চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার প্রকৃতির অপরুপ সৃষ্টি পাহাড় আর সাগর উপকূলীয় এলাকায় জুড়ে রয়েছে গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত, বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত, আকিলপুর সমুদ্রসৈকত,কুমিরা সন্দীপ ফেরী ঘাট,ভাটিয়ারী লেক,সীতাকুণ্ডে ইকোপার্কে সহস্রধারা-১ ও সুপ্তধারা, ঝরঝরি ঝর্না, সহস্রধারা-২, রূপসী ঝর্না, মধুখাইয়া, বাড়বকুণ্ডে অগ্নিকুণ্ড সহ বাঁশবাড়িয়া বিলাসী ঝর্না দেখতে আসে দূরদূরান্তের পর্যটকরা।পাহাড়ের গহীনে অবস্থিত ঝর্ণার মায়ায় বিমোহিত হবেন যে কোনো প্রকৃতিপ্রেমি।বিশেষ করে বর্ষা মৌসুম সীতাকুণ্ডের পাহাড়ি ঝর্ণা আর সমুদ্রসৈকত গুলোতে পর্যটকদের পদচারণা মুখরিত হয়ে উঠে বছরের অন্য সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ঘিরা সীতাকুণ্ড উপজেলার পর্যটন স্পটগুলো একদিকে অবকাঠামোর আশানুরূপ উন্নতি হয়নি।অপরদিকে নতুন নতুন পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে।পর্যটন স্পটগুলোও যেন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে।গত চার মাসে বেড়াতে এসে শুধু মারা গেছেন অন্তত ৫ পর্যটক। যেখানে আনন্দ উপভোগ করতে আসার কথা সেখান থেকে ইদানীং অনেকেই লাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন।পাহাড়ী ঝর্ণা আর সমুদ্রসৈকত গুলোতে পর্যটকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকায় প্রত্যেক বছরই ঘটছে প্রাণহানি।বিশেষ করে অসতর্কতা ও সাঁতার না জানা কারনে ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। অবস্থাপনায় পড়ে গত চার মাসে প্রান হারায় ৫ পর্যটক এবং আহত হয়েছেন অর্ধ শতাধিক।গাইড ছাড়া বিভিন্ন ঝর্ণায় যাওয়া সময় পথ ভুলে গভীর জঙ্গলে হারিয়ে যাওয়া অনেক পর্যটককে উদ্ধার করেছে সীতাকুণ্ড মডেল থানা পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। তবুও এতে টনক নড়েণি ইজারাদার ও বনবিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। স্থানীয়রা জানান,অনেক সময় দেখা যায় ঝর্ণায় পৌঁছানোর সেই পুরো ঝিরি পথটাই হাঁটু সমান পানিতে ডুবে থাকে।এতে করে পাহাড়ি মাটি ও শ্যাওলাযুক্ত পাথর গুলো অনেক বেশি পিচ্ছিল হয়ে যায়।ঝর্ণার দৃশ্য দেখতে উপরে উঠার সময় পা পিছলে পাথরের ওপর পড়ে অথবা কূপের পানিতে ডুবে যায়।অনেকে আবার সাতার না জেনে গোসল করতে নেমে পানির নিচে তলিয়ে যায়।পর্যটকদের সচেতনতার অভাব।এবং কি ইজারা দেওয়া হলেও বন বিভাগের ইজাদারের উদাসিনতা এবং পর্যটকদের অসর্তকতার এমন দুর্ঘটনা ঘটছে। জানা যায়,গত চার মাসে ঝর্ণা ও সমুদ্রসৈকতে প্রানহানি ঘটেছে অন্তত ৫ পর্যটকের।সর্বশেষ গত (৬ সেপ্টেম্বর ২৩),সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের পাহাড়ে অবস্থিত বিলাশি ঝর্ণায় গোসল করতে নেমে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাইমুল হাসান নামের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এর আগে গত( ২৮ আগস্ট ২৩) উপজেলার বারৈয়ারঢালা ইউনিয়নের ছোট দারোগারহাট পাহাড়ে অবস্থিত সহস্রধারা-২ ঝর্ণার পানিতে ডুবে সোহানুর রহমান (২৬) নামের এক পর্যটকের মৃত্যু হয়। গত (২৪ জুলাই ২৩)উপজেলার বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতে গোসলে নেমে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (আইআইইউসির) নিখোঁজ হওয়া মো. আলী হাসান মারুফ (২৩) ও এনায়েত উল্লাহ (২২) নামের দুই শিক্ষার্থীর মৃতদেহ উদ্ধার হয়।তারা দুইজন আইআইইউসির দাওরা ও কোরানিক সায়েন্স ডিপার্টমেন্টের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। গত(৬ জুলাই ২৩)গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকতে গোসলে নেমে মোঃ মেহেদী হাসান (১৬)নামের এক কিশোর পর্যটকের নিখোঁজ হওয়ার প্রায় ১৮ঘণ্টা পর তার লাশ উদ্ধার করা হয়। পর্যটকরা জানান,পর্যটন এলাকায় যথেষ্ট নিরাপত্তার অভাবে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে।এসব দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন দেশের মেধাবী শিক্ষার্থী, সম্ভাবনাময় তরুণ পর্যটকরা। ঘটনার পর থানা পুলিশ, অভিভাবকদের কাছে লাশ বুঝিয়েই খালাস। কর্তৃপক্ষও সতর্কতামূলক একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দায় মুক্তি সনদ দিয়ে বসে থাকেন। এই বিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এইচ আর এন্টারপ্রাইজের দায়িত্ব থাকা ওয়াসি মাহফুজ মাহি জানান, চলতি বছরের বন বিভাগের কাছ থেকে সহস্রধারা-২ ঝর্ণাটি ইজারা নেয়া হয়।প্রতি পর্যটকের কাছে থেকে প্রবেশ ফি নেওয়া হয় ২০ টাকা।এমনকি পর্যটকের সুবিধার জন্য ২টি ইঞ্জিল চালিত বোট রাখা হয়েছে।যদি কোন পর্যটক বোটে করে ঝর্ণা দেখতে যায় তাহলে যাওয়া আসা ৬০ টাকা করে ভাড়া দিতে হয়।তিনি আরো বলেন,পর্যটকদের টিকেট দেয়ার সময় বিপদজ্জনক স্থানগুলোতে না যাওয়ার জন্য বার বার নির্দেশনা দেয়া হয়।এছাড়াও বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করে সর্তকতামূলক সাইনবোর্ড দেখা থাকলেও পর্যটকরা মানছে না।তাই এধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার নুরুল আলম দুলাল জানান, গত চার মাসে ঝর্ণা ও সমুদ্রসৈকতে প্রানহানি ঘটেছে অন্তত ৫ পর্যটকের।বেশি ভাগ পর্যটকরা অসতর্কতা ও সাঁতার না জানা কারনে এ দুর্ঘটনা ঘটছে।তবে পর্যটন স্থান গুলোতে নেই কোন ট্যুরিস্ট পুলিশ। সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম রফিকুল ইসলাম জানান,দেশের বিভিন্ন জায়গায় থেকে পর্যটকরা সমুদ্রসৈকত ও ঝর্ণা দেখতে এসে প্রায়শই আহত ও নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে।এই ব্যাপারে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করে বিশেষ নজরদারিতে আনা হবে।