সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলায় জনতার হাতে গণপিটুনির শিকার হয়েছে লম্পট সিরাজুল ইসলাম। জানা গেছে, তার মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে ভয়ংকর অপরাধের চিত্র। গত ১৬ জুলাই মঙ্গলবার বিকাল আনুমানিক ৬টার সময় শ্যামনগর উপজেলার হরিনগর বাজার সংলগ্ন এলাকায় গণপিটুনির এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শ্যামনগর উপজেলার ৭ নং মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন এর দক্ষিণ কদমতলা গ্রামের প্রয়াত বিষা গাজীর ছেলে সিরাজুল ইসলাম। সে ছোটবেলা থেকেই বেপরোয়া এবং প্রতারক স্বভাবের। উপকুলীয় এলাকার মানুষকে সরকারি ঘর ও উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল থেকে পানির ট্যাংকি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ১৬ জন ব্যক্তির নিকট থেকে ৩ লক্ষ ৯৬ হাজার ৫ শত টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক সিরাজুল ইসলাম। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সিরাজুল সরকারি ঘর এমনকি পানির ট্যাংকি দিতে ব্যর্থ হয়। এ সময় ভুক্তভোগীরা সিরাজুলের নিকট টাকা চাইলে সে বিভিন্ন সময় তালবাহানা শুরু করেন। একপর্যায় ভুক্তভোগীরা সিরাজুল ইসলাম এর স্বরনাপন্ন হয়ে টাকা চাইলে সিরাজুল ইসলাম তাদের সাথে খারাপ আচরণ, উচ্চবাচ্য এবং মিথ্যা বানোয়াট মামলায় ফাঁসানোর হুমকি ধামকি প্রদান করতেন। সরকারি ঘর ও পানির ট্যাংকি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে টাকা আত্মসাৎ করায় প্রতারক সিরাজুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে শ্যামনগর, কালিগঞ্জ আংশিক সাতক্ষীরা ০৪ আসনের সংসদ সদস্য এস,এম, আতাউল হক দোলন বরাবর ১৬ জন ভুক্তভোগী বাদী হয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সিরাজুল চুনকুড়ি নদীর বেড়িবাঁধের উপর পল্লী বিদ্যুতের খুঁটির সাথে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করার পাশাপাশি দক্ষিণ কদমতলা এলাকার একটি জনবহুল পুকুরের সামনেও সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে। উপকূলীয় এলাকায় একটি মাত্র পুকুর হওয়ায় সেখানে নারী, পুরুষ উভয় গোসল করার জন্য আসেন। কিন্ত লম্পট সিরাজুল ইসলাম তার অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের নিমিত্তে পুকুরে আসা নারীদের গোসল করার ভিডিও চিত্র সংরক্ষণ করে। এছাড়া নারী, পুরুষ কে কোথায় যাচ্ছে, কি করছে তাদের গতিবিধি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সিরাজুল বাড়িতে বসে দেখে মজা নেওয়ার পাশাপাশি সে তাদেরকে প্রতিনিয়ত ব্লাকমেইল করতো। সে কারণে বিপাকে রয়েছে অনেক ভুক্তভোগী নারী। সিরাজুল ইসলাম এর ভালো চেহারার মুখোশের আড়ালে রয়েছে এক ভয়ংকর অপরাধ। শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণ কদমতলা গ্রামের নুরুননাহার, সোহাগি পারভিন, ফজিলা পারভিন, হোসেন আলী, আমজাদ হোসেন, নাজমুল হাসান সহ অনেকে অভিযোগ তুলে বলেন, পুকুরে নারীরা গোসল করতে গেলে দক্ষিণ কদমতলা গ্রামের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে তাদের ছবি ধারণ করেন। পরবর্তীতে লম্পট সিরাজুল