রাজধানীর ধোলাইখালে খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ একদফা দাবিতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: ভোরের কাগজ
মার্কিন স্যাংশনে সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একটি দৈনিক পত্রিকার বরাত দিয়ে তিনি বলেছেন, স্যাংশন নিয়ে সচিবালয়ে আলোচনা হচ্ছে, যারা সরকারের অবৈধ কাজে সহায়তা করেছে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। প্রশাসন উৎকন্ঠা রয়েছে। বোঝা যাচ্ছে এ সরকারের পতন ঘন্টা বেজে গেছে।
সোমবার (২২) বিকালে রাজধানীর ধোলাইখালে খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ একদফা দাবিতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। প্রথমেই খালেদা জিয়া জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে জানিয়ে ফের তার মুক্তির দাবি জানিয়ে বলেন, তিনি খুবই অসুস্থ, ডাক্তাররা তাকে জরুরি ভিত্তিতে বিদেশে নিতে বলেছে। তাই আমাদের অবিলম্বে মুক্তি নেত্রীকে মুক্তি দিন, অন্যথায় সকল দায় দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।
বিএনপির মহাসচিব অভিযোগ করেন, এই সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যাবহার করে জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। চারদিক আটসাট বেঁধে আরেকটা নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে। আন্তর্জাতিক বিশ্বও বলছে এবার আর একতরফা নির্বাচন হবে না। গত নির্বাচনের অপকর্ম চাপা দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘাটে ঘাটে গিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দিচ্ছে, মিথ্যাচার করছে। এ সময় তিনি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন প্রধানমন্ত্রীকে বিশ্বাস করা যায়? নেতাকর্মীরা হাত উঁচিয়ে বলেন- না, না, বিশ্বাস করা যায় না।
মির্জা ফখরুল বলেন, শুধু মার্কিন স্যাংশন নয়, এদেশের মানুষ এখন স্য্যংশন দিচ্ছে এই সরকারকে। এদেশের মানুষ পরিষ্কার ভাষায় এক বাক্যে বলছে, এখন অনেক হয়েছে, অনেক অত্যাচার, নির্যাতন করেছো, নেতাদের কারাগারে আটক করেছো, আমরা আর সেটা হতে দেবো না। এ জন্য আমরা আন্দোলন করছি। এখনো সময় আছেন, এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কথা ভেবে নিয়ে আপনারা পদত্যাগ করুন, সংসদ বিলুপ্ত করুন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন দিয়ে এই রাজনৈতিক সংকট দূর করুন। অন্যথায় সকল দায়-দায়িত্ব আপনাদেরকেই নিতে হবে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ৩০ বছর আগের মামলায় বিএনপির নয়জনকে ফাঁসি আদেশ দেয়া হয়েছে। একনেতাকে ৭০ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এগুলো করে ২০১৪ ও ১৮ সালের মত আবার তারা ভোটবিহীন নির্বাচন করার পাঁয়তারা করছে। সারা পৃথিবী বলছে বিগত দুটি নির্বাচন চুরি করেছো, এবার নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে। সরকার বলছে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, তা দেশের মানুষতো দূরের কথা, পাগলও বিশ্বাস করে না।
তিনি অভিযোগ করেন, এ লুটেরা সব খেতে খেতে নদীর বালুও খেয়ে ফেলেছে। চাঁদপুরে ৬ হাজার কোটি টাকার বালু খেয়ে ফেলেছে। আর কিছুদিন ক্ষমতায় থাকলে দেশের অবশিষ্টগুলোও খেয়ে ফেলবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আগেও একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছিলো। এবার তারা কৌশলটা পাল্টিয়েছে। আদালতকে ব্যবহার করে তারা তত্ত্বাবধায়ক প্রথা বাতিল করে অবৈধ ক্ষমতাকে জায়েজ করে নিয়েছে। এ দাবিতো আমরা করিনি। এ দাবিতে ২২ জনকে পুড়িয়ে মারলেন। বিচারকের মধ্যে ১০ জনের মধ্যে ৮ জনই এ প্রথা বাতিলের বিপক্ষে বলেছিলেন। তারপরও গায়ের জোরে করেছেন।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, জাতির এই চরম ক্লান্তিলগ্নে শঙ্কা হচ্ছে – ভোটের অধিকার পাবো কি পাবো না, আমাদের নেত্রীকে মুক্ত করতে পারবো কিনা জানি না, সবকিছু নির্ভর করছে আপনাদের ওপর। এ সরকার সহজ ভাবে কথা শুনবে না, তরঙ্গের ওপর তরঙ্গ সৃষ্টি করে আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের ধাক্কা দিয়ে সরাতে হবে। তাই আন্দোলনের তরঙ্গ সৃষ্টি করতে হবে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে কাজ না হলে কঠোর আন্দোলনে যেতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে রাজপথে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তত থাকতে হবে।
