লালমনিরহাট জেলায় টানা তিন দিনের ভারী বর্ষণে তিস্তা নদীতে পানি প্রবাহ বেড়ে ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার কাছাকাছি দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বন্যার শঙ্কায় রয়েছে তিস্তা নদীর বাম তীর ও এ জেলার মানুষ। সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩ টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় তিস্তা নদীঃ ডালিয়া পয়েন্ট -পানির সমতল ৫১.৭০ মিটার (বিপদসীমা = ৫২.১৫ মিটার) বিপদসীমার ৪৫ সে.মি নিচে । কাউনিয়া পয়েন্ট – পানির সমতল ২৮.৭৮ মিটার (বিপদসীমা = ২৮.৭৫ মিটার) যা বিপদসীমার ৩ সে.মি উপরে। ধরলা নদীঃ শিমুলবাড়ি পয়েন্ট -পানি সমতল ৩০.৩৪ মিটার, (বিপদসীমা = ৩১.০৯ মিটার) যা বিপদসীমার ৭৫ সে.মি নিচে। পাটগ্রাম পয়েন্ট – পানি সমতল ৫৭.৩০ মিটার (বিপদসীমা = ৬০.৩৫ মিটার)। যা বিপদসীমার ৩০৫ সে.মি নিচে। লালমনিরহাটে গতকাল সকাল ০৮ টা হতে আজ সকাল ০৮ টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাতঃ ৩১ মিলিমিটার। ব্যারেজ ও নদী তীরবর্তী মানুষ জানান, লালমনিরহাট জেলা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে গত শুক্রবার সকাল থেকে রোববার রাত পর্যন্ত টানা ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে ফসলের ক্ষেত ও খেলার মাঠসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। চার দিকে শুধু পানি আর পানি। বৃষ্টির কারণে লালমনিরহাটের সব নদ-নদীর পানি প্রবাহ বেড়েছে। টানা ভারী বর্ষণের কারণে ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ বেড়েছে বলে জানিয়েছে ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ। নদীপাড়ের মানুষেরা জানায়, পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে তিস্তা নদীর বাম তীরবর্তী লালমনিরহাট জেলার নিম্নাঞ্চল গুলো প্লাবিত হয়েছে। এতে বন্যায় শঙ্কায় চিন্তিত এলাকাবাসী। চলতি মৌসুমে কয়েক দফায় বন্যা হলেও, তা বেশি সময় স্থায়ী ছিল না। মৌসুমের শেষ দিকে বড় বন্যার আশঙ্কা করছেন নদীপাড়ের মানুষ। আশ্বিন মাসের বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠা নিয়েও চিন্তিত এ জনপদের মানুষ। তিস্তা নদী লালমনিরহাট জেলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিয়ে প্রবাহিত। জেলার সবক’টি উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলা তিস্তা নদীতে বন্যা দেখা দিলে তা পুরো জেলাকে দুর্ভোগে ফেলে। তিস্তাপাড়ে বন্যা হলে জেলার পাঁচটি উপজেলা বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাতীবান্ধা উপজেলা। মহিষখোচা এলাকার মানজেদুল ইসলাম জানান, টানা বৃষ্টির কারণে তিন দিন থেকে পানি বাড়ছে তিস্তায়। নদীপাড়ের নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। শুধু চরাঞ্চল নয়, সব এলাকার নিম্নাঞ্চলের ফসলের ক্ষেত রাস্তা ঘাট ও পুকুর ডুবে গেছে। চরাঞ্চলের পায়ে হেঁটে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। চরাঞ্চলে এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি যেতে নৌকা ব্যবহার করতে হচ্ছে। ভোটমারীর সোলেমান আলী বলেন, নদীতে পানি বাড়লেই চরাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বর্ষাকালে বন্যা নিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয়। তিস্তায় পানি বাড়তে শুরু করেছে। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। বন্যার শঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে নদীপাড়ের মানুষদের। ছোটো-খাটো বন্যা হলেও এ বছর বড় কোনো বন্যা হয়নি। বৃষ্টি দেখে মনে হচ্ছে এটিই হবে এ বছরের বড় বন্যা। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ দৌলা বলেন, টানা ভারী বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়েছে। সবগুলো জলকপাট খুলে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। সোমবার বিকেল ৩ টায় তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার আট সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।