নিজের সিদ্ধান্তেই অনড় থাকলেন তামিম ইকবাল। চট্টগ্রামে গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন ডেকে বিদায় বলে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে এবং সেটি কার্যকর আজ থেকেই। তার মানে চলতি আফগানিস্তান সিরিজের বাকি দুই ওয়ানডেতেও তাকে পাচ্ছে না বাংলাদেশ দল। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) চেষ্টা করেছে তামিমকে এ সিদ্ধান্ত থেকে নিবৃত্ত করতে। কিন্তু তামিম সে অনুরোধে সাড়া না দিয়ে শেষ পর্যন্ত অবসরের ঘোষণাই দিলেন। তবে তার অবসর নিয়ে এখনই কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া বিসিবি দেবে না। তামিমের অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে জানতে চাইলে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনার প্রধান জালাল ইউনুস মুঠোফোনে প্রথম আলোকে আজ বলেছেন, ‘এ নিয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করব না। আমরা বিষয়টা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করব, তামিমের সঙ্গেও কথা বলব। তারপর ৮ জুলাই এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাব।’ তামিমের পরিবর্তে আফগানিস্তান সিরিজের শেষ দুই ওয়ানডেতে কে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দেবেন, সে ব্যাপারেও কিছু বলেননি জালাল ইউনুস। সে সিদ্ধান্ত পরে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে চলতি সিরিজে যেহেতু অলিখিতভবে লিটন দাস সহ-অধিনায়ক, ফলে বাকি দুই ম্যাচে তারই নেতৃত্ব দেওয়ার কথা। আফগানিস্তান সিরিজ কাভার করতে চট্টগ্রামে আসা সাংবাদিকদের পরশু রাতেই তামিম জানান, তিনি সংবাদ সম্মেলন করে কিছু কথা জানাতে চান। এর পর থেকেই কৌতূহল, কী বলতে পারেন তামিম? বিভিন্ন সূত্রে প্রথম আলো অবশ্য কাল রাতেই জানতে পারে, তামিম তার ক্যারিয়ার নিয়ে বড় কোনো সিদ্ধান্তই নিতে যাচ্ছেন। সেটি হতে পারে ওয়ানডে নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো অথবা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকেই বিদায় বলে দেওয়া। তামিমের সংবাদ সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত কাল রাতেই পৌঁছে যায় বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানসহ বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কানে। কিন্তু রাতের বেলা অনেক চেষ্টা করেও তারা তামিমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। তামিম তাদের কারও ফোন ধরেননি, খুদে বার্তার জবাবও দেননি। শেষ পর্যন্ত আজ সকালে তামিমের সঙ্গে যোগাযোগ হয় বিসিবির দুই পরিচালকের সঙ্গে। মুঠোফোনে তারা তামিমকে এমন সিদ্ধান্ত না নিতে অনুরোধ করেন। তামিমকে তারা বলেন, ভারতে অনুষ্ঠেয় এ বছরের ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত তাকেই ওয়ানডে দলের অধিনায়ক রাখার চিন্তা বিসিবির। এ ছাড়া একজন ব্যাটসম্যান হিসেবেও তামিম চাইলে অনায়াসে আরও বছর দুয়েক ক্রিকেট খেলতে পারেন। তামিম তবু নিজের সিদ্ধান্তেই অটল থাকার কথা জানান। একপর্যায়ে বোর্ড কর্মকর্তারা তাকে এও বলেন, প্রয়োজনে আফগানিস্তান সিরিজের বাকি দুই ম্যাচে তিনি বিশ্রাম নিতে পারেন। যে কোমরের ব্যথা আর ফিটনেস নিয়ে তার সংগ্রাম, সেটি কাটিয়ে উঠতে এশিয়া কাপের আগে চিকিৎসাও করাতে পারেন, যেন এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপে তিনি পুরো ফিট হয়ে খেলতে পারেন। তামিম সাড়া দেননি তাতেও। কেন হঠাৎ অবসরের সিদ্ধান্ত, সে ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলনে তামিম কিছু না বললেও সেটা অনুমান করা কঠিন কিছু নয়। তার ফিটনেস নিয়ে সম্প্রতি বিসিবি সভাপতির বক্তব্য আহত করে থাকতে পারে তাকে। তবে এ রকম আলোচনা নতুন কিছু নয়। তামিমের ফিটনেস, মাঝেমধ্যেই খেলা থেকে বিশ্রাম নেওয়া, এসব নিয়ে বোর্ডের মধ্যে নেতিবাচক আলোচনা আছে আগে থেকেই। ১৬ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে ফেলার পর ধারাবাহিকভাবে এমন আচরণ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছিল তামিমকে। অবসরের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিসিবির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথোপকথনেও তামিম এই বিষয়গুলো এনেছেন বলে জানা গেছে। বিষয়গুলোকে নিজের জন্য সম্মানজনক মনে করেননি তামিম। এ ছাড়া কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের ব্যাপারেও তার কিছুটা ক্ষোভ আছে। তামিম নাকি বলেছেন, যে পরিমাণ চাপ এ মুহূর্তে তাঁকে নিতে হচ্ছে, সেটা নেওয়ার মতো মানসিক অবস্থায় নেই তিনি। এর চেয়ে খেলা ছেড়ে পরিবারকে সময় দেওয়াটাই শ্রেয় মনে করছেন ৩৪ বছর বয়সী এই বাঁহাতি ওপেনার। সংবাদ সম্মেলন শেষে টিম হোটেল থেকে বাসায় চলে গেছেন তামিম। সংবাদ সম্মেলনে তামিম জানিয়েছেন, অবসরের সিদ্ধান্ত হুট করে নেওয়া নয়। এ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করেছেন তিনি। তবে জানা গেছে, প্রথমে তামিমের চিন্তা ছিল শুধু টেস্ট ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানো। ওয়ানডে খেলতে চেয়েছিলেন ভারত বিশ্বকাপ পর্যন্ত। কিন্তু সেটা আর হলো না। এর আগে গত বছরের ২২ জুলাই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তিনি।