কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নতুন কর্মসূচি দিয়েছে। রোববার (২৮ জুলাই) স্কুল-কলেজ ও স্থানীয় ইউনিটগুলোতে হেলথ ফোর্স গঠন করে আহত ও নিহত শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরি ও তাদের পরিবারকে সহায়তা দান এবং সারা দেশের দেয়ালগুলোতে গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখন কর্মসূচি পালন করা হবে।
শনিবার (২৭ জুলাই) রাত ৮টায় অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ। এ সময় আরও যুক্ত ছিলেন অন্যতম সমন্বয়ক মাহিন সরকার ও সহসমন্বয়ক রিফাত রশীদ।
সংবাদ সম্মেলনে মাসউদ বলেন, আমরা তিনটি বিষয় স্পষ্ট করছি। এর আগে ২০১৮ সালে কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারির পর সেটি ৬ বছরও টিকেনি। তাই পরিপত্র পরিপত্র খেলা বন্ধ করে স্টেকহোল্ডারদের বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি স্বাধীন স্থায়ী কমিশন গঠন ও কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী আইন পাস করতে হবে। পুলিশ কনস্টেবল থেকে মন্ত্রী; যতজন শিক্ষার্থী হত্যার সঙ্গে জড়িত তাদের অব্যাহতি দিয়ে আইনের আওতায় আনতে হবে। যতজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে তাদের মামলা প্রত্যাহার করে গুম ও আটককৃত শিক্ষার্থীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দিতে হবে।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি দাবি মেনে নেওয়া না হয়, তাহলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাব। প্রয়োজনে আবার মাঠে নামব। আল্টিমেটামের নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সরকার দাবি মেনে না নিলে রোববার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যায় আমরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করব, বলেন তিনি।
আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত ২৩৬ জন নিহতের তালিকা পেয়েছি। এর মধ্যে ৭৮ ভাগই শিক্ষার্থী। এই সংখ্যা হাজার ছাড়াবে। এখন পর্যন্ত সাড়ে ৩ হাজার শিক্ষার্থী আটক বা গ্রেপ্তার হয়েছে। বাসায় বাসায় গিয়ে অনেক শিক্ষার্থীকে তুলে নেওয়া হচ্ছে। আমাদের ৩২ জনের নামে মামলা হয়েছে। যেখানে শাহবাগ থানাতেই ১১টি। এসব মামলায় অজ্ঞাতনামাদেরও রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক রাষ্ট্র ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে বলছি- বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা ভালো নেই। অনেকে আটক, অনেকে বাসা ছাড়া। আপনারা চাপ দিন সরকারকে। আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যার দায়ে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করুন। র্যাব-পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। প্রবাসীরা যাতে শিক্ষার্থীদের পক্ষে আওয়াজ তোলে এবং স্ব স্ব জায়গা থেকে প্রতিবাদ জানায় সে আহ্বান জানাচ্ছি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করছি।
সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক রিফাত রশীদ। তিনি বলেন, আমরা শুরু থেকেই কোটা সংস্কারে আইন পাসের কথা বলে আসছি। কিন্তু সরকার সেটি না করে অহিংস আন্দোলনকে সহিংস পর্যায়ে নিয়ে যায়। সে কারণে এখনকার সব পরিস্থিতির দায় সরকারের।
তিনি বলেন, সরকার বলেছে- কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা বলছি, যে পরিপত্র জারি হয়েছে সেটি আমরা মানি না। কারণ সরকার আগের মতোই পরিপত্র পরিপত্র খেলা শুরু করেছে। কাজেই আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হয়নি। উল্টো ভয় দেখিয়ে আন্দোলন বন্ধ করার চেষ্টা করছে।
তিনি আরও বলেন, এই আন্দোলনে ইউএনএ’র গাড়ি ব্যবহার করা হয়েছে। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান, সরকারকে জবাবদিহিতার আওতায় আনুন। সরকার এর জবাব দিতে পারবে না বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমরা এই হত্যার বিচার বিশ্ববাসীর কাছে চাই।
এ সময় তিনি সরকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়কদের একত্রিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন।