পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বাংলাদেশ রুরাল ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিআরডিবি) অফিসে চলছে হরিলুট। উপজেলা সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ সোসাইটি (ইউসিসি) চেয়ারম্যান ও বিআরডিবি কর্মকর্তা সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন ধরে এ অনিয়ম-দুর্নীতি করে আসলেও অদ্যবধি ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। বিআরডিবি’র বিপুল পরিমান অর্থ লোপাটের পর ইউসিসি’র অভ্যন্তরীন নীরিক্ষা কমিটির রিপোর্টে এর সত্যতা উঠে আসলেও ফের যাচাই বাছাই কমিটি গঠন ও সমবায় কর্মকর্তার নেতৃত্বে পুন:তদন্ত কমিটি গঠনের নামে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তৎপর অভিযুক্তরা।-তথ্য নির্ভরযোগ্য সূত্রের সূত্র জানায়, বিআরডিবি’র অধীন কৃষক সমিতি রয়েছে ২০৭টি, বিত্তহীন পুরুষ সমবায় সমিতি ৩৯টি, বিত্তহীন মহিলা সমবায় সমিতি ৩৪টি, পুরুষ ভূমিহীন সমবায় সমিতি ১টি এবং মহিলা ভূমিহীন সমবায় সমিতি রয়েছে ১টি। করোনাকালীন এ সকল সমবায়ীদের জন্য বরাদ্দকৃত স্বল্প সুদের বিশেষ প্রনোদনা ঋনের ২৮ লক্ষ টাকা সহ বিভিন্ন সময় প্রাপ্ত সরকারী অনুদান বিতরন করা হয়েছে উপজেলা প্রশাসনের অজ্ঞাতসারে। যা নিয়ে ইতিপূর্বে উপজেলা প্রশাসনের মাসিক সমন্বয় সভায় অসন্তোষ প্রকাশ করে উপজেলা প্রশাসন। এছাড়া সমবায়ীদের মাঝে আবর্তক ও কৃষি ঋন বিতরনেও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। ইউসিসি’র গঠিত নীরিক্ষা কমিটির সদস্য মো: মনিবর রহমান, মো: হাবিবুর রহমান ও জীবন কৃষ্ণ মন্ডল স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে জানা যায়, ইউসিসি’র ব্যাংক জমার স্থায়ী আমানত থেকে ১১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫৬৮ টাকা সহ বিভিন্ন খাত থেকে বিপুল পরিমান অর্থ লোপাট, অনিয়ম ও দূর্নীতির সাথে জড়িত পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা ও ইউসিসি’র সভাপতি । এবং তাদের সহযোগী জুনিয়র অফিসার (হিসাব) ও হিসাব সহকারী গন। ২০১৬-২০২০ সাল পর্যন্ত আবর্তক ও ব্যাংক ঋন বিতরন ও আদায়ে অনিয়ম হেতু আজ ইউসিসি ধ্বংসের পথে বলে মতামত নীরিক্ষা কমিটির । বিআরডিবি’র সাবেক ইউসিসি সভাপতি মোসলেম আলী খলিফা বলেন,’আমি দায়িত্বপালন করার সময় সমবায়ীদের স্বার্থে সরকারী অনুদানের ৬০ লক্ষ টাকা এফডিআর করি। এছাড়া ১৯ লক্ষ টাকার সরকারী অনুদানের চেক অফিসে জমা রেখে আসি। আমার পর দায়িত্বে আসেন খালেক সিকদার। তিনি বিআরডিবি কর্মকর্তার সাথে গোপন সখ্যতা এফডিআর ভেঙ্গে কিছু টাকা ঋন ফান্ডে এনে বিতরন করেন বাকী টাকার হদিস নাই।’ এদিকে ইউসিসি গঠিত নীরিক্ষা কমিটিকে তথ্য সরবরাহে গড়িমসির অভিযোগের পর কলাপাড়া বিআরডিবি’র এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত কত টাকা আবর্তক ঋন বিতরন হয়েছে, সোনালী ব্যাংক কৃষি ঋন কত টাকা, পল্লী প্রগতি, পদাবিক, সদাবিক কর্মসূচীতে বিতরনকৃত ঋনের পরিমান, আদর্শগ্রাম, গুচ্ছগ্রাম এর কার্যক্রম, অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে বিতরনকৃত ঋনের পরিমান সহ বকেয়া ঋনের তথ্য ও তা আদায়ে গৃহীত পদক্ষেপ জানতে বিআরডিবি কার্যালয়ে গিয়েও জানা যায়নি কিছুই। অত:পর বিআরডিবি জেলা ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মুহাম্মদ হাসানুল হকের কাছে তথ্য সহায়তা চাওয়ার পর তিনি উপজেলা কর্মকর্তা মাহবুব হাসান শিবলি কে তথ্য দিতে বলেন এবং উপজেলা কর্মকর্তা বলেন হিসাব রক্ষককে। এভাবে গত দু’মাসে একাধিকবার অফিসে গিয়ে জুনিয়র অফিসার (হিসাব) মেহেদী হাসানকে পাওয়া গেলেও তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে বিআরডিবি’র পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্পে ৫৮টি সমিতির ৩৫০ সদস্যের মাঝে মৎস্য, পশু পালন ও কৃষিতে ঋন বিতরন করা হয়েছে ৯ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা। উদ্দোক্তা ঋন বিতরন হয়েছে ৭০ লক্ষ টাকা। এরমধ্যে চলতি খেলাপী ৭৫ লক্ষ টাকা এবং ২২০ জনের কাছে মেয়াদ উত্তীর্ন খেলাপী ঋন রয়েছে ৫৬ লক্ষ টাকা বলে জানিয়েছেন পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্প কর্মকর্তা মো: নুরুল ইসলাম। এছাড়া ইরেসপো প্রকল্পে ৬০টি মহিলা সমিতির ১৭৫২ সদস্যের মাঝে ঋন বিতরন করা হয়েছে ১ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে চলতি খেলাপী ঋন রয়েছে ১ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা এবং মেয়াদ উত্তীর্ন ঋন রয়েছে ১৬ লক্ষ ৮৯ হাজার টাকা। ঋন আদায়ে ১২টি সার্টিফিকেট মামলা নিস্পত্তির অপেক্ষায় আছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প কর্মকর্তা নেছার উদ্দিন। ইউসিসি’র অভিযুক্ত সাবেক চেয়ারম্যান খালেক সিকদার বলেন, ’আমার দায়িত্বপালন কালীন সময়ে কোন ধরনের অনিয়ম, দূর্নীতি হয়নি।’ কলাপাড়া বিআরডিবি কর্মকর্তা মাহবুব হাসান শিবলি বলেন, ’আমি গলাচিপা উপজেলায় কর্মরত। কলাপাড়ায় অতিরিক্ত দায়িত্বপালন করছি। কলাপাড়া অফিসের অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে অবগত নই।’ বিআরডিবি’র উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ হাসানুল হক মোল্লা বলেন, ’আমরা তথ্য দিতে বাধ্য। আমি সংশ্লিষ্ট অফিসে খোঁজ নিয়ে দেখছি।’ কলাপাড়া ইউএনও মো: জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ’আমি এ বিষয়টি জানি না। খবর নিয়ে দেখছি। যদি কোন অনিয়ম থাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’