প্রমত্তা পদ্মা ও তার প্রধান শাখা নদী গড়াইয়ের তীব্র ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে তীরবর্তী মানুষ। নদীতে পানি বাড়ার সাথে সাথে এবার পদ্মা নদীর সাতটি পয়েন্টে ও গড়াই নদীর ৪টি পয়েন্টে ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনে কৃষি জমি, ঘরবাড়ি, রাস্তা ও বাঁধ নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদী তীরবর্তী জনপদ টিকিয়ে রাখতে দ্রত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন আতঙ্কিত বাসিন্দারা।
পদ্মা নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন শুরু হয়েছে দৌলতপুর উপজেলার ৪টি ও ভেড়ামারা উপজেলার ৩টি পয়েন্টে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এর তথ্যমতে দৌলতপুরের চিলমারী ইউনিয়নের উদয়নগর বিওপি ক্যাম্পের কাছে ২শ মিটার অংশ, মরিচা ইউনিয়নের হাটখোলাপাড়ায় ১ কিলোমিটার, মরিচা ইউনিয়নের ভুরকাপাড়ায় ২ কিলোমিটার, একই ইউনিয়নের কোলদিয়াড়ে ৭শ মিটার জায়গাজুড়ে পদ্মা নদীর ডানতীরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আর ভেড়ামারা উপজেলার ফয়জুল্লাহপুরে ১ কিলোমিটার, মসলেমপুরের দুটি পয়েন্টে ৫শ৫০ মিটার ও ৩শ ৮০ মিটার এলাকায় পদ্মা নদীর ডানতীরে ভাঙন হচ্ছে। এসব পয়েন্টে নদী ভেঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে কৃষকের আবাদী জমি। ভাঙছে তীরবর্তী রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি। সব হারিয়ে নি:স হয়ে যাচ্ছে মানুষ। মসলেমপুরের রবিউল বলেন, নদী অনেক দূরে ছিলো এখন ভাঙতে ভাঙতে আমাদের বাড়ির কাছে চলে আসছে। এখনি প্রতিরোধ না করা গেলে আমরা ভিটেছাড়া হয়ে যাবো।
পদ্মার প্রধান শাখা নদী গড়াইও ভেঙে চলেছে কুমারখালী ও খোকসা উপজেলার ৪টি পয়েন্টে। কুমারখালী পৌর এলাকার কুন্ডুপাড়ায় নদীর বাম তীরে ১শ মিটার, সদকী ইউনিয়নের পাথরবাড়িয়ায় বাম তীরে ৫০ মিটার, খোকসা উপজেলার ওসমানপুর ইউনিয়নের হিজলাবট দ্বীপচর আদর্শ আশ্রায়ন প্রকল্পে বামতীরে ৭শ মিটার ও বেতবাড়িয়া ইউনিয়নের জাগলবা, ভবানীপুর ও শ্যামপুরে বাম তীরে ১ দশমিক ২ কিলোমিটার অংশে ভাঙন তীব্র হয়েছে। বিশেষ করে ভুমিহীন পরিবার ও আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দারা চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। এখানকার বাসিন্দারা বলছেন আশ্রায়ন ভেঙ্গে গেলে কোথায় থাকবো? দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
ভাঙনের এসব পয়েন্টগুলো চিহ্নিত করে প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান। তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই অর্থ বরাদ্দ চেয়ে আবেদন জানানো হয়েছে। দ্রুতই জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে।
এদিকে ভেড়ামারার মসলেমপুর এলাকায় ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন পানি উন্নয়ন বোর্ড, পশ্চিমাঞ্চল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শাহজাহান সিরাজসহ পানি প্রকৌশলীরা। নদী তীরে ব্যবসায়ীদের জড়ো করে রাখা বালুর স্তুপ ভাঙন তীব্র করছে বলে জানান প্রকৌশলীরা। এরই প্রেক্ষিতে সেখানে উপস্থিত কুষ্টিয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য কামারুল আরেফিন নদী তীরে বালুর স্তুপ রাখা বন্ধ করার কথা বলেন। তিনি বলেন, এসব বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে তিনি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলবেন।
তিনি আরো বলেন, পদ্মা নদীর ভাঙন প্রতিরোধে ইতোমধ্যে কুষ্টিয়ার তালবাড়িয়ায় স্থায়ী বাধ নির্মাণের মেগা প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। ঠিকাদারও নিয়োগ হয়েছে, বর্ষার পরেই শুরু হবে কাজ। পরের মৌসুম থেকে পদ্মা নদীর ডান তীরে আর ভাঙন হবে না বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।