২০১৮ সালে পরিপত্র জারি করে সরকার কোটা নিয়ে যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে আদালত এখন সেটার উপর স্থিতাদেশ দিয়েছেন। আদালতে যাওয়ার কারণে এখন বিষয়টি বিচার বিভাগে আছে। সেখানে বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে। নির্বাহী আদেশে এখানে কিছু বলার নাই। আদালতকে আমরা সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি। বিষয়টি নিয়ে রাস্তায় না থেকে আদালতেই সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) দুপুরে সচিবালয়ে কোটা বিষয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, যেটা যেখানে নিষ্পত্তি প্রয়োজন সেখানেই সেটা নিষ্পত্তি হতে হবে। তাই রাস্তায় থেকে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা অযৌক্তিক। এটা পানির মত একটা সহজ জিনিস। সেটাকে জটিল করা হচ্ছে রাস্তায় থেকে। মন্ত্রী অনুরোধ করেন, শিক্ষার্থীরা যেন কারো দ্বারা প্ররোচিত না হয়ে যথাযথ জায়গায় যান, এই সমস্যার সমাধান আদালতেই হবে। শিক্ষার্থীরা যেন আদালতে এসে নিজেদের যুক্তি তুলে ধরেন যথাযথভাবে, তখনই এটার সমস্যা হবে।
তিনি বলেন, মালদ্বীপ, ভারত পাকিস্তানেও কোটা আছে। সমস্যার ভিত্তিতে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে। অনেক জেলা এখনো পিছিয়ে আছে। ১৭টি জেলা থেকে একজনও পুলিশে সুযোগ পায়নি। ৩৯টা জেলা থেকে একজনও নারী সুযোগ পায়নি। তাই যৌক্তিক সমাধান হওয়া প্রয়োজন। ৩৯ নয়, ৪০ বিসিএসে ৫৯টি জেলা থেকে একজনও নারী আসেনি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রী বলেন, কোটার সংস্কার থাকা প্রয়োজন। সব সমন্বয় করে একটা সিদ্ধান্ত হবে। এই সমস্যার সমাধান রাজপথে সমাধান হবে না। নির্বাহী বিভাগের হাতে কিছু নাই। তবে, কী সিদ্ধান্ত হবে কোটা নিয়ে তা আদালতে সিদ্ধান্ত হবে। সেটা নির্বাহী বিভাগ বলতে পারে না।
তিনি আরো বলেন, যারা দেশের ভালো চায় না তাদের দিয়ে প্ররোচিত হয়ে শিক্ষার্থীরা কিছু করবেন না এমনটা আশা করছি। যারা আওয়ামী লীগের উন্নয়ন দেখতে চায় না তারা এখন ব্যর্থ হয়ে শিক্ষার্থীদের প্ররোচনা দিচ্ছে। আদালতে আগে সিদ্ধান্ত হোক। তারপর কিছু করার থাকলে সরকার করবে। শিক্ষার্থীরা কারও ইন্ধনে এটা করছে। এতে জনদুর্ভোগ হচ্ছে। তাদের আহ্বান জানাচ্ছি তারা নিজেদের পক্ষে দক্ষ আইনজীবী নিয়োগ দিয়ে নিজেদের যৌক্তিক উপস্থাপনা কোর্টে তুলে ধরবেন। তাতেই সমাধান হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। এরমধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল।
ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটাব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন তখনকার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে) কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেন। সেই রিটের রায়ে চলতি বছরের ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। এর পর থেকে চাকরিপ্রত্যাশী ও শিক্ষার্থীরা সরকারের জারি করা সেই পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে মাঠে নামেন।
সবশেষ ১০ জুলা সরকারি চাকরিতে কোটা বহাল রেখে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের উপর স্থিতাবস্থা জারি করেন আপিল বিভাগ। এরফলে সরকারের জারিকৃত ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল হয়। আগামী ৭ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ শুনানি শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন হাইকোর্ট।