মিরপুরের সবুজ ঘাসের মাঠে গল্প লিখেছেন লিটন দাস, নাজমুল শান্ত, তাসকিনরা। ব্যাট ও বল হাতে রূপকথার গল্প লিখে ইতিহাসের সোনালি পাতায় চিরস্থায়ী হয়েছেন টাইগাররা। ৫৪৬ রানের অবিশ্বাস্য জয় তুলে আকাশসমান উচ্চতায় বাংলাদেশকে ঠাঁই দিয়ে স্বপ্নের নায়ক হয়েছেন নাজমুল শান্ত, লিটনরা। গতকাল আফগানিস্তানের বিপক্ষে দিনের প্রথম সেশনে স্বপ্নের জয় তুলে শুধু ইতিহাস সেরা নয়, চলতি শতাব্দীর সেরা জয়ও পেয়েছে বাংলাদেশ। ১৪৬ বছরের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে রানের ব্যবধানে এর চেয়ে বড় জয় রয়েছে সাকুল্যে দুটি। ৫০০-এর ওপর জয় রয়েছে মোট ৪টি। যার তিনটিই গত শতাব্দীর। লিটন দাসের অধিনায়কত্বের অভিষেক টেস্টে বাংলাদেশ এমন এক জয় পেয়েছে, যা পায়নি এশিয়ার টেস্ট খেলুড়ে বাকি চার দেশ। টেস্টে শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় জয় ৪৬৫ রানের। রানের হিসাবে পাকিস্তানের বড় জয় ৩৭৩ রানে, ভারত ৩৭২ রানে এবং আফগানিস্তানের জয় ২২৪ রানে। ২০১৯ সালে চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের কাছে টেস্ট হেরেছিল ২২৪ রানে। সেবার সাকিব বাহিনীকে একাই গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন লেগ স্পিনার রশিদ খান। মিরপুরে ওই হারের মধুর প্রতিশোধ নিয়েছে বাংলাদেশ। যদিও টেস্ট ম্যাচটি খেলেননি দুই দলের দুই তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও রশিদ খান। আঙুলের চোটে সাকিব খেলেননি টেস্টে। রশিদকে বিশ্রাম দিয়েছে দেশটির ক্রিকেট বোর্ড। সাকিবের অনুপস্থিতিতে অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক হয়েছে লিটনের। নেতৃত্বের অভিষেক টেস্টেই স্বপ্নের এক জয় তুলে ইতিহাসের সোনালি পাতায় ঠাঁই নিয়েছেন তিনি। এর আগে তার নেতৃত্বে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে টাইগাররা। যদিও একটি মাত্র টি-২০ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে হারের তিক্ত স্বাদ নিয়েছেন লিটন। অধিনায়কত্বের টেস্ট অভিষেকে টাইগারদের মধ্যে জয় পেয়েছেন মাশরাফি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৯৫ রানে এবং সাকিব ৪ উইকেটে ওয়স্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। প্রথম ইনিংসে নাজমুল শান্তের সেঞ্চুরিতে (১৪৬) বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৩৮২ রান। জবাবে শরিফুল ইসলাম, ইবাদতের সাঁড়াশি আক্রমণে আফগানিস্তান অলআউট হয় ১৪৬ রানে। ২৩৬ রানে এগিয়ে থেকেও সফরকারীদের ফলোঅন করাননি লিটন। দ্বিতীয় ইনিংসে নাজমুল (১২৪) ও মুমিনুলের (১২১) জোড়া সেঞ্চুরিতে দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেটে ৪২৫ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। টার্গেট দেয় ৬৫২ রানের। তৃতীয় দিন ১১ ওভারে ২ উইকেটে ৪৫ রান তুলে দিন শেষ করে। গতকাল আরও ২২ ওভার ব্যাটিং কওে ৯ উইকেটে ১১৫ রান তুলে। তাসকিনের বাউন্সারে কনুইয়ে ব্যথা পাওয়ায় ব্যাট করতে পারেননি জহির।
ইতিহাস সেরা টেস্ট ম্যাচটি লিটনের পাশাপাশি বিশেষ কিছু নাজমুল শান্ত, মুমিনুল হক ও তাসকিনের জন্য। মুমিনুলের পর দ্বিতীয় ক্রিকেটার টেস্ট ক্রিকেটের উভয় ইনিংসে জোড়া সেঞ্চুরি করেছেন নাজমুল শান্ত। প্রথম ইনিংসে ১৪৬ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ১২৪ রান করে ম্যাচ সেরা হয়েছেন ২৩ টেস্ট খেলা নাজমুল। শতাব্দী সেরা টেস্টটি নতুন করে জন্ম দিয়েছে সাবেক অধিনায়ক মুমিনুলকে। ২০২১ সালের এপ্রিলে পাল্লেকেলেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ তিন অংকের জাদুকরী ইনিংস ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। এই সেঞ্চুরিটি তার ৫৬ টেস্ট ক্যারিয়ারের ১২তম এবং বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বাধিক।