এর আগে সোমবার বেলা ১১ থেকেই সমাবেশে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নিতে মিছিল স্লোগান নিয়ে সমাবেশ স্হলে জড়ো হতে থাকে। এ সময় তারা খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে ‘এই মূহুর্তে দরকার খালেদা জিয়ার সরকার।, লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই, ‘বাঁচতে হলে লড়তে হবে’ মুক্তি, মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই এমন স্লোগান দিতে থাকেন। ধোলাইখাল চৌরাস্তায় এ সমাবেশ হওয়ার কথা থাকলেও এর পরিধি রায় সাহেব বাজার, টিপু সুলতান রোড, এবং লক্ষ্মীবাজার পর্যন্ত বিস্তৃতি হয়ে পড়ে। ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহবায়ক আব্দুস সালাম।
মির্জা ফখরুল বলেন, এখন বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে। আপনারা যতই চেষ্টা করেন এই দেশের মানুষকে আর ঘরে ফেরাতে পারবেন না। আমরা শান্তিপূর্ণ আছি, শান্তিপূর্ণ থাকবো, শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করে যাবো এবং আশা করব এই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের কথা শুনে এই শেখ হাসিনার শুভ বুদ্ধির উদয় হবে, পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা দেবে। সরকারের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, তা যদি না হয়, বাংলাদেশের মানুষ জানে কি করে দাবি আদায় করতে হবে। তারা টেনে হিঁচড়ে আপনাদেরকে নামাবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস নজরুল ইসলাম খান বলেন, পত্রিকার দেখছিলাম ডেঙ্গু রোগীদের স্যালাইন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না, ভিসা স্যাংশনের পরে ডায়রিয়ায় স্যালাইন পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। দেশের মানুষের কি হবে ভাবতে পারেন? তিনি বলেন, যারা সরকারকে অবৈধ সরকারকে সহায়তা করেছে তারা সবাই ভিসা স্যাংশনের আওতায় পড়ে যাচ্ছে। খুব বিপদে আছে তারা। আমরা ভাবছি দেশটাকে এমন পরিস্থিতিতে ফেললেন তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া যায়।
খালেদা জিয়ার প্রতি অবিচার করছে সরকার এমন অভিযোগ তুলে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, মায়ের মতো আমাদের নেত্রী (খালেদা জিয়াকে) তিলে তিলে মেরে ফেলা হচ্ছে। কদিন আগে একজন আলেম মারা গেলেন, বাজারে কথা আছে তাকে ষড়যন্ত্র করে ভুল চিকিৎসায় মেরে ফেলা হয়েছে, আমরা শংকায় আছি খালেদা জিয়ার অবস্থা তার মতো না হয়।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসার না দেয়ার একমাত্র কারণ, তার জনপ্রিয়তাকে সরকার ভয় পায়। আমি তার একজন কর্মী হিসেবে সরকারকে বলবো- আপনারা বড় ভুল করছেন, কোনো অঘটন ঘটলে পালানোর পথ পাবেন না। তার কিছু হলে সঙ্গে সঙ্গে রাজপথে নেমে এসে সরকারের পতন ঘটাবো, কিন্তু এমন পরিস্থিতি তৈরি হোক, আমরা তা চাই না। বিএনপির আমলে একাধিক দণ্ডপ্রাপ্ত নেতা বিদেশে চিকিৎসার নজির আছে। আসল শক্তিশালী লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ঢাকা দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব লিটন মাহমুদের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সহ-স্বেচ্ছাসেবক সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, কাজী আবুল বাসার, রওনকুল ইসলাম টিটু, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, অর্পণা রায়, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহবায়ক নবী উল্লাহ নবী, মোশাররফ হোসেন খোকন, আব্দুস সাত্তার, যুবদলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক খন্দকার এনাম প্রমুখ।