খুলনার দাকোপে অধিকাংশ খেয়াঘাটে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিটি ঘাটে টোল আদায়ের মূল্য তালিকা ঝুলানোর কথা থাকলেও কোন প্রকার সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না ইজারাদাররা। পাশাপাশি লঞ্চঘাট ও ফেরি পারাপারে একই অবস্থা বিরাজমান। ফলে প্রতিদিন হাজারো যাত্রী হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, ৩টি দ্বীপের সমন্বয় গঠিত এই উপজেলা। এর প্রত্যেকটি দ্বীপের চারপাশে নদী বেশষ্ঠিত হওয়ায় এখানে পারাপারের জন্য খেয়াঘাটের সংখ্যাই বেশি। উপজেলা আন্ত জেলা খেয়াঘাট রয়েছে ৪টি ও আন্ত উপজেলা খেয়াঘাট ৭টি এবং ১৯টি আন্ত ইউনিয়ন ঘাট। এছাড়া ৬টি লঞ্চঘাট ও ৩টি ফেরিঘাট রয়েছে। এসব অধিকাংশ ঘাটগুলি স্থানীয় ও বহিরাগত প্রভাবশালী ব্যক্তিরাই নানা কৌশলে নাম মাত্র পাটনিজীবিদের নামে ইজারা নিয়েছেন। ইজারাদাররা আদায়ে পটু কিছু চিহ্নিত ব্যক্তিদের বসিয়েছেন ঘাটে। তারা সরকারি মূল্য তালিকা ছাড়াই যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করছেন দ্বিগুণ টোল। আবার যাত্রীদের সাথে খারাপ ব্যবহারও করছেন বলে, স্থানীয় জনসাধারণ ও যাত্রীদের অভিযোগ। এছাড়া গরু, ছাগল, ভেড়া, মুরগীর বাচ্চা, মটর সাইকেল, ভ্যান, বাইসাইকেলসহ ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন মালামালের বোঝা প্রতিও ইচ্ছামত টোল আদায় করে চলেছেন। আবার রাত সাড়ে ৮টার পর বিশেষ কয়েকটি ঘাটে মাঝিদের মর্জিতে তাদের চাহিদা পুরন করে পারাপার হতে হয়। তা ছাড়া প্রত্যেক ঘাটে দুইটি খেয়ার নৌকা রাখার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। কয়েকটি ঘাটে আবার ইজারাদাররা নিয়মের তোয়াক্কা না করে নাম মাত্র খেয়া নৌকা রেখে শুধু জলদি নৌকায় পারাপার করছেন। এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে যাত্রীদের সাথে হচ্ছে চরম বাক বিতন্ডা এমনকি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে। মাঝে মধ্যে আবার অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে ভ্রাম্যমান আদালতে দুই একজন ঘাট ইজারাদারকে জরিমানা করলেও কখনো থেমে নেই অতিরিক্ত টোল আদায়।খেজুরিয়া এলাকার সমাজ সেবক ও উপজেলা কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সত্যজিত গাইন জানান, কিছুদিন আগে আমি দুইটি টিভি কিনে নিয়ে আসার পথিমধ্যে বাজুয়া দিগরাজ খেয়া পারাপারের সময়ে আমার কাছে ঘাট ইজারাদারের লোকজন ১০০ টাকা দাবি করে। আমি উক্ত টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তারা আমার সাথে চরম দূরব্যবহার করে টাকা নেয়। এসময়ে আমি বিষয়টি উপরি মহলে জানাতে চাইলে তারা আমাকে বলে কোন জায়গায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও কাজ হবে না। চালনা পৌরসভার আচাঁভূয়া এলাকার কৃষক খানজাহান মোল্যা বলেন, প্রায়ই ঘাটে অতিরিক্ত টোল আদায় করা হচ্ছে। তা ছাড়া কোন ঘাটে টোল আদায়ের মূল্য তালিকাও নেই। এতে যাত্রীরা প্রতিনিয়ত হয়রানির স্বীকার হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে তিনি গত বছর একটি অভিযোগ করেছিলেন। তবে এভাবে যাত্রীদের হয়রানির হাত থেকে রক্ষার জন্য এঘটনার প্রতিকার হওয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন। তাদের মত একাধিক যাত্রীর একই অভিযোগ। এবিষয়ে কামারখোলা ইউপি চেয়ারম্যান পঞ্চানন মন্ডল জানান, খেয়াঘাট ইজারা নিয়ে সরকারের রাজস্বের টাকা বাকি রেখে যেসব ইজারাদাররা অতিরিক্ত টোল আদায় করছে এবিষয়ে গত মাসিক সভায় আলোচনা হয়েছে। এ মাসের সভায় আবারও উপস্থাপন করা হবে। এব্যাপারে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পাপিয়া সুলতানা বলেন, অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে আমাকে এখনো পর্যন্ত কেউ লিখিত বা মৌখিকভাবে জানায়নি। তবে এধরণের ঘটনা ঘটে থাকলে খোঁজ খবর নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।