পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ অবৈধ সম্পদের পাহাড় একের পর এক বেরিয়ে আসছে দুদকের অনুসন্ধানের। কিন্তু দুদকও প্রথমে ভাবতে পারেনি কেঁচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে পড়বে। শুধু দুর্নীতি করে সম্পদের পাহাড় বানিয়েছেন এমন নয়। ব্লাকমেইল, জালিয়াতিসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। সাবেক আইজিপির বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ পাসপোর্ট করতে নজিরবিহীন জালিয়াতি করেছেন। পাসপোর্টে পুলিশ পরিচয় আড়াল করে নিজেকে বেসরকারি চাকরিজীবী পরিচয় দিয়ে, নিয়েছেন সাধারণ পাসপোর্ট। তিনি সরকারি চাকরিজীবী পরিচয়ে নীল রঙের অফিশিয়াল পাসপোর্ট করেননি। সুযোগ থাকার পরও নেননি লাল পাসপোর্ট। সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের আলোচিত দুই ভাই হারিস আহমেদ ও তোফায়েল আহমেদ জোসেফ যে প্রক্রিয়ায় পাসপোর্ট করেছিলেন। সেই একই কায়দায় পাসপোর্ট নেন বেনজীর। গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে জানা গেছে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, বেনজীর তার পুরনো হাতে লেখা পাসপোর্ট নবায়নের আবেদন করেন ২০১০ সালের ১১ অক্টোবর। রহস্যজনক কারণে নীল রঙের অফিশিয়াল পাসপোর্ট না নিয়ে সাধারণ পাসপোর্ট নেন। এ সময় আসল পরিচয় আড়াল করে নিজেকে বেসরকারি চাকরিজীবী বলে পরিচয় দেন তিনি। প্রশ্ন হচ্ছে বেনজীর কেন লাল পাসপোর্ট নেননি? ২০২০ সালে ৩০তম আইজিপি হিসাবে পুলিশবাহিনীর প্রধান পদে দায়িত্ব নেন বেনজীর। নিয়মানুযায়ী সিনিয়র সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা হিসাবে তার কূটনৈতিক পাসপোর্ট পাওয়ার কথা। কিন্তু তিনি মর্যাদাপূর্ণ লাল পাসপোর্টও নেননি। এছাড়া শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তিনি সরকারি চাকরিজীবী পরিচয়ে নীল রঙের অফিশিয়াল পাসপোর্ট করেননি। আইজিপি হয়েও তিনি ফের বেসরকারি চাকরিজীবী পরিচয়ে সাধারণ পাসপোর্টের আবেদন করেন। কিন্তু ততদিনে দেশে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ায় বেনজীরের আবেদন নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। এ সময় বেনজীর আহমেদ আশ্রয় নেন নজিরবিহীন প্রতারণার। চলাচলে অক্ষম হিসাবে গুরুতর অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে ডিআইপির মোবাইল ইউনিট চেয়ে পাঠান। পরে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তার বাসায় গিয়ে ছবি তোলা, আঙুলের ছাপ নেওয়াসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন। অতিগোপনে করা হয় এসব কাজ। ২০২০ সালের ৪ মার্চ তার আবেদনপত্র জমা হয়ে যায়। মিথ্যা তথ্যে পাসপোর্ট দেওয়া ছাড়াও বেনজীরের পাসপোর্টে আরও কয়েকটি বড় ধরনের অনিয়ম হয়েছে। সরকারি চাকরিজীবীদের ৫ বছরের বেশি মেয়াদের পাসপোর্ট দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও তাকে দেওয়া হয়েছে ১০ বছর মেয়াদি।