ইসলাম সুযোগ বুঝে সিসি ক্যামেরায় ধারনকৃত ঐ ছবির কথা বলে অসংখ্য নারীদের কুপ্রস্তাব দিতেন। এমনকি সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল করে দেওয়ারও ভয়ভীতি প্রদর্শন করতো। লোক লজ্জার ভয়ে ভুক্তভোগী নারীরা সিরাজুল ইসলাম এর অপকর্মের কথা প্রকাশ করতো না। সিরাজুল ইসলাম এর এসব অপকর্মের কারনে অনেক নারী পুকুরে এমনকি বেড়িবাঁধের উপর যেতে সংকোচবোধ করতেন। সিসি ক্যামেরা স্থাপন করায় উপকুলীয় এলাকায় বিশেষ করে নারীদের মধ্যে আতংক ও ভয় বিরাজ করছে। হাবিবা খাতুন বলেন, আমি গোসল করে যাওয়ার সময় সিরাজুল ইসলাম সিসি ক্যামেরায় ধারনকৃত ভেজা শরীলের ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে প্রতিনিয়ত উত্তপ্ত করার পাশাপাশি আমাকে কুপ্রস্তাব দেয়। সিরাজুল ইসলাম দক্ষিণ কদমতলা গ্রামের প্রয়াত বিষা গাজীর ছেলে। উপকূলীয় এলাকার জেলে, বাউয়ালিদের নিকট থেকে প্রতিনিয়ত চাঁদা আদায় করতো। জানা গেছে, কদমতলা ফরেষ্ট স্টেশন সংলগ্ন দক্ষিণ কদমতলায় ৩০ জন জেলে বাউয়ালিদের পরিবারের বসবাস। সরকার ঘোষিত জুন, জুলাই এবং আগষ্ট তিন মাস মাছ,কাঁকড়া আহরণ ও সুন্দরবনের সম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ থাকে। সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল জেলে, বাউয়ালিদের কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে জেলে প্রতি ২ হাজার করে হাতিয়ে নেয় সিরাজুল ইসলাম। সাধারণত তিন মাস সুন্দরবনের সম্পদ আহরণ বন্ধ থাকায় জেলেদের জন্য প্রতিবছর সরকারি ভাবে তালিকা করা হয়। আর এসব তালিকা অনুযায়ী কার্ড প্রাপ্ত জেলে, বাউয়ালিরা মাসিক হারে ৩০ কেজি চাল অর্থাৎ ৩ মাসে ৯০ কেজি চাল বিনামূল্যে পেয়ে থাকেন। কিন্ত সু-কৌশলে সিরাজুল ইসলাম জেলে, বাউয়ালিদের দারিদ্রতা ও সরলতার সুযোগ নিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতো। ঐ এলাকার গরীব অসহায় দিন আনে দিন খায় পুরুষ, মহিলা নদীতে নেট,জাল টেনে মাছের রেনু ধরে জীবিকা নির্বাহ করা ঐসব ব্যক্তিদের নিকট মাসিক হারে ৪ শত টাকা করে চাঁদা দাবি করেন সিরাজুল ইসলাম। সিরাজুলের এসব নানাবিধ কুটকৌশল ও অপকর্মের কারনে উপকূলীয় এলাকার মানুষ জিম্মি এবং হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের কদমতলা, হরিনগর সহ একাধিক এলাকার মানুষ সিরাজুল ইসলাম এর উপর চরমভাবে ক্ষুব্ধ। লম্পট সিরাজুল ইসলাম এর দূর্নীতি, চাঁদাবাজি এবং অপকর্মের পাল্লা এতটাই ভারী যে লিখে শেষ করার নয়। এদিকে সিরাজুল ইসলাম জেলে, বাউয়ালিদের নিকট থেকে চাঁদা আদায়, নদীতে নেট,জাল টেনে জীবীকা নির্বাহ করা গরীব,অসহায় দারিদ্র মানুষের কাছে চাঁদা দাবি, সরকারি ঘর ও পানির ট্যাংকি দেওয়ার কথা বলে টাকা আত্মসাৎ, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি প্রদান সহ উপকূলীয় এলাকার নারীদের গোসলের দৃশ্য সিসি ক্যামেরায় ধারণ করে কুপ্রস্তাব, মিথ্যা মামলায় হয়রানি সহ নানাবিধ কারনে লম্পট সিরাজুলের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে শতাধিক মানুষ তাকে গণধোলাই দেয়। এ সময় গণধোলাইয়ের শিকার হওয়া সিরাজুল ইসলাম কে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।