সিরাজগঞ্জে কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে নবরত্ন মন্দির। প্রায় পাঁচশো বছরের পুরনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুলের এই নবরত্ন মন্দির। মূল মন্দিরের আয়তনে ১৫ বর্গমিটারেরও বেশি। মন্দিরের নির্মাণ সময় সম্পর্কিত কোনও শিলালিপি পাওয়া যায়নি। আনুমানিক ১৭০৪-১৭২৮ সালের মধ্যে নবাব মুর্শিদকুলি খানের শাসনামলে রামনাথ নামক জমিদার মতান্তরে তশিলদার এই মন্দির নির্মাণ করেন। দুইপাশের ধান ক্ষেতের বুক চিড়ে সেখান থেকে ছোট্ট একটি মেঠো পথ আঁকাবাঁকা এই পথের ধারেই পোড়ামাটির কাব্যে গাঁথা অনন্য এক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। বাংলাদেশে প্রাচীন যেসব হিন্দু মন্দির দেখতে পাওয়া যায় সেগুলোর অন্যতম একটি এই হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দির। তিনতলা বিশিষ্ট এই স্থাপনার ওপরের রত্ন বা চূড়াগুলো প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। মূল মন্দিরের বারান্দায় ৭টি ও ভেতরের দিকে ৫টি প্রবেশপথ আছে। দ্বিতীয় তলায় কোনও বারান্দা নেই। হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দির তিনতলা বিশিষ্ট। এখানে আলাদা আলাদা কক্ষে ৯টা বিগ্রহ রয়েছে। তাই নবরত্ন মন্দির হিসেবে পরিচিতি পায়। পুরো মন্দিরের বাইরের দিক পোড়া মাটির অলঙ্করণে ঢাকা। এসব অলঙ্করণে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নানান দেবদেবীর মূর্তি, লতা-পাতা ইত্যাদি। রামনাথ ভাদুরী দিনাজপুরের কান্তজি মন্দিরের মতই এখানে একটি মন্দির তৈরি করেন। হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দিরের আশপাশে আরও তিনটি ছোট মন্দির রয়েছে। নবরত্ন মন্দিরের উত্তর পাশে আছে শিব-পার্বতী মন্দির। পাশে দোচালা আকৃতির চন্ডি মন্দির এবং দক্ষিণ পাশের পুকুরের পশ্চিম পাড়ে আছে শিব মন্দির। সবগুলো মন্দিরেরই বর্তমানে দেখভাল করছে সরকারের প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর। কালের বিবর্তনে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত, দেশ বিভাগ ও রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে হারিয়ে যায় জমিদারের পূর্ব পুরুষেরা। যুগযুগ ধরে কালের সাক্ষী হয়ে ঝোঁপঝাড় বুকে নিয়ে লুকিয়ে ছিল এই নবরত্ন মন্দির। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে দেশের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ ঐতিহ্যের এই নিদর্শন খুঁজে বের করেন। ভক্তদের রাত্রি যাপনের জন্য রয়েছে হাটিকুমরুলে বেশ কিছু আবাসিক হোটেল। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ জেলা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড. সুকুমার চন্দ্র দাস বলেন, মন্দিরের চারপাশে জায়গাগুলো দখলমুক্ত করে পর্যটকদের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে ধর্মীয় ভক্তবৃন্দের সুবিধাসহ এই মন্দিরটি আরও হতে পারে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা এ্যাড. বিমল কুমার দাস বলেন, ১৯৮৬ সালে যে সিএস রেকর্ড হয় তাতে মন্দিরটি দোল মন্দির নামে রেকর্ড হয়। যা আমাদের প্রতিবেশী ভারতে উদযাপিত হয় হোলি উৎসব হিসেবে। উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. উজ্জ্বল হোসেন বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষথেকে এখানে আগত বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীদের সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়। এছাড়া দীর্ঘদিনের পুরাতন এই মন্দিরটিকে দর্শনার্থীকে আকৃষ্ট করার জন্য দেশে এবং বিদেশেও প্রচারণা চালানো হচ্ছে।