মোল্লাহাটের আলোচিত স্কুল শিক্ষার্থী সুমাইয়া(১৬) অপমৃত্যুর ৬ দিন পেরিয়ে গেলেও মামলা নেয়নি মোল্লাহাট থানা পুলিশ। এমনি অভিযোগ করেছেন নিহত স্কুল শিক্ষার্থী সুমাইয়ার পরিবারের সদস্যরা। সুমাইয়া বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার চুনখোলা ইউনিয়নের ছোট কাচনা গ্রামের সাবেদ শেখের মেয়ে ও কাচনা দারিয়ালা কুশলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেনীর ছাত্রী। সরেজমিনে নিহত সুমাইয়ার গ্ৰামের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, পাশ্ববর্তী দারিয়ালা গ্ৰামের ফেলু শেখের ছেলে নুরু শেখ(২৫) দীর্ঘদিন ধরে নিহত সুমাইয়ার সাথে প্রেমের সম্পর্ক করে আসছিলেন। একপর্যায়ে এই ঘটনা এলাকায় জানাজানি হওয়ার পর নুরু শেখের বড়ভাই (সচিবালয়ে চাকুরীজীবি) বাকি বিল্লাহের নেত্রীত্বে উভয় পরিবারের সদস্যরা সুযোগ সুবিধা মত সময়ে বিবাহ দিতে একমত পোষণ করেন। এ সুযোগে নুরু শেখ সুমাইয়াকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মাঝেমধ্যে শারীরিক মেলামেশা করে আসছিল। একপর্যায়ে নুরু শেখ সুমাইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দিলে সুমাইয়া বিয়ের জন্য চাপ দেয়। নুরু শেখ বিয়ে না করে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য সুমাইয়ার সাথে বিভিন্ন কৌশলে খারাপ আচরণ শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩ মে নুরু শেখ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সুমাইয়াকে তাদের বাড়িতে ডেকে নেয়। এসময় প্রতারক নুরু শেখের পিতা ফেলু শেখ পরিবারের অন্যান্য সদস্য আলিম শেখ ও সোনা মিয়া শেখ সুমাইয়াকে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি দেখিয়ে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে চরিত্রহীন মেয়ের আখ্যা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।সুমাইয়া বাড়ীতে এসে ঘটনাটি মা, ভাই ও চাচা জাকারিয়াকে জানায়। ওইদিন বিকেলে সুমাইয়ার বাড়ীর লোকজন নুরুর বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের কাছে আকুতিমিনতি করে সুমাইয়াকে বাড়ীর বৌ করার অনুরোধ করেন। এসময় নুরুর পরিবারের সদস্যরা তাদের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করে। একপর্যায়ে ৩ মে রাতে সুমাইয়া নুরু শেখের সাথে রাতভর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ম্যাসেজ ছোড়াছুড়ি ও কথাকাটাকাটি করেন। পরদিন ৪ মে সকালে বিষপান করলে পরিবারের লোকজন প্রথমে মোল্লাহাট এবং পরবর্তীতে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্য বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ওই দিন গোপালগঞ্জ হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত শেষে রাতে মৃতদেহ দাফন করা হয়। এবিষয়ে মৃত সুমাইয়ার ভাই বণিআমিন সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, প্রতারক নুরু শেখ তার বড়ভাই সচিবালয়ের চাকুরীজীবি বাকি বিল্লাহের পরামর্শে আমার বোনের সাথে বিয়ের নামে প্রতারণা করেছে। তার প্রতারনা ও প্ররোচনায় আমার একমাত্র বোন বিষপান করে আত্মহত্যা করেছে। তিনি আরো বলেন, সত্যঘটনা তুলে ধরে মোল্লাহাট থানায় মামলা করতে গেলে অজানা কারণে নিয়মিত মামলা না নিয়ে নামমাত্র অভিযোগ নিয়ে ফেলে রেখেছে মোল্লাহাট থানা পুলিশ। আমাদের ধারনা বাকি বিল্লাহ সচিবালয়ে চাকুরীর সুবাধে প্রভাবশালী ও পয়সাওয়ালা হওয়ায় ওসি সাহেব তাদের পক্ষ নিয়েছে। শোকাহত সুমাইয়ার মা কবিতা বেগম কান্না বিজড়িত কন্ঠে বলেন, ওই প্রতারক পরিবারের জন্য আমার একমাত্র সহজ সরল মেয়ে কে হারিয়েছি আমি প্রশাসনের কাছে উপযুক্ত বিচার চাই। কাচনা দারিয়ালা কুশলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোল্লা জমির হোসেন বলেন, সুমাইয়া আমার স্কুলের ৯ম শ্রেনীর নিয়মিত ছাত্রী ছিল, সে খুব বিনয়ী ও ভদ্র একটা মেয়ে। তার অকাল মৃত্যুতে আমাদের স্কুল গভীর ভাবে শোকাহত। চুলখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনোরঞ্জন পাল বলেন, আমি মৃত্যুর খবর শুনে খোঁজখবর নিয়েছি। মেয়েটির মাত্র ১৫ বছর বয়স, ৯ম শ্রেনীর ছাত্রী। ৯ নং ওয়ার্ডের সদস্য ফকির তরিকুল ইসলাম জানান, ওই ছেলে-মেয়ের প্রেম ঘটনা এলাকার সকলে জানে। পারিবারিক ভাবে বিবাহের সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল। ছেলেদের পরিবারের পক্ষ থেকে এমন প্রতারনা করা সম্পন্ন অমানবিক। এবিষয়ে জানতে অভিযুক্ত নুরু শেখের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে ওই পরিবারের বড় ছেলে সচিবালয়ের চাকুরীজীবি বাকি বিল্লাহ মুঠোফোনে বলেন, আমার মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও আওয়ামীলীগের রাজনীতি করি ওরা রাজাকার ও বিএনপি পন্থী, আমাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে মেয়ে দিয়ে ফাঁদ পেতেছে। এসকল অভিযোগের বিষয়ে মোল্লাহাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সোমেন দাস পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অভিযোগের ঘটনার সত্যতা না থাকায় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। গোপালগঞ্জে ২৫০ শয্য বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ময়না তদন্ত হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট আশার পরে কার্যকরি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।