বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবিলম্বে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সকল মিথ্যা, গায়েবি ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
একই সাথে তিনি স্বৈরাচার বিরোধী সংগ্রামে নিহত ও আহত হয়েছেন তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও দাবি জানান।
আজ সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডির উদ্যোগে ‘দ্বি-কক্ষ পার্লামেন্ট: উচ্চ কক্ষের গঠন’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় বক্তৃতাকালে তিনি এই আহ্বান জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি আজকের সভা থেকে এই অন্তবর্তী সরকারের কাছে আবারও দাবি উত্থাপন করছি- আমাদের ও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা, হয়রানিমূলক ও গায়েবি মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হোক। আর স্বৈরাচার বিরোধী সংগ্রামে যারা নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আরেকটা কথা এই অন্তবর্তীকালীন সরকারকে বলতে চাই, এখনো আপনাদের প্রশাসনে সেসমস্ত ব্যক্তি রয়ে গেছেন যারা ফ্যাসিস্ট সরকারকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য দুর্নীতি ও দুবৃর্ত্তায়নে মদদ দিয়েছে, তাদেরকে এখনো পর্যন্ত ওই সমস্ত জায়গা থেকে অপসারণ করা হয়নি। আমরা আবারো দাবি জানাই, অতি সত্ত্বর তাদের চিহ্নিত করে সরিয়ে দিয়ে এমন একটা নিরপেক্ষ কাঠামো তৈরি করতে হবে যাতে একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে।’
মূল প্রবন্ধে জাতীয় সংসদ প্রশ্নে জেএসডির প্রস্তবনায় বলা হয়েছে, বিদ্যমান এক কক্ষের জাতীয় সংসদ দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠন যার মেয়াদ হবে ৪ বছর। সংসদের নিম্নকক্ষ হবে ৩ শ’ আসন বিশিষ্ট এবং উচ্চকক্ষ ২ শ’ আসনের।
সংসদের নিম্নকক্ষে দলীয় প্রতিনিধিরা এবং উচ্চকক্ষে শ্রেণী-পেশা-কর্মজীবীর প্রতিনিধিরা থাকবেন। উচ্চ কক্ষ থেকেই নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যেকোনো সংস্কার যে কোনো পরিবর্তন এটা জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া সম্ভব না, উচিতও না। যে কারণে আমরা বলে এসেছি, সবার আগে যেটা দরকার সেটা হচ্ছে যে, আমরা দাবি করেছিলাম যে, ওই সরকারকে পদত্যাগ করে, নির্বাচন কমিশনকে ভেঙে দিয়ে নতুন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। অবশ্য ইতিমধ্যেই সরকারের পতন হয়েছে, সংসদ ভেঙে দেয়া হয়েছে এবং অন্তবর্তীকালীন সরকার তারা দায়িত্ব নিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘এখন যাঁরা এসেছেন আপাতত রাষ্ট্র পরিচালনা এবং নির্বাচনের ব্যবস্থা করবার জন্যে। আমার দল যেটা বিশ্বাস করে যে, এই ধরনের প্রধান সমস্যাগুলো অর্থাৎ পরিবর্তনগুলো, মৌলিক যে পরিবর্তন আসবে সেই পরিবর্তনগুলো বা সংশোধনী যেটাই বলি না কেন আমরা, সেটা কখনই জনগণের মতামত ছাড়া সম্ভব নয়। তার জন্য একমাত্র জায়গা হচ্ছে পার্লামেন্ট।’
তিনি বলেন, ‘সুতরাং পার্লামেন্ট নির্বাচন করতে হবে সেটা যেন একেবারে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হয় সেজন্য নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সেই নির্বাচন হতে হবে এবং নিরপেক্ষ অবাধ নির্বাচন হতে হবে।’
জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, ‘একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন অবশ্যই করতে হবে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের মালিকানা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে কেন্দ্রীয় সংস্কার ছাড়া নির্বাচন দিলে তাতে কোনো লাভ হবে না। এটা আমাদেরকে করতে হবে। সংবিধান সংস্কার ও শাসনব্যবস্থা মেরামত করতে হবে। যারা হত্যা করেছে, তাদের ক্ষমা করা যাবে না। তাদের অবশ্যই বিচার করতে হবে।’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘যেভাবেই হোক এখন যারা অন্তবর্তী সরকার তারা এই গাড়িটা চালাচ্ছেন, ড্রাইভ করছেন তাদের হাতে স্টিয়ারিং। শেষ সিদ্ধান্তটা তাদেরই নিতে হবে। এটা ভাবতে হবে আপনাকে।’
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘প্রত্যক্ষ নির্বাচনের পাশাপাশি সংখ্যানুপাতিক পক্ষ থেকে যাতে আমরা প্রতিনিধি চাই সেই ব্যবস্থা চালু হওয়া দরকার। পাশের দেশ নেপালে তাদের সফল বিপ্লবের পরে তারা গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে এসে সরকার গঠন করেছে, তারা সংসদের পাশাপাশি উচ্চকক্ষ অর্থাৎ সেখানে দুইকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠন করা হয়েছে।’
জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রবের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দীন পাটোয়ারীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশ জাসদের শরীফ নুরুল আম্বিয়া, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, গনসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়ক আবুল হাসান রুবেল, এবি পার্টির ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আবু ইউসুফ সেলিম বক্তব্য রাখেন।
আলোচনা সভায় গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকী, জেএসডির মোহাম্মদ সিরাজ মিয়া, তানিয়া রব, কে এম জাবির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।