গত দুইতিন দিন অনবরত বৃষ্টি হওয়ায় পানি আবার বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ধীর গতিতে পানি নামলেও বন্যা পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি। তবে সোনাইমুড়ীতে হাজার হাজার পরিবার এখনো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। ফলে হাট-বাজারে ব্যবসা-বানিজ্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে যেতে হলে একমাত্র নৌকাই তাদের সম্বল। এসব এলাকার মানুষ খাল-ভরাট হয়ে যাওয়া, যথাসময়ে পরিস্কার না করা, যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলে পানি নিষ্কাশনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। উপজেলায় সোনাইমুড়ি বন্যা পরিস্তিতির কিছুটা উন্নতি হলেও আবার অবনতি হয়েছে। তবে নিচু এলাকায় এখনো মোটামুটি পানি আবারও বেড়েছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকার বাড়ি-ঘরে এখনো পানি রয়েছে বলছেন স্থানীয়রা। তবে সামগ্রিকভাবে বন্যা পরিস্থিতির মোটামুটি উন্নতি হয়েছে। বৃষ্টি থাকায় এবং গত কয়েকদিন বৃষ্টি পাত ও নিম্ন চাপের কারনে পানি আবার বেড়েঁ গেছে। তবে যেভাবে কমার কথা সেভাবে কমেনি। ফলে এখনো অনেকটা কষ্টে আছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। এর মধ্যে ছয় ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে বেশী। জয়াগ, নদনা, বারগাঁও, চাষিরহাট, অম্বরনগর ও নাটেশ্বর এসব ইউনিয়নের বন্যার্তরা এখনো রয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে। জয়াগ কলেজ মাদ্রাসা আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ১৩০০ (তেরশ) লোক আশ্রয় কেন্দ্রে তাকলেও বেশ কিছু অংশ বাড়ি চলে গেছে। যারা গেছে তারা আবার বিপদে পড়েছে। পানি কিছুটা কমলেও তা ঘরে বসবাস করার মতো নয় বলে জানা গেছে। এদিকে, পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে নানা সংকট ও দুর্ভোগ। বেড়ে যাচ্ছে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা। একইসঙ্গে দেখা দিয়েছে সাপের উপদ্রব। এছাড়া কৃষি, মৎস ও প্রাণীসম্পদ খাতে বিপুলৎ পরিমাণ টাকার ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার ১নং জয়াগ ইউনিয়নের আশ্রয়কেন্দ্রের পরিচালনা প্রধান আবদুল গনি পাটোয়ারী মামুন বলেন এমন বন্যা নোয়াখালীতে আর দেখিনি। আমাদের উপজেলায় প্রতিটি ইউনিয়ন আক্রান্ত হয়েছে। এখনো বন্যার শিকার মানুষেরা কষ্টে আছে। তারা না পারছে ঘরে ফিরতে, না পারছে আর আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে। সবখানেই দেখা দিয়েছে খাদ্যসহ নানাবিধ সংকট। ২নং নদনা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কুতুব উদ্দিন সানি ও দক্ষিন সাকতলার মেম্বার মোঃ সিদ্দিক উল্যাহ বলেন, এখনো পানিতে কষ্ট করছে অনেক মানুষ। তারা খাদ্য সংকটে রয়েছে। একইসঙ্গে বেড়ে গেছে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগ। রয়েছে সাপের উপদ্রব। বাড়িতে ফিরতে পারছে না বানভাসীরা। যারা আশ্রয়কেন্দ্রে গেছে তারা ঘরে আসতে পারছে না নানা কারনে। বাড়ি-ঘর এখনো বসবাস উপযোগী না হওয়ায় এবং রান্নার পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় তারা বাড়ি ফিরতে পারছে না। নাটেশ্বর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান স্বপন বলেন, নিচু এলাকায় এখনো অনেক পানি নামতে পারছে না। খাল-নালা জলাশয় ড্রেন ভরাট থাকায় পানি নামছে না। ফলে এখনো দুশ্চিন্তায় রয়েছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষেরা বেশি সমস্যায় আছে। তারা যে পরিমাণ খাদ্য পাচ্ছে তা যথেষ্ট নয়। শিশু খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। অসুস্থরা কষ্টে আছে। অম্বরনগর ইউনিয়নের আবদুর রহিম মাষ্টার (মুক্তিযোদ্ধা) ও কাশিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সদস্য মোঃ শাহআলাম বলেন, এলাকার জসিম তাদের কাছে বলেন সব বন্যার্তরা খুবই দুশ্চিন্তায় আছে। পরিবার আছে আশ্রয়কেন্দ্রে। আমি আছি বাড়ি পাহারায়। সন্তানরা প্রায় না খেয়ে থাকার মতো। শুকনো খাবার খেয়ে কত দিন পারা যায়। ঘরে ফেরার পরিবেশ এখনো সৃষ্টি হয়নি। রান্না কারার চুলা নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে রান্না করা খাবার সংকট। ঘর থেকে পানি নামলেও উঠানসহ পুরো বাড়ির চারপাশে এখনো পানি। রাতে ভয় করে ঘরে থাকতে। সাপের ভয় আছে। সঙ্গে রয়েছে খাদ্যের চিন্তা। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ইসরাত জাহান বলেন গত এক সপ্তাহে হাসপাতালে অধিক ডায়রিয়া রোগী ও সাপের কামড়ের চিকিৎসা নিয়েছেন। প্রতিদিন আসছে পানিবাহিত রোগী। বন্যার্তদের চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য টিম কাজ করছে। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসক দলও রয়েছে।