জায়গা যদি সরকার নিয়ন্ত্রণে আনতে পারত তাহলে অর্ধশত কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হতো বলে জানান রেলওয়ে কর্মকর্তারা। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, উনিশ শতকের শুরুর দিকে পাক-ভারত উপমহাদেশে বৃটিশ শাসনামলে ব্যবসা-বানিজ্যের সুবিধার্থে যমুনা নদীর তীরে সিরাজগঞ্জ শহরকে ঘিরে ৪টি রেলস্টেশনের সমন্বয়ে গড়ে তোলা হয়েছিল রেলসিটি হিসেবেই। শহরে ট্রেন প্রবেশের প্রথম রেল স্টেশনটির নাম সিরাজগঞ্জ রায়পুর, পরের স্টেশনটি শহরের প্রাণকেন্দ্রে সিরাজগঞ্জ বাজার, শহরের উত্তর পার্শ্বের সিরাজগঞ্জ বাহিরগোলা রেলস্টেশন থেকে ট্রেন ছেড়ে একেবারে যমুনার পাড়ে সর্বশেষের স্টেশন সিরাজগঞ্জ ঘাটে গিয়ে থামতো ট্রেন। এ শহরটির একপাশে নৌবন্দর আর অপর পাশের রেলস্টেশনগুলোকে ঘিরেই জীবিকা নির্বাহ হতো শহরবাসীর। সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশনের পূর্ব পাশে রেলওয়ে (জিআরপি) থানা ও বির্স্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে রেলওয়ের বিশাল ইয়ার্ড। ইয়ার্ডের ভিতরেই কর্মকর্তা-কর্মচারিদের আবাসস্থল, ইঞ্জিন ঘোরানোর ব্যবস্থাসহ ট্রেন রক্ষণাবেক্ষণের কাঠের স।স্লীপার লোহার রেলপাত থরে থরে সাজানো থাকতো এবং গোডাউনে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি সংরক্ষণ করে রাখা হতো। ভুল পরিকল্পনায় হারিয়ে যেতে বসেছে সেই রেল সিটি। সিরাজগঞ্জ শহর ও হতে পারত লন্ডন সিটির মতো ।