সাংবাদিকদের সুখে-দুঃখে সরকার সঙ্গে আছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় আমরাও বিশ্বাসী, এ স্বাধীনতা আমরা ক্ষুণ্ন করতে চাই না। কিন্তু সাংবাদিকদেরও দায়িত্বশীল হতে হবে। স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করে কারও উদ্ধৃতি স্বাধীনতা দিবসে প্রকাশ করা, এটা কী দেশের প্রতি ভালোবাসার সামান্যতম নিদর্শন? এটা দেশকে কটাক্ষ করার শামিল। স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করা আর আমার এই মাতৃভূমি বাংলাদেশকে কটাক্ষ করা দুটোই এক এবং সেটাই তারা (প্রথম আলো) করেছে।’ গতকাল রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) অডিটোরিয়ামে এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। গত ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উদ্যোগে আলোচনা সভা, চিত্রাঙ্কন ও প্রবন্ধ রচনা প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। সেই প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে আজ পুরস্কার তুলে দেন ওবায়দুল কাদের। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য আমরাই লড়াই করেছি। শামসুর রহমান, মানিক শাহ, হুমায়ুন কবির বালুসহ অসংখ্য সাংবাদিককে যারা হত্যা করেছে, তারাই (বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে) আজ সাংবাদিকের স্বাধীনতার জন্য মায়াকান্না করে। এই দেশে অসংখ্য সাংবাদিককে হত্যার হোতা হচ্ছে তারা। সংবাদপত্রের অষ্টম ওয়েজ বোর্ডসহ সাংবাদিকদের কল্যাণের জন্য যতটুকুই করেছেন সবকিছু আমি বলবো, নির্দ্বিধায় বলবো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করেছেন।’ প্রথম আলোর আলোচিত এই প্রতিবেদনের ইস্যুতে সম্প্রতি একটি বিবৃতি দিয়েছে বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস’। এ প্রসঙ্গ টেনে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শিশুর হাতে আপনি ১০ টাকা ঘুষ দিয়ে এ ধরনের কথা, পরে বললেন ভুল। ভুল হলে ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ কি কেউ করেছে? এই ভুলের জন্য কেউ কি ক্ষমা চেয়েছে? তারা তাদের ঔদ্ধত্য, তারাই ঠিক সে অহংকারে বুঁদ হয়ে, তারা তাদের নিজেদের মধ্যে মধ্যে সমর্থন করে নিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস তাদের বিবৃতিতে বলেছে—সরকার সাংবাদিকদের ভয় দেখাতে একটি পত্রিকার রিপোর্টারকে গ্রেফতার করেছে, সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। মামলা সরকার করেনি। মামলা বেসরকারিভাবে হয়েছে। কিন্তু এ অপরাধের কি কোনও শাস্তি হবে না? রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস সংশ্লিষ্টদের দেশে যদি এমন ঘটনা ঘটতো, তারা কি করতো? তার কি বিচার হতো না? এটার কি শাস্তি হতো না? একটি বাচ্চাকে কীভাবে ব্ল্যাকমেইলিং করা হলো? বলা হলো, স্বাধীনতা দিয়ে কী করবো? স্বাধীনতা দিবসে স্মৃতিসৌধের পাশে যারা একটা বাচ্চাকে ব্যবহার করে দিনমজুরের নামে একটা উদ্ধৃতি দিয়ে যে জঘন্য অপরাধ করেছে, এ জঘন্য অপরাধের শাস্তি তাদের পাওয়া উচিত।’ এসময় বিএনপির কর্মসূচি নিয়েও সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুল সাহেব আবার গণ-অভ্যুত্থানের হুমকি দিলেন। গতকালের তাদের অবস্থান কর্মসূচি দেখলাম। অবস্থান কর্মসূচিতে পাঁচ থেকে সাতশ’ লোকের উপস্থিতি। আমাদের জেলা পর্যায়েও ১ হাজারের কম হয় না। রোজার দিনে রাস্তা বন্ধ করে মানুষকে কষ্ট দেওয়া হচ্ছে শুধু। এ দিয়ে অভ্যুত্থান হয় না। দেখতে দেখতে ১৪ বছর চলে গেলো, মানুষ বাঁচে কয় বছর। আরও অপেক্ষা, সেসব ভুলে যান। জনগণ ছাড়া গণ-অভ্যুত্থান হবে না। এখন বিএনপির কর্মীরাই হতাশ। গণ-অভ্যুত্থান চলে গেলো গাবতলী, গোলাপবাগের গরুর হাটে। সেখান থেকে গণ-অভ্যুত্থান চলে গেলো নীরব পদযাত্রায়, পথ হারিয়ে পদযাত্রা দাঁড়িয়ে গেলো মানববন্ধনে, মানববন্ধন থেকে এখন বসে পড়ছে। তাদের আন্দোলনও বসে পড়েছে। গণ-অভ্যুত্থান আর দাঁড়াতে পারবে না। আমরা আমাদের শক্তি সামর্থ্য নিয়ে এগিয়ে যাবো। নির্বাচন নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন আমাদের বিষয় নয়। নির্বাচন কমিশন শিডিউল ঘোষণা করবে, শিডিউল ঘোষণা করা আমাদের অধিকার নয়। এটা কমিশনের কাজ। কাজে ফখরুল বলেছেন সরকার কৌশল করে আগাম নির্বাচন দেবে। নির্বাচন দেবে নির্বাচন কমিশন। এখন দেশের যে অবস্থা, নির্বাচন আগে হোক বা পরে হোক, আপনাদের ভরাডুবি হবে। কর্মীরাও বুঝে গেছে এই নেতা দিয়ে আর চলবে না। সাক্ষীগোপাল, লন্ডনের ফরমায়েশি আন্দোলন আর চলবে না। এসময় ঢাবি শাখার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানবীর হাসান সৈকতের সঞ্চালনায় ও সভাপতি মাজহারুল কবির শয়নের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান।